রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: পুজোর আনন্দ সকলের জন্য। বছরে একবার মা আসেন মর্ত্যধামে। বছরভর তার অপেক্ষা। এমন দিনে কি মায়ের মুখ না দেখে থাকা যায়? মোটেই না। কিন্তু পা নেই যে, কী করে ঠাকুর দেখবেন আলিপুরদুয়ারের সুখী সরকার? তাঁর এমন দুঃখের সময় স্বামীই হয়ে এলেন ত্রাতা। পঙ্গু স্ত্রীকে তিনি পিঠে নিয়ে চললেন মণ্ডপ দর্শনে! আর তাঁদের এভাবে দেখে আলিপুরদুয়ারের জটেশ্বর নবনগর এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এ যেন সাক্ষাৎ শিব-দুর্গা।
এভাবেই স্ত্রীকে পিঠে নিয়ে ঘুরছেন মণ্ডপে মণ্ডপে। নিজস্ব চিত্র।
এ এক অন্য ভালোবাসার ছবি! জটেশ্বরের নবনগর এলাকার টোটোচালক বিনোদ দাস। স্ত্রী সুখী সরকার। বছর পাঁচেক আগে টাইফয়েডের 'অভিশাপে' চলৎশক্তি হারিয়েছেন সুখী। দুই সন্তানের মা আর চলাফেরা করতে পারেন না। সুখী-বিনোদের দুই ছেলের একজনের বয়স ৮ বছর, আরেকজন ৫ বছরের। ১১ বছর আগে সুখীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন বিনোদ। সেই ভালোবাসা থেকেই পুজোয় স্ত্রীকে মা দুর্গার মুখ দেখাতে পিঠে বয়ে নিয়ে চললেন তিনি।
নবমীর সন্ধেয় আলিপুরদুয়ারের পুজোমণ্ডপে ভিড়ের মাঝে এমন দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়ালেন সকলে। এ এক দৃশ্য বটে! স্ত্রীকে পিঠে নিয়ে নিয়ে ঠাকুর দেখাচ্ছেন স্বামী। একটার পর একটা মণ্ডপে নিয়ে চলেছেন ক্লান্তিহীনভাবে। দুজনের মুখে নির্মল হাসি। আর এভাবে দুর্গাপুজোয় ঠাকুর দেখে অত্যন্ত সুখীর যেন সীমাহীন সুখ! বিনোদও বলছেন, যাক, স্ত্রীর ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারলেন। সকলে বলছেন, নাম সার্থক করে আজ তিনিই প্রকৃত 'সুখী'। প্রতি বছর এভাবেই যেন তাঁরা দুর্গাদর্শন করতে পারেন, বিজয়ার প্রাক্কালে সকলে এই শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।