সুমন করাতি, হুগলি: গঙ্গার পাড়ে ইমামবাড়া। তৈরি করেছিলেন দানবীর হাজি মহম্মদ মহসীন। তবে ওই যে স্থাপত্যের বা শিল্পের কোনও ধর্ম,জাত হয় না। সেই ধারাই মিলেমিশে একাকারা ইমামবাজার সর্বজনীন দুর্গাপুজোয়। পালবাড়ি থেকে ঠাকুর আনা থেকে বির্সজন সব কিছুতেই মুছে যায় ধর্মের ভেদাভেদ। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন মহম্মদ, সৌমিত্ররা। 'ধর্ম যাঁর যাঁর, উৎসব সবার এই 'মন্ত্রে'ই বিশ্বাসী তাঁরা।
প্রতিবারের মতো এবারেও ঠাকুর আনার সময় নিজের গাড়ি এক কথায় পাঠিয়ে দিয়েছেন মহম্মদ রমজান। পাড়ার হিন্দু, মুসলিম ছেলেরা কাঁধ মিলিয়ে ঠাকুর তুলেছেন মণ্ডপে। পুজোর সামগ্রী থেকে ফল কেনা কিছুতেই ধর্মের ভিন্নতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। মহম্মদ রমজান বলেন, "একসঙ্গে পুজোটা করি। খুব আনন্দ হয়। আমার নিজের গাড়ি করে ঠাকুর নিয়ে আসি।" শুধুমাত্র পুজো নয় মহরমের সময়ও হিন্দুরা সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন। রমজানের কথায়, "আমাদের মহরমে তাজিয়া বেরোয় তখন হিন্দু ভাইরা থাকেন। আমরা পাশাপাশি থাকি। কোনও ভেদাভেদ নেই।"
পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য সৌমিত্র সিংহ বলেন, "জায়গাটার নাম ইমামবাড়া হলেও আমরা হিন্দু-মুসলিম মিলিতভাবে পুজো করি। রমজান তাঁর গাড়িতে করে ঠাকুর নিয়ে আসে এক পয়সাও নেয় না। আমাদের অঞ্চলে যুবকের সংখ্যা কম। মুসলিম ভাইয়েরা নিজেদের মতো করে থাকে বলে সব ভালো ভাবে হয়ে যায়। কোনও ভেদাভেদ নেই। একসঙ্গে আমরা উৎসব পালন করি। ভোগ, প্রসাদ খাওয়া, বিসর্জন দেওয়া সবই একসঙ্গে। একইভাবে আমরা ইদ ও মহরম পালন করি। ইমামবাড়া এলাকায় দুই সম্প্রদায়ের বসবাস হলেও কোনও দিনও অপ্রীতিকর ঘটনা শুনতে পাবেন না।"
মা এসেছেন ঘরে। দুই সম্প্রদায়ই মায়ের কাছে প্রার্থনা করেন এই সম্প্রীতি যেন বজায় থাকে। ওদের কথায়, "এভাবেই যেন আমরা মিলেমিশে উৎসব পালন করতে পারি। কারণ উৎসব সবার।"