অর্ণব আইচ: আরও ২৬ জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা তুলেছিলেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কয়েক দিনে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে বলে দাবি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের। এ ছাড়াও শান্তনু দিনমজুরকে দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে নিজেই তা নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে ইডি অভিযোগ তুলেছে। আবার রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে শান্তনু তাঁর ঘনিষ্ঠ হুগলির এক নেতার বেসরকারি সংস্থাকে টেন্ডার পাইয়ে দিয়ে কীভাবে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা ঘুরিয়েছেন, সেই বিষয়টিও আদালতে জানিয়েছে ইডি।
বুধবার নিয়োগ দুর্নীতির অভিযুক্ত শান্তনুকে ব্যাঙ্কশালের বিশেষ ইডি আদালতে তোলা হয়। শান্তনুর আইনজীবী তাঁর জামিনের আবেদন করেননি। ইডির আইনজীবী ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তনুকে জেল হেফাজতে রাখার আবেদন জানান। শান্তনুকে ১৭ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। আদালত থেকে বেরনোর সময় শান্তনুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘যা বলার কোর্টে বলব।’’ উল্লেখ্য, সামনের সপ্তাহেই শান্তনুর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করতে পারে ইডি।
[আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতির মূল পাণ্ডা মানিক, সুপ্রিম কোর্টে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ সিবিআইয়ের]
এদিন আদালতে ইডি জানায়, ইতিমধ্যেই ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার প্রায় সাড়ে তিনশো চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে টাকা তোলেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজেন্টরা। সেই টাকা পৌঁছয় শান্তনুর কাছে। সেই চাকরিপ্রার্থীদের নামের তালিকা শান্তনুর কাছ থেকে উদ্ধার করে ইডি। গত দু’সপ্তাহের তদন্তে ইডির হাতে আসা আরও ২৬ জন চাকরিপ্রার্থীর তালিকা আসে। ইডি আধিকারিকরা নিশ্চিত হন যে, আরও ২৬ জন প্রাথমিক ও আপার প্রাইমারি শিক্ষক পদপ্রার্থীর কাছ থেকে মোট ১ কোটি ৪০ টাকা নিয়েছেন শান্তনু। একেকজনের কাছ থেকে গড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। তবে ইডির দাবি, বাকি চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকেও শান্তনু গড়ে আট থেকে দশ লাখ টাকা করে তোলেন।
আদালতে ইডির অভিযোগ, তদন্তে উঠে এসেছে যে, শান্তনু রীতিমতো ছক কষেই দিনমজুরকে দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলান। এর পর তাঁর সই চেকবইয়ে নেন। ফলে ওই দিনমজুরের সই দিয়েই ব্যাংক থেকে লেনদেন হত বিপুল পরিমাণ টাকার, যা নিয়োগ দুর্নীতির বলেই অভিযোগ। এর ফলে শান্তনুর আয়ের উৎস লুকানো সহজ হয়। কারণ তাঁর বিপুল আয় দুর্নীতি থেকেই। এই ব্যাপারে আরও তদন্ত চলছে। শান্তনু নিজের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অন্যের বেসরকারি সংস্থা ব্যবহার করতেন। সেই সংস্থা থেকে টাকা শান্তনু তাঁর নিজের সংস্থায় নিয়ে আসেন। ইডির দাবি, শান্তনু হুগলির সংস্থা লোটাস কনস্ট্রাকশনসের মালিকের উপর রাজনৈতিক প্রভাব খাটান। ওই সংস্থাটি রাস্তা তৈরি থেকে অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি নির্মাণের সঙ্গেও যুক্ত। ওই সংস্থার মাধ্যমে টেন্ডার নিয়ে কাজ করানো হত। শান্তনু ওই সংস্থায় নিয়োগ দুর্নীতির টাকা লগ্নি করেন। পরে ওই সংস্থা থেকে টাকা ঘুরিয়ে অন্য একটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসেন। ওই দ্বিতীয় অ্যাকউন্টটি শান্তনুর পরিজনদের নামে হলেও তিনিই সেটি নিয়ন্ত্রণ করতেন।
[আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে ভেস্তে গেল ম্যাচ, লখনউ থেকে এক পয়েন্ট নিয়ে ফিরছে ধোনির চেন্নাই]
লোটাস সংস্থাটিও শান্তনুর এক ঘনিষ্ঠের, যিনি হুগলির এক রাজনৈতিক নেতা ও তাঁর সঙ্গে বহু প্রভাবশালীর যোগও রয়েছে বলে অভিযোগ ইডির। এদিন জামিন না চাইলেও আদালতে শান্তনুর আইনজীবীরা বলেন, প্রত্যেকবার ইডি একই আবেদন আদালতে জানায়। তাই যতদিন না ইডি জানাচ্ছে তাদের তদন্ত শেষ হয়েছে, ততদিন তাঁরা শান্তনুর জামিনের আবেদন করবেন না। যে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা তোলার কথা ইডি বলছে, তার স্বপক্ষে কোনও নথি নেই। যে বিপুল টাকা তোলার কথা বলা হচ্ছে, সেই টাকা ব্যাংক থেকে শান্তনু ঋণ নিয়েছিলেন। তা ফেরত দিতে পারেননি। শান্তনুর বাড়ি থেকে ওএমআর শিট ও নথি মিলেছে বলে ইডির অভিযোগ। কিন্তু যেখানে ধরপাকড় চলছে, সেখানে কি শান্তনু বাড়িতে নথি লুকিয়ে রাখবেন? শান্তনু চাকরি করতেন। অথচ ইডি আবেদনপত্রে শান্তনুকে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা বলেই উল্লেখ করছে। ইডি শান্তনুকে জেলে গিয়ে জেরা করতে পারবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।