গোবিন্দ রায়, বসিরহাট: আগেই হারিয়ে ছিল জৌলুস। করোনা (Coronavirus) পরিস্থিতির জেরে এবছর ঐতিহ্য ভেঙে একেবারেই বন্ধ উত্তর ২৪ পরগনার ধান্যকুরিয়ার তিন জমিদার বাড়ির পুজো। বাজবে না নহবতের সুর। আসবেন না দর্শনার্থীরা। করোনার কাঁটায় বিদ্ধ হয়ে এবার সানাইয়ের সুর যেন বিষন্নতায় পরিণত হয়েছে।
গায়েন, বল্লভ ও সাউ, মূলত এই তিন বাড়ির জমিদারি ঐতিহ্যের জন্য সারা দেশে পরিচিত ধান্যকুরিয়া। ওই গ্রামকে হেরিটেজ তকমা দেওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি পরিদর্শনের যান হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারপার্সন শুভপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের কমিটির ফুলবেঞ্চও। যাতে কমিটির নজর কাড়ে জমিদারদের গায়েন বাড়ি, বল্লভ বাড়ি, সাউ বাড়ি, মন্দির, জমিদারি আমলে তৈরি স্কুলও। ইতিমধ্যেই ধান্যকুড়িয়ার জমিদারদের ‘গায়েন উদ্যান’ অধিগ্রহণ করেছে সরকার। হেরিটেজ হিসেবে তার আইনি প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: ১৩ বছরের কিশোরের হাতে গড়ে উঠছে দুর্গা, নির্মাতার হাতেই পূজিতা দেবী]
একসময় নিষ্ঠা ও রীতিনীতি মেনে জমিদার বাড়ির দালানে শোভা পেত একচালার দেবী প্রতিমা। প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে এবার বন্ধ থাকছে ধান্যকুড়িয়া জমিদার বাড়ির পুজো (Durga Puja 2021)। শুধু গায়েন বাড়িই নয়, চলতি বছর বন্ধ থাকছে ধান্যকুড়িয়ার বল্লভ ও সাউবাড়ির পুজোও। করোনার কোপে প্রাণ কেড়েছে গায়েন বাড়ির জমিদার মহেন্দ্রনাথ গায়েনের নাতি কাঞ্চন গায়েনের। গত ২৩ মে করোনা আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। করোনার বলি বল্লভ পরিবারে কর্তা অম্বর বল্লভও। ওই পরিবারের মেয়েরা এবছর ঘট পুজো করতে পারেন। করোনা সাউ পরিবারের কারও প্রাণ কাড়তে পারেনি। তবে সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে এবার পুজো বন্ধের সিদ্ধান্ত।
বল্লভ পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, “ইতিহাসে এই প্রথম বাড়ির পুজো বন্ধ রাখতে হল। এই সিদ্ধান্ত জমিদারদের কাছে বেদনাদায়ক। তেমনি ধান্যকুড়িয়া তথা বসিরহাটবাসীর কাছেও দুঃখের।”
প্রতি বছরই রাজ্য ছাড়িয়ে ভিন রাজ্য থেকে বহু দর্শনার্থীরা এই পুজো দেখতে আসেন। গত কয়েক বছর আগেও ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়া থেকে পর্যটকরা এসেছিল এই পুজোতে। এমনকী টলিউড পাড়ার কলাকুশলীরা এই পুজোতে ভিড় জমাতেন। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর শেষ ছবি সত্যান্বেষীর শুটিং হয়েছিল গায়েন দের ঠাকুর দালানে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান গায়েন পরিবারের উত্তরসূরি মনোজিৎ গাইন।
সাউ পরিবারের সদস্য জ্যোতি প্রকাশ সাউয়েরও একই বক্তব্য। তাঁরা জানান, “পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। আলোয় আলোকিত থাকত জমিদার বাড়ির ঠাকুরদালান থেকে শুরু করে গোটা এলাকা। তার সঙ্গে বাজত সানাই। সব মিলিয়ে পুজোর দিনগুলিতে এক নতুন পরিবেশ তৈরি হত গোটা ধান্যকুড়িয়া গ্রামে। এবার পুজোর বোধন থেকে বিসর্জন পর্যন্ত জমিদার বাড়ির আনাচে কানাচে সবটাই বিষন্নতা সুর।” পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার আগের মতোই সব কিছু স্বাভাবিক হবে বলে জানান তাঁরা।