shono
Advertisement

মহামারীর ইতিহাস ফিরিয়ে আনছে বরানগরের পুজো, থাকছে লিঙ্গবৈষম্য বিরোধী বার্তাও

শারদ আবহে এই ভাবনা কোন ক্লাবের, জানুন।
Posted: 10:14 PM Oct 18, 2020Updated: 10:14 PM Oct 18, 2020

বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: গ্রাম তালডহড়া। সময় ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধ্ব। তখন মহামারীর আকার ধারণ করেছে কলেরা। মহারাজা রাজচন্দ্র প্রজাসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন। মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন মহারাজ। এর মধ্যেই তিনি স্বপ্নদৃষ্ট হন, তাঁর প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে দেবী যেন আরাধ্যা হন। শুরু হল উৎসব। রাজার সংকল্প ছিল, উৎসবের তিনদিন কোনও প্রজা যেন অভুক্ত না থাকে। স্বয়ং রানিমা নিজে হাতে ভোগ রান্না করে প্রজাদের বিতরণ করতেন। সে বছর দেখা যায়, পুজো শেষ হতেই বিদায় নেয় মহামারী।

Advertisement

বর্তমানের রাজবাড়ি এখন অতীত গৌরবের স্মৃতিটুকুই বহন করছে। আজ প্রায় স্বংসপ্রাপ্ত হলেও বাড়ীর আনাচাকানাচে ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলী অনুকরণে নির্মিত মূর্তিগুলি অতীত গৌরবের সাক্ষীমাত্র। এই রাজবাড়ির পুজোয় আজ আর রাজপরিবারের কোনও ভূমিকা নেই। তবে গ্রামের মানুষের প্রচেষ্টায় আজও মন্দিরে পূজিত হন দেবী, বসে মেলা। সেই ঐতিহ্যকে শহরবাসীর সামনে আনার প্রয়াস বরানগর নেতাজি কলোনি লোল্যান্ডের। আজও অতিমারী কোভিডের মুখোমুখি বিশ্ব। কীভাবে ২০০ বছর আগে তালডহড়া মহামারী থেকে মুক্তি পেয়ে উৎসবে মেতেছিল, তারই খণ্ডচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুজো (Durga Puja) কমিটির মূল উদ্যোক্তা দিলীপনারায়ণ বসু। রাজবাড়ি ও তার স্থাপত্যশৈলী তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি। থাকছে তালডহড়ায় গড়ে ওঠা স্কুল ও লাইব্রেরি।

[আরও পড়ুন: পুজোয় কলকাতা মেট্রোর নতুন সময়সূচি, দেখে নিন কবে কখন মিলবে পরিষেবা]

বর্তমান সময়ে করোনা ছাড়াও দেশজুড়ে আলোচনার আরেক কেন্দ্রে রয়েছে নারী নির্যাতন। একের পর নারী নির্যাতনের ঘটনায় উত্তাল দেশ। যে নারী মৃন্ময়ী রূপে পূজিত হন, তিনিই আবার সমাজের একটা অংশ দ্বারা অত্যাচারিত। কখনও কন্যাভ্রূণ হত্যা, তো কখনও বাল্যবিবাহের মতো অভিশপ্ত ঘটনার মুখে পড়তে বাধ্য করা হয় তাদের। কৈশোরে গৃহহিংসার পাশাপাশি বহির্সমাজের বিকৃত লালসার শিকার হতে হয় চিন্ময়ী নারীকে। আর যখন সে যৌবনে পা রাখে, তখন ঘরে-বাইরে লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হতে হয়। কর্মক্ষেত্র থেকে সংসার জীবন, সব জায়গাতেই তার যোগ্যতাকে খাটো করে দেখানো হয়।

[আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত ‘কুমারী’, মালদহ রামকৃষ্ণ মিশনের ঐতিহ্যবাহী পুজো নিয়ে অনিশ্চয়তা]

কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সব বাধা অতিক্রম করে সেই নারী আজ মহাকাশে পা রেখেছে। বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে যুদ্ধবিমান। না, নারী আজ কোনও ভোগ্যপণ্য নয়। পুরুষ ও নারীর এই বৈষম্য দূর করতে পারে ‘সাম্যদর্শন’। ন-পাড়া দাদাভাই সংঘের পুজোর ভাবনা এবার ‘সাম্যদর্শন’। যেখানে তুলে ধরা হচ্ছে কীভাবে প্রতিটি নারী এই সমাজে আজ সুরক্ষিত থাকবে। কীভাবে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তার রূপ বদল করে হবে মানবতান্ত্রিক। পুজোর উদ্যোক্তা অঞ্জন পাল জানান, উৎসবের জন্য নির্ধারিত পনেরো দিন নয়, পিতৃপক্ষের প্রতিটা দিনের একটা অংশ হবে দেবীপক্ষ। আক্ষরিক অর্থেই নারী দেবীরূপে পূজিত হবে। তাই পুজোর সবকটা দিনই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের হাতে সাহায্য তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement