ছারপোকা থেকে। মালয়েশিয়ার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিশেষ প্রজাতির ছারপোকা পারে মানুষের রক্তের বিশেষত্ব দেড় মাস ধরে রাখতে।
‘খুন’ হলে গোয়েন্দারা সর্বাগ্রে খোঁজ নেন, খুন যদি কোনও হাতিয়ার দিয়ে করা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি কোথায়? বা তা পাওয়া গেল কি না। খুনখারাপির অস্ত্রশস্ত্র নানা ধরনের হতে পারে। তীক্ষ্ণ, বা ভোঁতা। গুলিগোলার বিষয় হলে খোঁজা হয় কোন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। আবার বুলেটের ধরন থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা অনুমান করতে চেষ্টা করেন, কোন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে এরকম বুলেট নির্গত হতে পারে? তা কি প্রতিরক্ষাকর্মীরা ব্যবহার করেন, না কি সন্ত্রাসী উগ্রপন্থীরা? অন্যদিকে, শার্প বা ব্লান্ট ইনস্ট্রুমেন্টের ক্ষেত্রে, সেটি খুঁজে পাওয়া গেলে খুনের উদ্দেশ্যকে প্রতিষ্ঠা করা অনেক সোজা হয়ে যায়।
‘রহস্যপীঠ লালবাজার’ গ্রন্থসিরিজের বহু লেখায় সুপ্রতিম সরকার নিখুঁতভাবে দেখিয়েছেন, মারণাস্ত্র খুঁজে পেলে তাতে বিধৃত আঙুলের দাগ বা রক্তের ছিটে কেমন করে খুনির বিরুদ্ধে আদালতে তথ্যপ্রমাণকে মজবুত করতে সাহায্য করে। সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা বা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বে্যামকেশ যখন তদন্তে নেমেছে, খুনখারাপির প্রশ্নে তারাও বরাবর সচেষ্ট থেকেছে কোন হাতিয়ার থেকে খুন-জখমের ঘটনা ঘটেছে তা অনুসন্ধান করে বের করার।
এই প্রবণতা এমনই সর্বব্যাপী যে, আততায়ীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে খুনের হাতিয়ার লোপাট করে দিতে, বা এমন কোথাও ডিসপোজ করতে, যা সহজে পাওয়া যাবে না। বর্ষাতি পরে খুন করার ঘটনার কথা বিদেশি গোয়েন্দা গল্পে পাওয়া যায়, একইভাবে পাওয়া যায় শরদিন্দুর রহস্যমেদুর আখ্যানেও। আসলে গোয়েন্দার অভিমুখ– সামান্যতম চিহ্ন থেকে খুনের ঘটনাকে ধরে ফেলার ও প্রতিষ্ঠা করার। আততায়ীর অভিপ্রায়– খুনের প্রতিটি চিহ্নকে যতটা সম্ভব লোপাট করে দেওয়ার, যাতে রহস্যের উপর থেকে কখনও কুয়াশার পর্দা সরে না যায়।
চোর-পুলিশের এই চিরন্তনী খেলায় এবার কি আসতে চলেছে নতুন শো-স্টপার? যে কারও পক্ষে নয়, বা কারও বিপক্ষে নয়, কিন্তু জীবনধর্মের গুণে সে সাহায্য করতে পারে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের? সায়েন্স ইউনিভার্সিটি অফ মালয়েশিয়া-র একঝাঁক বিজ্ঞানী দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ছারপোকার দিকে। এমন এক প্রজাতির ছারপোকার (‘ট্রপিক্যাল বেড বাগ’) সন্ধান দিয়েছেন, যারা মানুষের রক্ত শোষণ করলে তাদের দেহ বিশ্লেষণ করে সেই মানুষের ডিএনএ-র খোঁজ পাওয়া যেতে পারে আগামী দেড় মাস ধরে।
তাহলে কি ছারপোকা এবার থেকে ‘আখ্যায়িত’ হবে ‘বিছানার গোপন গোয়েন্দা’ রূপে? ছারপোকার দেহ-লভ্য ডিএনএ স্যাম্পেল নাকি বলে দিতে পারবে যার রক্তশোষণ করেছে– সেই মানুষটির লিঙ্গ, চোখের রং, চুল ও ত্বকের বিশেষত্ব। কিন্তু একই দিনে ছারপোকা যদি একাধিক মানুষের রক্ত শোষণ করে থাকে, তাহলে? ডিএনএ স্যাম্পেলে কার রক্তবৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হবে? নিরন্তর গবেষণা হয়তো এরও সুনিশ্চিত উত্তর দেবে। আর, আগামীতে রহস্যমূলক ওটিটি সিরিজে কি বিশেষ ভূমিকায় আবির্ভূত হবে ছারপোকা?
