সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিসর্জন মামলায় ধাক্কা খেল রাজ্য। সব দিনই দেওয়া যাবে বিসর্জন, বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিল আদালত। রাত ১২টার মধ্যে ঘাটে পৌঁছতে হবে। রাজ্যের বিজ্ঞপ্তি খারিজ না করে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিল আদালত। রাজ্য বলেছিল, দশমীর দিন রাত ১০টা পর্যন্ত বিসর্জন দেওয়া যাবে। কিন্তু আদালত এদিন জানিয়ে দিল, দশমী থেকে রোজ রাত ১২টা পর্যন্ত দেওয়া যাবে বিসর্জন। মহরমের দিনও বিসর্জন দেওয়া যাবে। রাত ১২টার মধ্যে ঘাটে পৌঁছতে হবে। আদালতের নির্দেশ, ডিজি, এসপিদের নির্দেশ, রুট চিহ্নিত করতে হবে। আলাদা আলাদা পথে বেরোবে তাজিয়া ও বিসর্জনের শোভাযাত্রা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলানোর জন্য যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন, ডিজি, সিপি ও পুলিশ কর্তারা সেই সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।
এদিন বিসর্জন মামলার শুনানিতে রাজ্যের চূড়ান্ত সমালোচনা করে হাই কোর্ট৷ রাজ্য সরকারের জারি করা নির্দেশিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত৷ কার্যত তুলোধোনা করে এদিন শুনানিতে জানানো হয়, রাজ্যের ক্ষমতা আছে বলেই যে কোনও নিয়ম চাপিয়ে দিতে পারে না৷ হাইকোর্টের রায়, মহরমের দিনও বিসর্জন দেওয়া যাবে৷ সেদিন পুলিশকে আলাদা রুট তৈরি করার নির্দেশ৷ রাত ১২টার মধ্যে ঘাটে পৌঁছতে হবে, অন্তর্বর্তী নির্দেশ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের৷ গন্ডগোলের আশঙ্কা থাকলে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে৷ অন্তর্বর্তী নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশের দাবি জানিয়ে রাজ্যের আরজি খারিজ কলকাতা হাই কোর্টে৷ হাই কোর্টের রায় ঘোষণার পর নবান্নে যান রাজ্য পুলিশের ডিজি৷ নবান্নে পৌঁছেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনারও৷ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে করেন পুলিশের দুই শীর্ষ কর্তা৷ ৫ সপ্তাহ পর ফের এই মামলার শুনানি হবে৷
[ বিসর্জন নির্দেশিকা নিয়ে রাজ্যের সমালোচনায় আদালত ]
এদিন রাজ্যের পক্ষে জারি হওয়া বিজ্ঞপ্তির যুক্তি তুলে ধরেন অ্যাডভোকেট জেনারেল৷ কেন মহরমের দিন বিসর্জন হতে পারে না, তা বিশদে ব্যাখ্যা করেন৷ কিন্তু রাজ্যের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নয় হাই কোর্ট৷ রাজ্যের তরফে বলা হয়, বিসর্জনের জন্য আরও দিন আছে৷ শুধু মহরমের দিনটিতে বিসর্জন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু হাই কোর্টের প্রশ্ন, রাজ্যের হাতে যত ক্ষমতাই থাকুক না কেন সূর্য বা চাঁদের উদয়-অস্ত তো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না৷ সুতরাং যে দিন স্থির হয়ে আছে, তা বদলে দেওয়া যেতে পারে না৷ শুধুমাত্র ঝামেলা বাধতে পারে, এই যুক্তি দেখিয়ে কোনও নিয়ম জারি করাও যেতে পারে না৷
আদালতের যুক্তি, কোথাও গণ্ডগোল বাধলে আগে জলকামানের ব্যবহার হয়, পরে প্রয়োজন হলে মৃদু লাঠিচার্জ৷ কিন্তু আগেই তো গুলি চালানো হয় না৷ তাহলে এক্ষেত্রে শুরুতেই শেষ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কেন? নিয়ন্ত্রণ ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে যে ফারাক আছে তা এদিন স্পষ্ট করে দেয় আদালত৷ রাজ্য কোনও ভিত্তি ছাড়াই ক্ষমতার প্রয়োগ করছে বলে তোপ দাগে আদালত৷ এনিয়ে এজি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির তীব্র বাদানুবাদ হয়৷ বস্তুত বুধবারই বিসর্জন মামলায় রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল হাই কোর্ট৷ এদিনও তার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল৷ সাফ জানানো হল, রাজ্য যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তার কোনও যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ আপাতত তাই মুলতুবি রাখা হয়েছে রায়দান৷ শেষপর্যন্ত বেলা আড়াইটে নাগাদ এই মামলার রায়দান হল৷ আদালতের নির্দেশ, যে কোনও দিন বিসর্জন দেওয়া যাবে৷
[বিসর্জন মামলার শুনানিতে রাজ্যকে ফের তোপ হাই কোর্টের]
The post মহরমেও হবে বিসর্জন, রায় হাই কোর্টের appeared first on Sangbad Pratidin.