shono
Advertisement

Durga Puja Travel: সবুজে মিশে ইতিহাসের ফিসফিসানি উপভোগ করতে চান? গন্তব্য হোক ‘মিনি সুন্দরবন’

ইতিহাসের সঙ্গে প্রকৃতি মিলেমিশে একাকার।
Posted: 09:29 PM Oct 19, 2023Updated: 01:30 PM Oct 20, 2023

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পুজোর বেড়ানো মানে কি শুধু চোখ জুড়িয়ে যাওয়া ল্যান্ডস্কেপ? কিন্তু এই প্রকৃতির সঙ্গে যদি ইতিহাস মিলে মিশে যায়, তাহলে কেমন হয়? শুধু ভাঙাচোরা স্থাপত্য নয়। নানান
ঐতিহাসিক নির্দশনকে ছুঁয়ে দেখে তার ইতিহাস শুনতে চাইলে পুজোর ছুটিতে গন্তব্য হোক কাশীপুর। হ্যাঁ, পুরুলিয়ার কাশীপুর।

Advertisement

নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কাশীপুর রাজবাড়ির চোখ টানা প্রাসাদ। পঞ্চকোট রাজপরিবার। দেবীবাড়ি। রাজরাজেশ্বরী ঠাকুরদালানের দুর্গাপুজো। কিন্তু কাশিপুর রাজবাড়িতেও দুর্গাপুজো হয়। যে পুজো দেখতে লাখ লাখ মানুষ ভিড় করেন। আসলে পুজোর সময়ই যে এই রাজবাড়ির সদর দরজা খোলা থাকে। বাকি সময় যে কোন সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারেন না। কিন্তু রাজপরিবারের অন্দরমহল? পুজোর সময় কিন্তু সেটাও দেখার সুযোগ মেলে না। তবে বিশেষ অনুমতিতে তা ঘুরিয়ে দেখানো হয়। সেই রাজবাড়ির অন্দরমহল চোখে একবার দেখবেন নাকি?

[আরও পড়ুন: রেকর্ড ভেঙে চতুর্থীতে সাড়ে ৭ লক্ষ যাত্রী আনাগোনা, কোন মেট্রো স্টেশনে বেশি ভিড়?]

সেই সঙ্গে এই কাশীপুরেও প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানা রয়েছে। তা পুরুলিয়ার ‘সুন্দরবন’ নামে পরিচিত।অনেকে বলেন, ‘মিনি সুন্দরবন’। তবে পোষাকি নাম রঞ্জনডি ড্যাম। কিন্তু নামকরণ করা হয়েছে যোগমায়া সরোবর। এখানে থাকা ওই জলাধারের চারপাশ জুড়ে সোনাঝুরি জঙ্গল যেন এখানে অনেকটা সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের মতোই দেখতে লাগে। তাই রঞ্জনডি মুখে মুখে ‘মিনি সুন্দরবন’ হয়ে গিয়েছে। কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “পুজোর আবহে বেড়ানোর আদৰ্শ ঠিকানা কাশিপুর। ইতিহাসের সঙ্গে প্রকৃতি মিলেমিশে একাকার। রঞ্জনডি জলাধারের পাশে কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতি থেকে পর্যটক আবাস রয়েছে। আমি সভাপতি থাকাকালীন এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।”

ওই প্রকৃতির সঙ্গে ইতিহাসে মিশে যেতে কাশিপুর রাজবাড়ির অন্দরমহল চাক্ষুষ না করলে এই বেড়ানোটার যেন সার্থকতাই হবে না । এই রাজপরিবারের রাজকন্যা মহেশ্বরী দেবীর পুত্র আনসুল রাজাওয়াত এই বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া না দিলেও সব কিছু তিনি-ই ঘুরিয়ে দেখান। ইটালিয়ান মার্বেলের ঝাঁ চকচকে মেঝে। বেলজিয়ামের বিশাল ঝাড়লন্ঠন, ইটালি থেকে নজর কাড়া সব আসবাবপত্র, বেলজিয়ামের পেন্টিং করা কাঁচ, নানান পাথরের মূর্তি। রয়েছে বিলিয়ার্ডস, পিয়ানো। রাজ রাজাদের শিকার করা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, লেপার্ড, বাইসন, চিতল হরিণ, সম্বর হরিণগুলিও সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়েছে।

