বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, ইন্দোর: ভোট পড়েছে উৎসব মরশুমের মাঝে। আর তাতেই কপাল খুলে গিয়েছে দেব-দেবীদের! তাঁদের দোরে লম্বা কিউ প্রার্থীদের। নগদ অর্থের সঙ্গে প্রণামীর বাক্সে হুড়মুড়িয়ে জমা পড়ছে সোনা, রুপো, হীরে, জহরত। কিন্তু তার পরিমাণ কত, সে বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। নির্বাচন কমিশনের রক্তচোখের ভয়ে।
ক্যালেন্ডারের পাতায় আশ্বিন-কার্তিক মানেই একের পর এক উৎসবের শুরু। বিশ্বকর্মা পুজো, গণেশ পুজো, দুর্গাপুজো, নবরাত্রি, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, দীপাবলি হয়ে কার্তিক পুজো পর্যন্ত লম্বা মরশুম। এবার তারই মধ্যে বিধানসভা ভোট। স্বাভাবিকভাবেই আমজনতার সঙ্গে জয়প্রত্যাশী প্রার্থীরাও ভিড় জমাচ্ছেন দেবতার আশীর্বাদ নিতে। নিষ্ঠাভরে পূজার্চনার পর দু’হাত ভরে প্রণামী দিচ্ছেন দেবতার পাদমূলে। কিন্তু বিপদ তো সেখানেও! সে বিপদের নাম কমিশনের রক্তচক্ষু।
[আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ উড়িয়ে ফাটল দেদার বাজি, দীপাবলির পরই ফের ‘গ্যাসচেম্বার’ দিল্লি!]
কমিশন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মন্দিরে নগদ প্রণামী দেওয়া হলে তা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। কে কত টাকা জমা দিলেন, তাও জানাতে হবে প্রতিদিন। ভোটে কালো টাকার ‘উৎপাত’ রুখতেই এই কড়াকড়ি। দীপাবলির রাতে মন্দিরে মন্দিরে সে নিয়ে নজরদারিও চলছে। অগত্যা দেবতাকে খুশি করতে সোনা, রুপো, হীরে, জহরতেই ভরসা ভোটপ্রত্যাশীদের। তবে কে কত প্রণামী দিলেন, তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই কারওই। প্রণামীর অঙ্ক নিয়ে চরম গোপনীয়তা!
মধ্যপ্রদেশের দুই মন্দিরে বছরভর ভিড় জমায় ধর্মপ্রাণ জনতা। দীপাবলিতে তো সেই ভিড় জনসুনামিতে পরিণত হয় প্রতিবার। প্রথমটি উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দির। দ্বিতীয়টি খলামের লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির। দিন কি রাত-একই ছবি। পাল্লা দিয়ে উপচে পড়ে মন্দিরের প্রণামীর বাক্সও। এবার ভোটের প্রার্থীরা সেই ভিড়ে শামিল হয়ে প্রণামী বাক্স ভরিয়ে দিচ্ছেন দু’হাত উজাড় করে। এক রাতেই দুই মন্দিরে দুশো কোটি মূল্যের সোনা, রুপো, হীরে, জহরত জমা পড়বে বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের। কিন্তু সেই অঙ্ক নিয়ে গোপনীয়তা বজায় রাখছে মন্দির কতর্ৃপক্ষ। দাতাদের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর রাখা হলেও তা প্রকাশ করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরের সেবাইতরা।
একই ছবি খলামের লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরে। প্রতিবছরই দীপাবলির রাতে মনস্কামনা পূরণের লক্ষ্যে লক্ষ্মীনারায়ণের পায়ে মাথা ঠোকেন লক্ষ পুণ্যার্থী। কিন্তু অন্য বছরের তুলনায় এবারের দীপাবলির রাতে মন্দিরের চিত্র কিছুটা হলেও ভিন্ন। সাধারণের পাশাপাশি লাইন দিয়েছেন প্রার্থীরা। কারণ মহিলা ভোট। এবার রাজ্যের ভোটে বড় ফ্যাক্টর মহিলারা। মহিলা সমর্থন যেদিকে, কুর্সি দখলে এগিয়ে সেপক্ষই। তাই প্রচারের প্রথম দিন থেকেই প্রার্থীরা মেতেছেন লক্ষ্মীর আরাধনায়। প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ইস্তাহারে মহিলাদের মন জয়ে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিয়েছে। দীপাবলির রাতে যে প্রার্থীরা মন্দিরে ভিড় করবেন, তা সেজন্যই আগেই আঁচ করেছিল মন্দির কর্তৃপক্ষ। আর জানা ছিল বলেই আগাম ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে দীপাবলি, সুনাককে বিরাটের সই করা ব্যাট উপহার জয়শংকরের]
প্রার্থী, রাজনৈতিক নেতাদের জন্য ভিআইপি ব্যবস্থার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে আগে থেকেই। যাতে গোল না পাকায়, সেজন্য প্রতে্যকের জন্য আলাদা আলাদা সময় নির্ধারণ করাও হয়েছে। প্রার্থী এলেই সটান নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিগ্রহের সামনে। পুজোপাঠ করছেন। প্রণাম সারছেন। আশীর্বাদী টিকা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রণামী? সে বিষয়টি কাকপক্ষীতেও টের পাচ্ছে না। মন্দির চত্বরের এজন্য একটি ঘর বরাদ্দ করা রয়েছে। সেই ঘরের মধ্যেই প্রণামী জমা করছেন ভোট প্রার্থীরা।
বিকেল বিকেল লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরে এসেছিলেন পটেলাবাদ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বাল সিং মেটা। পুজো শেষে বেরোনোর মুখে প্রণামীর অঙ্ক নিয়ে প্রশ্ন শুনে মুচকি হেসে তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘সাধ্যমতো প্রণামী দিয়েছি। তবে নগদে নয়।’’ মন্দিরের সেবাইত সঞ্জয় অমর লাল জানান, এমনিতে নগদে প্রণামী নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু এবার ভোটের জন্য ৫০ হাজারের বেশি নগদ নেওয়া হচ্ছে না। কে কত প্রণামী দিচ্ছেন সেই হিসাব জেলাশাসককে পাঠাতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, একই চিত্র উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরে। সকাল থেকেই পুজোপাঠ চলছে। ভিড় করছেন ভোটপ্রার্থীরা। প্রণামী বাক্স উপচেও পড়েছে। নগদে প্রণামী দেওয়ার ক্ষেত্রে এখানেও একই বিধিনিষেধ জারি করেছে প্রশাসন। কালো টাকা যাতে মন্দিরে জমা না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে কমিশন। নগদের ওপর বিধিনিষেধ জারি হওয়ায় অলংকারেই প্রণামী বেশি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।