সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রস্তুত ছিল যুবভারতী। তৈরি ছিলেন হাজার হাজার সবুজ-মেরুন সমর্থক। ঠিক এক বছর আগে যেভাবে জুয়ান ফেরান্দোর অধীনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহনবাগান। এ বারও সেই একই সাফল্যের স্বাদ পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছিলেন সবুজ-মেরুনের নতুন হেডস্যর জোসে মোলিনা। কিন্তু দিনের শেষে মলিন মুখেই যুবভারতী ছাড়তে হল মোলিনাকে। টাইব্রেকারে হারল মোহনবাগান। প্রথমবার ডুরান্ড জয়ের স্বাদ পেল নর্থইস্ট। এটাই সর্বভারতীয় স্তরে প্রথম বড় সাফল্য উত্তরপূর্বের ক্লাবটির। কিন্তু ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও কীভাবে হারল মোহনবাগান? রইল পাঁচ কারণ।
১। কোচের ভুল পরিবর্তন: হোসে মোলিনা ভারতীয় ফুটবলে ফিরেছেন দীর্ঘদিন বাদে। তাই সম্ভবত কিছু ভুলভ্রান্তি করছেন তিনি। এদিন প্রথমার্ধের খেলা দেখে মনে হয়েছিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড সম্ভবত অনায়াসে জয় পেতে চলেছে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে খেলা পুরো ঘুরে গেল। একপেশেভাবে দাপট দেখাল নর্থইস্ট। নেপথ্যে কোচের দুটো বড় ভুল। চোটের জন্য আলবার্তো রদ্রিগেজ যখন মাঠ ছাড়লেন, তখন সেন্টার ব্যাক দিপেন্দুকে না নামিয়ে তিনি নামালেন উইং ব্যাক আশিস রাইকে। এমনিতেই তিনজনের রক্ষণে খেলছিল মোহনবাগান। আলবার্তোর বদলে আশিস আসায় রক্ষণ আরও দুর্বল হল। আবার কেন প্রথমার্ধের অন্যতম সেরা ফুটবলার সাহালকে দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর আগেই তুলে নেওয়া হল সেটাও বোধগম্য হল না। স্টুয়ার্টকে তুলে কেন অভিষেককে নামালেন মোলিনা? সে উত্তরও তিনিই দিতে পারবেন।
[আরও পড়ুন: প্যারালিম্পিক শুটিংয়ে ফের পদক ভারতের, এবার ব্রোঞ্জ পেলেন রুবিনা ফ্রান্সিস]
২। ফিটনেসের অভাব: ডুরান্ডের শুরু থেকেই যে সমস্যাটা দেখা যাচ্ছিল, সেটা ফাইনালে আরও প্রকট হল। মোহনবাগানের অধিকাংশ ফুটবলারই ৯০ মিনিট একই ক্ষিপ্রতার সঙ্গে খেলার মতো ফিটনেসে পৌঁছতে পারেননি। এতদিন কারও কারও ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় বা কোথাও ভাগ্যের জোরে ম্যাচ জিতলেও দলে ফিটনেসের সমস্যা আর রসায়নের অভাব চোখে পড়েছে। ফাইনালে নর্থইস্টের গতির সামনে সেটা আরও প্রকট হল।
৩। রক্ষণের ফাঁকফোঁকর: আনোয়ার আলির অনুপস্থিতিতে মোহনবাগান রক্ষণ যে একধাক্কায় অনেকটা দুর্বল হয়েছে সেটা ডুরান্ডের শুরু থেকেই বোঝা গিয়েছে। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই গোল হজম করতে হচ্ছে সবুজ-মেরুনকে। নক-আউট পর্বের সবকটি ম্যাচেই একের বেশি গোল হজম করতে হয়েছে সবুজ-মেরুনকে। রক্ষণের দুই বিদেশির মধ্যে এখনও সমন্বয় তৈরি হয়নি। শুভাশিস বসুকেও ভাবতে হবে শুধু আবেগ দিয়ে ম্যাচ জেতানো যাবে না। পজিশনিং এবং বলের নিয়ন্ত্রণে আরও উন্নতি করতে হবে তাঁকে।
[আরও পড়ুন: টাইব্রেকারে স্বপ্নভঙ্গ মোহনবাগানের, প্রথমবার ডুরান্ড জিতল নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড]
৪। নর্থইস্টের অদম্য মানসিকতা: মোহনবাগানের ভুলভ্রান্তি তুলে ধরার পাশাপাশি নর্থইস্ট ইউনাইটেডের প্রশংসাও করতে হয়। যুবভারতীর হাজার হাজার দর্শক। সামনে মোহনবাগানের মতো কঠিন প্রতিপক্ষ। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে পিছিয়ে যাওয়া। তার পরও যেভাবে কামব্যাক করলেন বেনালির ছেলেরা, সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
৫। গুরমিত হলেন বিশাল: মোহনবাগানকে ফাইনালে তোলার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান বিশাল কাইথের। ফাইনাল যখন পেনাল্টিতে গড়াল তখন সম্ভবত সবুজ-মেরুন সমর্থকরা এটা ভেবে ভরসা খুঁজছিলেন যে তেকাঠির নিচে অন্তত বিশাল আছেন। কিন্তু ফাইনালে নায়ক হওয়া হল না বিশালের। নির্ধারিত সময়ে তিনি যে গোলগুলি হজম করলেন তাতে বিশেষ কিছু করার ছিল না। আবার পেনাল্টিতেও কোনও 'দুর্বল' শট পেলেন না। অন্যদিক নর্থইস্ট ইউনাইটেডের গোলরক্ষক গুরমিত সিং সেই কাজটি করলেন, সেটা বিশাল এতদিন করেছেন মোহনবাগানের হয়ে। দুটো পেনাল্টি বাঁচালেন তিনি। নির্ধারিত সময়েও দুর্দান্ত গোলকিপিং করেছেন গুরমিত।