রিংকি দাস ভট্টাচার্য: নেশাটা ধরিয়েছিল ক্লাসের প্রিয় বান্ধবী অস্মিতা। সেই শুরু! প্রতি রাতে শোয়ার আগে ‘টিকটক’ করাটা রুটিনে পরিণত হয়েছিল নন্দিনীর (পরিবর্তিত নাম)। গোল বাধল সপ্তাহ খানেকের মাথায়। রাতে বিছানায় শুয়ে যথারীতি টিকটকে মগ্ন নন্দিনী। হঠাৎ মোবাইল স্ক্রিনে নিজের পছন্দের নায়ককে দেখে চক্ষু চড়কগাছ। তার উপর নায়ক আবার প্রশংসা করছে যে তার! পছন্দের নায়কের প্রশংসা কুড়োতে এরপর নন্দিনীর দিনরাত শুধু টিকটক আর টিকটক! বাংলা মাধ্যম স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তখনও বুঝতে পারেনি, প্রশংসার ফাঁদে আসলে মাদকচক্রের পাতা জালে পা দিচ্ছে সে। ক্রমশ ঢুকে পড়ছে অন্ধকারের জগতে।
[ আরও পড়ুন: ‘বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ছুতমার্গ নেই’, এবার তৃণমূলকে জোট বার্তা সোমেন মিত্র’র]
গল্প নয়! এটা একটা সত্য ঘটনা। যা শুনিয়েছেন কেন্দ্রীয় নারকোটিক সেলের এক পদস্থ কর্তা। তাঁর কথা অনুযায়ী, সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন বাংলা স্কুলে ছাত্রীদের মাদকাসক্তির শিকড় খুঁজতে গিয়ে ভিলেন হিসাবে উঠে এসেছে টিকটক নামক জনপ্রিয় অ্যাপটির নাম। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, মজার ছলে টিকটকের হাত ধরেই নেশার জগতের ভুলভুলাইয়ায় পথ হারাচ্ছে স্কুল পড়ুয়ারা। সোশ্যাল মিডিয়ার অন্দরে ঘাপটি মেরে থাকা অপরাধ চক্র তাঁদের টেনে নিয়ে যাচ্ছে কখনও ভিন রাজ্যে। কখনও আবার মাদকচক্রে জড়িয়ে দিচ্ছে অজান্তেই। কিন্তু কী এই টিকটক? এ মুহূর্তে অনলাইন দুনিয়ায় অতি পরিচিত একটি অ্যাপ। বিভিন্ন গান, বিখ্যাত সিনেমার সংলাপ-সহ নানা রকম অডিও’র সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে ছোট ভিডিও তৈরি করে আপলোড করা যায় এই টিকটক অ্যাপে। অশ্লীলতা ও বিকৃতির অভিযোগে ভারতে কিছুদিনের জন্য অ্যাপটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। যদিও সম্প্রতি তা ফের চালু হয়েছে।
টিকটকে আসক্ত হওয়া অষ্টম শ্রেণির এক পড়ুয়াকে সম্প্রতি দশদিনের জন্য বহিষ্কার করেছে ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপান্বিতা রায়চৌধুরি জানিয়েছেন, “টিকটক অ্যাপ যে কী ভয়ংকর হতে পারে, সম্প্রতি বিপথগামী কয়েকজন ছাত্রীর কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে উঠে এসেছে সেই তথ্য।” কাউন্সেলিংয়ের সেই অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে খানিকটা উদ্বিগ্ন প্রধান শিক্ষিকাও। তিনি জানান, “সম্প্রতি অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রী ভয়ে ভয়ে এসে দিদিমণিদের জানায়, এক সহপাঠী তাকে মুম্বইয়ে অনেক টাকা চাকরির অফার দিয়েছে।” শুনেই কেমন যেন সন্দেহ হয় দীপান্বিতাদেবীর। শুরু করেন খোঁজ নেওয়া। ছাত্রীদের থেকে প্রথম দিকে সেরকম কোনও তথ্য না মেলায় ডেকে পাঠানো হয় অভিভাবকদের। শুনে তো আকাশ থেকে পড়েন ছাত্রীদের বাবা-মা। তখন খোঁজ পড়ে তাদের মোবাইলের। তাতেই কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে পড়ে কেউটে। দেখা যায়, নিম্নবিত্ত ঘরের মেয়েরা বাবার কাজের মোবাইলে টিকটক অ্যাকাউন্ট খুলে জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অনৈতিক কাজকর্মে।
[ আরও পড়ুন: রোজভ্যালিকাণ্ডে ৬ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ, ইডিকে তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস প্রসেনজিতের ]
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দক্ষিণ কলকাতার আরেক বাংলা মাধ্যম স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার অভিজ্ঞতা আরও ভয়ংকর। তিনি জানাচ্ছেন, “সম্প্রতি তাঁদের স্কুলের কয়েকজন মেয়েকে স্কুলের সময়ে স্বল্পবাসে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন হুক্কাবারের বাইরে। বিষয়টি জানাজানি হতেই ডেকে পাঠানো হয় ওই ছাত্রীর অভিভাবকদের। দেখা যায়, সেখানেও মাদকচক্রে ঢুকে পড়ার মূলে রয়েছে সে-ই টিকটক অ্যাপ। বয়ঃসন্ধির মেয়েদের অঙ্গিভঙ্গিকে মৌখিক প্রশংসা করে প্রথমে ফাঁদে ফেলছে একটি চক্র। সংশ্লিষ্ট মেয়েটি ফঁাদে পা দিলেই তাঁকে মাদকচক্রে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। বিপদ বুঝে কেউ কেউ বেরিয়ে এলেও, বেশিরভাগ ছাত্রীদের তলিয়ে যাচ্ছে নেশার নিঃসীম অন্ধকারে। যে কৃষ্ণগহ্বরে পা রাখলে তলিয়ে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা!
The post ‘টিকটক’ অ্যাপে ছড়াচ্ছে মাদকচক্রের জাল, বিপথে স্কুল পড়ুয়ারা appeared first on Sangbad Pratidin.