সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আর্থিক বিষয়ে এবার পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করল ইডি। এই মর্মে সভাধিপতির কাছে বুধবারই নোটিস এসেছে। ঠিক পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থাপনার এই জেলার প্রধান সভাধিপতিকেই ইডি তলব করায় পুরুলিয়ায় রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, আগামী ১৪ নভেম্বর দিল্লিতে সুজয়বাবুকে তলব করা হয়েছে। সভাধিপতি বলেন, ‘‘আর্থিক বিষয়ে আমার কাছে যা যা জানতে চাওয়া হয়েছে তা অবশ্যই জানিয়ে দেব।’’ তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে স্বয়ং সভাধিপতিকেই এভাবে তলব করায় পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল এই বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে বলে জানিয়েছে। এদিকে ঝালদা পুরসভায় ঝালদার পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ তুলে ইডি’র তদন্ত দাবি করলেন শাসকদলেরই নেতা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সম্পাদক তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার। তৃণমূলের নেতাই এমন দাবি করায় ঝালদার রাজনৈতিক মহলে কার্যত শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: চেন্নাইয়ে রাজ্যপাল লা গণেশনের পারিবারিক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী, কথা রজনীকান্তের সঙ্গে]
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর এই জেলায় এসে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দু’দুবার কয়লা পাচার মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাঘমুণ্ডির তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোকে জড়িয়ে সরব হয়েছিলেন। বাঘমুণ্ডির বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোকেও ইডি তলব করেছিল। এবার সভাধিপতিকে তলব করায় এর পিছনে রাজনীতি রয়েছে বলে মনে করছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল।
দলের জেলা সভাপতি তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের জনসাস্থ্য ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যাতে মাঠে নেমে কাজ না করতে পারেন তাই আমাদের নেতাদের ইডি, সিবিআই দেখানো হচ্ছে। এই বিষয়গুলিকে আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব।’’ তবে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সম্পাদক প্রদীপ কর্মকার যেভাবে ঝালদার অনাস্থা আসা পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়ালের বিরুদ্ধে আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ তুলে ইডির তদন্ত চেয়েছেন, তা ভাল চোখে দেখছে না দল। দলের জেলা সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘ওনাকে সতর্ক করা হবে। বারবার বলা হয়েছে কোনও অভিযোগ থাকলে দলকে জানান। এভাবে প্রকাশ্যে নয়।’’
এদিন প্রদীপ কর্মকার বলেন, ‘‘গত ছ’মাসে ঝালদা পুরসভায় সুরেশ আগরওয়ালের আমলে যে সীমাহীন আর্থিক বেনিয়ম হয়েছে তাতে ইডি যথাযথ ভাবে তদন্ত করতে পারবে। পুরসভায় শুধু কাটমানির খেলা চলছে। কিছু নেতা পুরপ্রধানের সঙ্গে মান্থলিতে বাঁধা।’’ তবে প্রদীপ কর্মকারের এই বক্তব্যের পাল্টা দিয়েছেন ঝালদার পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়াল। তিনি বলেন, ‘‘পুরভোটে মানুষ যাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছেন তাঁর এই সব কথাবার্তার কোনও ভিত্তি নেই। আমিও চাই তদন্ত হোক। তবে হলে শুধু গত ছ’মাসের কেন? প্রদীপ কর্মকার যে সময় প্রশাসক ও পুরপ্রধান ছিলেন সেই সময় তিনি যে সব বেনিয়ম করেছেন তারও তদন্ত প্রয়োজন।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এটা তো হওয়ারই ছিল। এরপর আর কার কার ডাক আসে দেখুন। মানুষ স্বচ্ছতার সঙ্গে রাজনীতি চান। শাসক দলের রাজনীতিতে সেই স্বচ্ছতা নেই। সেটা বারেবারে প্রমাণ হয়েছে।’’ বৃহস্পতিবার উপ পুরপ্রধানের তলবি সভার বৈঠক ডাকার সময়সীমা শেষ।