shono
Advertisement

‘শুদ্ধি’র সুফল, নেশা কাটিয়ে ৫ মাদকাসক্ত এখন কলকাতা পুলিশেরই কর্মী

‘শুদ্ধি’-র দৌলতে ২১ জন এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। The post ‘শুদ্ধি’র সুফল, নেশা কাটিয়ে ৫ মাদকাসক্ত এখন কলকাতা পুলিশেরই কর্মী appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:44 AM Jun 25, 2019Updated: 09:44 AM Jun 25, 2019

অর্ণব আইচ: রাংতার তলায় দেশলাইয়ের তাপ। সেই তাপে রাংতার উপরে রাখা পাউডার থেকে বের হত ধোঁয়া। ওই ধোঁয়া নাকে মুখে যেতেই স্বপ্নে ভেসে যাওয়া। জোগাড় করতেই হবে সেই মাদক-পাউডার। আর তার জন্য দরকার হলে তলিয়ে যেতে হবে অপরাধের অন্ধকার জগতে।

Advertisement

এভাবেই মাদকের অন্ধকার জগতেই তলিয়ে গিয়েছিলেন ওঁরা চারজন। শেষ করে দিতে চলেছিলেন নিজেদের। তাঁদের টেনে তুলেছিল কলকাতা পুলিশের ‘শুদ্ধি’। ফের অন্ধকার থেকে উঠে দাঁড়ালেন তাঁরা। যে কলকাতা পুলিশের হাতে একসময় ধরা পড়তে হয়েছিল তাঁদের, সেই কলকাতা পুলিশেই যোগ দিলেন চারজন। এক বছর আগের সেই চার মাদকাসক্ত এখন কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার বা গ্রিন পুলিশ। লালবাজারের এক কর্তা জানান, সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর ওই চারজন রীতিমতো আবেদন করে ও প্রাথমিক পরীক্ষা দিয়েই অন্যান্য গ্রিন পুলিশের মতো এই চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।

তাঁদের মধ্যে একজন রয়েছেন ট্রাফিকে। রীতিমতো ট্রাফিক পুলিশকর্মীদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে শহরের যান নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। অন্য একজন যোগ দিয়েছেন লালবাজারেরই গোয়েন্দা বিভাগে। গোয়েন্দা আধিকারিকদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেন তিনি। বাকি দু’জন কাজ করেন দু’টি ডিভিশনে। এই চারজন গ্রিন পুলিশ ছাড়াও একসময়ের মাদকাসক্ত এক যুবক সুস্থ হয়ে যোগ দিয়েছেন নিউ মার্কেট এলাকায় কলকাতার মাউন্টেড পুলিশে। মূলত ঘোড়াদের দেখাশোনা করেন তিনি। মাদক বিরোধী দিবসে তাঁদের উদাহরণ দিচ্ছে লালবাজারও।

[ আরও পড়ুন: কলকাতায় পুলিশের নাকা তল্লাশি, এক রাতেই আইন ভেঙে ধরা পড়ল ১২০০ বাইক চালক ]

পুলিশ জানিয়েছে, চুরি, ছিনতাইয়ের মতো কিছু অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য মাদকাসক্তদের ধরা হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছিল, গ্রেপ্তার হওয়ার পর মাদকাসক্তরা জামিনে মুক্ত হওয়ার পর ফের মাদক নিতে শুরু করেছে। ফলে কমছে না অপরাধ। তাই কলকাতা পুলিশ ‘শুদ্ধি’ নামের প্রকল্পটি শুরু করে। এই প্রকল্পে মাদকাসক্তদের ‘শুদ্ধি’ প্রকল্পের আওতায় থাকা নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভরতি করিয়ে চিকিৎসা করাতে শুরু করে পুলিশ। এক পুলিশকর্তা জানান, এই প্রকল্প শুরুর আগে হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ চারটি জায়গার নেশামুক্তি কেন্দ্র বাছাই করে হয়। সেখানে আবাসিকদের থাকার ব্যবস্থা কেমন, কী ধরনের খাওয়াদাওয়া ও ওষুধ দেওয়া হয়, কেন্দ্রে প্রতিনিয়ত চিকিৎসকের ব্যবস্থা আছে কি না, লালবাজারের কর্তারা কেন্দ্রগুলিতে পরিদর্শন করে সেই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখেন। আবাসিকরা নেশামুক্ত হয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর যাতে তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়, সেই বিষয়েও নজর দেয় পুলিশ। সেইমতো ১৩৩ জনের চিকিৎসা শুরু হয়। তাঁদের মধ্যে ২১ জন এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন।

লালবাজার জানিয়েছে, সুস্থ হওয়ার সময়ই কে কী ধরনের কাজ করতে পারেন, তা খতিয়ে দেখা হয়। সেইমতো চারজন জানান, তাঁরা পুলিশে কাজ করতে চান। তাই সুস্থ হওয়ার পর তাঁরা আবেদন করেই গ্রিন পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। বাকিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিভিন্ন বাগানে মালির কাজ করেন। আবার একজনের ন্যাক ছিল দর্জির কাজে। তাঁকে দর্জির দোকানে চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। চার যুবককে শহরের একটি ক্যান্টিনে কাজ দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছে গাড়ি চালকের কাজ। একজন ঘোড়া ভালবাসেন বলে তাঁকে মাউন্টেড পুলিশে কাজের ব্যবস্থা করা হয়।

পুলিশের এক কর্তার দাবি, এভাবে মাদকাসক্তরা সুস্থ জীবনে ফিরে আসলে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো বেশ কিছু অপরাধ কমবে। এখন বহু ছাত্রও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদেরও ‘শুদ্ধি’তে পাঠানো শুরু হচ্ছে। এখন যাঁদের চিকিৎসা চলছে, তাঁরা সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তাঁদেরও বিভিন্ন জায়গায় কাজের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

[ আরও পড়ুন: শিক্ষকদের বিধানসভা ঘেরাওয়ে ধুন্ধুমার, দ্রুত স্থায়ীপদে নিয়োগের আশ্বাস পার্থর ]

The post ‘শুদ্ধি’র সুফল, নেশা কাটিয়ে ৫ মাদকাসক্ত এখন কলকাতা পুলিশেরই কর্মী appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement