নব্যেন্দু হাজরা: একটা সময় গরমকাল মানেই মাটির কলসিতে জল ভরে রাখতেন মা-ঠাকুমারা। কারণ তখন ফ্রিজ ছিল না। মাটির পাত্রে জল রাখলে তা ঠান্ডা থাকত। কিন্তু ঘরে-ঘরে ফ্রিজ আসতেই অভ্যেস বদলায় মানুষ। প্লাস্টিকের বোতলে ফ্রিজে জল রাখা শুরু হয়। কিন্তু হলে কী হবে! সেই ঠান্ডা জলে স্বাদ মেটে না। তাই ফের বঙ্গজুড়ে চরম দাবদাহে মাটির বোতল-কুঁজোর প্রবেশ।
শুধু তাতে লেগেছে আধুনিক নকশা, কোনওটাতে পটচিত্র। গ্রাম থেকে শহর, মফস্বল। এই গরমে বিপুল চাহিদা এই মাটির বোতল-কলসির। তবে বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, বেশি বিক্রি বোতলের। রোদে রাখলেও জল গরম হবে না। জলের স্বাদও বদলাবে না। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জল রাখার মাটির পাত্রের আকার, বহরেও বদল এনেছেন মৃৎশিল্পীরা। এখন একেবারে প্লাস্টিকের বোতলের আদলে তৈরি হচ্ছে মাটির বোতল। ব্যবহার করাও অনেক সহজ। পরিবেশবান্ধবও বটে। শহর থেকে জেলা দেদার বিকোচ্ছে এই জলের বোতল। কোনও কোনও মাটির বোতলের গায়ে রঙের কারুকাজ। একেবারে চিরন্তন বাঙালিয়ানার ছোঁয়া। আর এমনভাবে বানানো হয়েছে, সহজেই ব্যাগে বা হাতে করে এদিক-ওদিক নিয়ে যাওয়া যাবে।
[আরও পড়ুন: প্রবল বেগে আসছে ‘বিপর্যয়’, গুজরাট উপকূল থেকে সরানো হল বাসিন্দাদের]
বিভিন্ন মৃৎশিল্পীর দোকান থেকে এগুলো কিনে অনেকেই আবার অনলাইনে বিকোচ্ছেন বোতল। এক লিটারের বোতলের দাম শুরু ১৮০ টাকা থেকে। তবে বিক্রেতারাই বলছেন, যে যেমন পারছেন দাম নিচ্ছেন। আদতে কুমোরপাড়া থেকে এই বোতল ১০০ টাকা পিসেও পাওয়া যায়। সেই বোতলের উপর পড়ছে নানা নকশা। আর তখনই সেই দাম ৩০০-৪০০ টাকাও হয়ে যাচ্ছে বহু জায়গায়।
[আরও পড়ুন: মনোনয়নে যুদ্ধক্ষেত্র ভাঙড়! বোমার ঘায়ে পিছু হঠল পুলিশ]
হুগলির চুঁচুড়ায় অনলাইনে এই ডিজাইন করা মাটির বোতল বিক্রি করেন অরুণিমা সরকার। তিনি বলেন,”আমি চার বছর ধরে এই মাটির বোতল, কুঁজো বিক্রি করছি। এবছর আকাশছোঁয়া চাহিদা। এমনি অন্য রাজ্য থেকেও অর্ডার আসছে। মূলত অনলাইনেই ব্যবসা।” মাটিকে রোদে শুকিয়ে, ছাঁচে ফেলে এই বোতল তৈরি হয়। তার উপর হয় ডিজাইন। পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূম, বর্ধমান, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি সব জেলাতেই পটুয়াপাড়ায় এখন চলছে জোরকদমে বোতল তৈরির কাজ। কলকাতাতেও নানা দোকানে এই বোতল বিকোচ্ছে। ক্রেতারাও জানাচ্ছেন, কথাতেই আছে, পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। মাটির কুঁজো, বোতল যে এভাবে আবার গেরস্তের ঘরে ফিরে আসবে তা ভাবা যায়নি।