সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অবশেষে মুখ খুললেন ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। বুধবার রাত ১২টা নাগাদ তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা বা ভয়েস স্যাম্পল হাতে পেল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে এটাকে বড় সাফল্য হিসেবেই দেখছে ইডি। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত ৩টে ২০ নাগাদ ‘কাকু’কে আবার ইএসআই হাসপাতাল থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে ফেরত আনা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, এদিন জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত কাকুর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। তারপরই কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করা হয়। ইএনটি বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে অবশেষে এই কাজ সম্পন্ন হয়। ইডি আধিকারিকদের কাছে থাকা ভয়েস স্যাম্পলের তিনটি বাক্য বলানো হয় সুজয়কৃষ্ণকে। জানা যাচ্ছে, শুধু সাউন্ডপ্রুফ নয়, ইকোপ্রুফ রুম তৈরি রাখা হয়েছিল জোকা ইএসআইতে।
উল্লেখ্য, আগস্ট থেকে জানুয়ারি। দীর্ঘ সাড়ে চার মাসের টানাপোড়েনের পর বুধবার রাত ৯টা নাগাদ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে সিআরপিএফ জওয়ানের নিরাপত্তায় জোকা হাসপাতালে নিয়ে যায় ইডি। ওদিকে, দুপুর থেকেই ৪ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি হয় তাঁর গলার নমুনা সংগ্রহের জন্য। পিজি থেকে জোকা প্রায় ৪০ মিনিট পথ ফাইভ জি অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ১০টা নাগাদ জোকা ইএসআই হাসপাতালে ঢুকলেন তিনি। সেখানে রুটিন চেকআপের পর শুরু হয় ভয়েস স্যাম্পল সংগ্রহ করার প্রক্রিয়া। টানা দুঘণ্টা কাউন্সেলিংয়ের পর অবশেষে ‘কাকু’কে ইএনটি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
সূত্রের খবর, জোকা ইএসআই হাসপাতালের যে চার সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড রয়েছে তাতে মেডিসিন, কার্ডিওলজিস্ট, ইএনটি ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। একজন ভয়েস অ্যানালিস্ট বা কণ্ঠস্বর বিশ্লেষকও রয়েছেন। শুরুর দিকে কার্যত মূক হয়ে বসেছিলেন কাকু। বারবার অনুরোধ সত্বেও একটি কখাও বলতে রাজি হননি তিনি। আদৌ তিনি কোনও কথা বলবেন কি না, তা নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন তদন্তকারীরা। অবশেষে কাউন্সেলিংয়ের পর ‘কাকু’কে ইএনটি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
এদিন রাত ৯.৩০ নাগাদ এসএসকেএমের কার্ডিওলজি বিভাগের কেবিন থেকে বার করা হয় সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে। সেসময় খয়েরি রঙের চাদর মুড়ি দিয়ে ছিলেন তিনি। মুখে ছিল মাস্ক। হুইলচেয়ারে করে তাঁকে বার করে তোলা হয় অ্যাম্বুল্যান্সে। বেরোনোর সময়ে ‘কাকু’ কোনও কথা বলেননি। ইডির তদারকিতে ফাইভ জি অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার সঙ্গে সঙ্গেই জোকার ৪ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড তাঁর রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন ও অন্যান্য মেডিক্যাল প্যারামিটার পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে দেন। অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা এসএসকেএম ও জোকার দুই চিকিৎসক নিরন্তর তাঁর শারীরিক অবস্থা রেকর্ড করতে থাকেন। বস্তুত এই সময়টুকুর মধ্যে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের শারীরিক অবস্থার যাতে কোনওরকম পরিবর্তন না হয় তার দিকে সতর্ক নজর রাখা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: তৃণমূল ছাড়ছেন রাজন্যা! এবার কোন ভূমিকায় দেখা যাবে ছাত্রনেত্রীকে?]
সূত্রের খবর, কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের পর রাতেই তাঁকে পিজির কার্ডিওলজিতে ফেরত দেওয়া হবে বলে জোকা ইএসআই হাসপাতাল সূত্রে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছিল। প্রশ্ন উঠে গেল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে পৌনে নটা পর্যন্ত এতটা সময় ইডি ও এসএসকেএমের মধ্যে কী কোনও টানাপোড়েন হয়েছিল? সূত্রের খবর, এই সময়ের মধ্যে জোকা ইএসআইয়ের এবং এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা ‘কালীঘাটের কাকু’র মেডিক্যাল রিপোর্ট খতিয়ে দেখছিল। রাতে তাঁর কোনও ওষুধ প্রয়োজন কিনা, তা দেখা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: আইআইটি বেনারস গণধর্ষণে অভিযুক্তদের ছবি মোদি-যোগীদের সঙ্গে, তোপ তৃণমূলের]
বলে রাখা ভালো, নিয়োগ মামলার তদন্তের স্বার্থে কালীঘাটের কাকুর ভয়েস স্যাম্পল বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার। তবে অতীতে একাধিকবার চেষ্টার পরেও ‘কাকু’র স্বরের নমুনা মেলেনি। এমনকি, আদালতের নির্দেশের পরেও সংগ্রহ করা যায়নি নমুনা।