শিকার করা ওই বন্যপ্রাণগুলির ভেতর থেকে নাড়ি-ভুঁড়ি বের করে খড় ভরে যে স্টাফড বা ট্যাক্সিডার্মি রাখা আছে তা দেখার মত। রয়েছে এই রাজ পরিবারের রাজাদের ব্যবহৃত তরোয়াল, ঢাল, বর্শা সহ নানান যুদ্ধাস্ত্র। এই প্রাসাদ লোকমুখে কাশীপুর রাজবাড়ি নামে পরিচিত হলেও গড় পঞ্চকোট প্যালেস বা পঞ্চকোট রাজপ্রাসাদ নামে রাজবাড়ির দেওয়ালে খোদাই করা রয়েছে। এই প্রাসাদ ছোটনাগপুর মালভূমির একটি দীর্ঘ বিস্মৃত রাজকীয় যুগের সাক্ষ্য। এটি ভারতের সবচেয়ে প্রাচীনতম গুলির মধ্যে একটি। মহারাজা দামোদরশেখর ৮১ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যিনি মধ্যপ্রদেশের উজ্জ্বয়িনীর ধারনগর থেকে আসা বিক্রমাদিত্যের সরাসরি বংশধর ছিলেন।

গড় পঞ্চকোট প্যালেস এখন পুরুলিয়ার অন্যতম হেরিটেজ। রাজ্য সরকার হেরিটেজ প্রাসাদকে পর্যটনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করলেও ওই পরিবারের তরফে সবুজ সংকেত এখনও মেলেনি। কেন্দ্রের পর্যটন মন্ত্রকও এই রাজবাড়িকে পর্যটনের অঙ্গ হিসেবে তুলে ধরছে। পঞ্চকোট রাজ তাদের রাজধানী গড় পঞ্চকোট থেকে শাসন করেছিল। ১৭৫০ সালের দিকে রাজ পরিবার কাশিপুরে স্থানান্তরিত হয়। এবং তখন থেকে এখানে রয়েছে। এখন অবশ্য সেই রাজা, রাজতন্ত্র নেই। কিন্তু এই এস্টেট ২,৭৭৯ বর্গমাইল বিস্তৃত।

যার মধ্যে রয়েছে সাবেক মানভূম, রাঁচি, বাঁকুড়া, ওড়িশা, কলকাতা এবং বেনারসে মূল্যবান খনি সহ বিস্তৃত সম্পত্তি। এই রাজপ্রাসাদ মহারাজা জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ দেও তাঁর ১২ বছরের মধ্যে শাসনকালে ৩০ লাখ টাকা খরচ করে এই কাশীপুরে নির্মাণ করেন। চিন থেকে রাজমিস্ত্রি এনে ১২ বছর ধরে ওই রাজার আমলে প্রাসাদ নির্মাণ হওয়ায় এই প্রাসাদ ‘জ্যোতি বিলাস’ নামেও পরিচিত। ১৩২৩ বঙ্গাব্দ ১৯১৬ সালে এই প্রাসাদ নির্মাণ হয়। আজ এই প্রাসাদ ১০৭ বছরে পা দিয়েছে। ফলে কাশীপুরে বেড়াতে এসে এই প্রাসাদের অন্দরমহল দর্শন যেন কোনোভাবেই বাদ না পড়ে। জেলা প্রশাসন থেকে জেলার মানুষজন সর্বোপরি পর্যটকরা চাইছেন এই প্রাসাদ পর্যটনে জুড়ুক।
দেখুন ভিডিও:

[আরও পড়ুন: Probashe Durga Puja: গ্রামবাংলার ছোঁয়া, ভরপুর খাওয়াদাওয়ায় জমবে ‘উৎসব দুবাই’য়ের দুর্গাপুজো]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement