সুকুমার সরকার, ঢাকা: আজ বুধবার শুভ বিজয়া দশমী। বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড়ো ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপুজোর পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানমালা শেষ হল প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। মর্ত্যলোক ছেড়ে এবার বিদায় নিয়েছেন দেবী দুর্গা।
বুধবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে প্রতিমা নিরঞ্জন। দুর্গাপুজোর (Durga Puja) ষষ্ঠী থেকে নবমী অবধি ছিল জমকালো আলোকসজ্জা, ঢাক-কাঁসরের বাদ্যি, ধূপ-ধুনোয় আরতি ও ভক্তদের পুজো-অর্চনা আর সকল ধর্মের মানুষের দর্শন। মহানবমী রাতেই ভক্তদের চোখে-মুখে ছিল দেবী বিদায়ের বিষণ্ণ সুর। অশ্রুসজল চোখে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ সন্ধ্যায় জলাশয়ে বিসর্জন দিচ্ছেন প্রতিমা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আবদুল হামিদ আজ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে সন্ধ্যায় শারদীয় দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন জানান, শারদীয় অনুষ্ঠানটি বুধবার সন্ধ্যা ৮টায় সীমিত আকারে অনুষ্ঠিত হবে। মাস্ক পরে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানে যেতে অতিথিদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।
[আরও পড়ুন: আনন্দের সঙ্গে বিষাদও আনে উৎসব, আগমনীর পরেই বেজে ওঠে বিসর্জনের বাদ্যি]
এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) দেশবাসীর প্রতি ফের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার কড়া বার্তা দেন। তিনি বলেন, “কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করবেন না। পক্ষকাল বিদেশে সফর শেষে গতকালই মঙ্গলবার দেশে ফিরে বিকেলে ঢাকার গণভবন থেকে ভারচুয়ালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় একথা বলেন। তিনি বলেন, “সব ভেদাভেদ ভুলে বাঙালিরা সবসময় সব ধর্মের অনুষ্ঠান উৎসবে শামিল হয়। আমরা কিন্তু প্রতি উৎসবে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে উৎসব উদযাপন করি। যে কারণে বলি, ধর্ম যার যার, কিন্তু উৎসব সবার।বাংলাদেশ সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ।”
আজ বাংলাদেশের প্রতিটি মণ্ডপে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে দশমীবিহিত পুজো শেষে ভক্তরা অঞ্জলী প্রদান করেন। এরপর গৃহবধূরা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। আজ রাজধানী ঢাকা-সহ সারাদেশে স্থানীয় আয়োজন ও সুবিধামতো সময়ে বিজয়ার শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। সর্বত্র বিসর্জন শেষে ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ করবেন।
বিসর্জনের উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয় বিকেল ৪টে নাগাদ। এর আগে রাজধানীর ২৪১টি পুজোমণ্ডপের অধিকাংশই এসে সমবেত হয় পলাশীর মোড়ে। সেখান থেকে সম্মিলিত বাদ্যি-বাজনা, মন্ত্রোচ্চারণ ও পুজো-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিজয়ার শোভাযাত্রা। সদরঘাটের ওয়াইজঘাটের বুড়িগঙ্গা নদীর জলে একে একে বিসর্জন দেওয়া হয় প্রতিমা। বিজয়া দশমী উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হয়। বঙ্গভবন-সহ গুরুত্বপূর্ণ ভবন আলোকসজ্জিত করা হয়।
মহানবমীর দিনও আগের দিনের মতো রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের পূজামণ্ডপগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছিল। হাজার হাজার ভক্ত, পূজারি ও দর্শনার্থী মণ্ডপগুলোতে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দর্শন করেছেন। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোথাও কোথাও মণ্ডপসংলগ্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় বিকেল থেকেই। এই কারণে নগরের বিভিন্ন স্থানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা অবধি বিদ্যুৎহীন ঢাকায় যানজট অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে যাওয়ায় পুরোহিতদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। রাজধানী ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী, রমনা, বনানী, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন মন্দিরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে জেনারেটর সচল রাখা হয়। ফলে বিদ্যুৎ না থাকলেও তেমন কোনও অসুবিধা হয়নি।