‘ব্রেন রট’-কে অক্সফোর্ড ডিকশনারি এই বছরের ‘সেরা শব্দ’ বলেছে। এখানে উদ্যাপন কম, সতর্কতা বেশি। অানন্দ পেরিয়ে উদ্বেগের ধ্বনি।
ঘটা করে বিয়ে হল মুকেশ আম্বানির পুত্রর। দেশ কেন, বিশ্ব দেখেছে সেই বিয়ের তামঝাম, বিনোদন, জৌলুস। সোশ্যাল মিডিয়া দাপিয়েছে আমন্ত্রিত অতিথিদের সহাস্য ছবি, কর্মকাণ্ড, অনন্ত ও রাধিকার খুনসুটি। এত খরচ করার কোনও দরকার ছিল কী– সমালোচনা হল বটে এই মর্মে, কিন্তু তারপরেও ‘স্ক্রিন টাইম’ কমল না। প্রত্যেকে এতবার করে, সোশ্যাল মিডিয়ায়, সেই উদ্যাপনের টুকরোটাকরা দেখতে বাধ্য হল যে, বলার নয়। প্রথম দফার সেই স্রোত খানিক কমলে, শুরু হল মিমের বাহার। এমন কনটেন্ট প্লাবিত করল নেট-দুনিয়াকে যা আগাগোড়া ব্যঙ্গাত্মক, আবার ব্যঙ্গ করতে গিয়ে কখনও-কখনও তা হয়ে গেল অর্থহীন, সারবত্তাশূন্য।
তেমনই একটি কনটেন্ট হল– মুকেশ আম্বানি খেতে বসা অতিথিদের পাত থেকে একে-একে মিষ্টি তুলে নিচ্ছেন! মানে, এই কনটেন্ট আমাদের নিয়ে যেতে চাইছে শেষ থেকে প্রথমের দিকে, ব্যাকওয়ার্ড মোশনে। চকিতে দেখলে, হকচকিয়ে যেতে হবে। এটাই ‘কিক’। এটাই ‘লক্ষ্য’। এটাই ‘মোক্ষ’। ভিডিওটির ‘আসল’ কনটেন্ট কী ছিল বুঝতে অসুবিধা হয় না। মুকেশ আম্বানি অতিথি-অভ্যাগতদের পাতে খাবার পরিবেশন করছেন, যেমনটা হয়ে থাকে বিয়েবাড়িতে। প্রযুক্তির কারসাজিতে সেই কনটেন্টে এমন মোচড় আনা হয়েছে যে, তা তৈরি করছে কনটেন্টের ‘ভাইরাল’ হওয়ার সম্ভাবনা, কেননা এতে উদ্ভট রসের জাগৃতি ঘটছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন কনটেন্ট যত খামখেয়ালি হবে, তত তার জয়গান। কেউ দেখাচ্ছে ‘পান বার্গার’ কী করে বানাতে হয়, কেউ জানাচ্ছে সারা দিনে সে কী করল, কেউ-বা একটা মাথামুণ্ডহীন কথাকে ছড়িয়ে দিতে চাইছে মজা করে– অমনি দুনিয়া ধাবমান হচ্ছে সেসবের পিছে। তার মানে কী এই যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্চমেধার কনটেন্টের কদর নেই? আছে। তবে কি সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিবাচক ও অর্থময় কনটেন্ট দাম পায় না? পায়। কিন্তু শৌর্যে যেন সবকিছুকে পিছনে ফেলে দিচ্ছে নিম্নমেধার, নিম্নরুচির, নিম্নচিন্তার এমন কনটেন্ট, কোনওভাবেই আগ্রহের কেন্দ্রে যেগুলির ঠঁাই পাওয়ার কথা নয়। তাহলে কেন এই কনটেন্টের উপর আলো এসে পড়ছে?
‘অক্সফোর্ড ডিকশনারি’-র এই বছরের ‘সেরা’ শব্দ মনোনীত হয়েছে ‘ব্রেন রট’। মস্তিষ্কের পচন। মানসিক অবক্ষয়ের সঙ্গে নিম্নমেধার অনলাইন কনটেন্ট অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করার যোগসূত্রটিকে চিনিয়ে দেওয়া হয়েছে এতদ্দ্বারা। এমন তো নয়, ইংরেজি ভাষার অভিধানে এই শব্দটি ছিল না কখনও। ১৮৫৪ সালে হেনরি ডেভিড থরু শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। এত দিন পরে সেটিকে ‘বর্ষসেরা’ শব্দের তকমা দেওয়ার কারণ, ২০২৩-’২৪ সময়সীমায় কথাটির ব্যবহার বেড়েছে ২৩০ শতাংশ। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতে যখন সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা চলছে, স্মার্টফোনের সঙ্গে ‘বিধিসম্মত সতর্কতা’ জারি করার কথা ভাবা হচ্ছে বাধ্যতামূলকভাবে, তখন ‘ব্রেন রট’-এর এহেন নির্বাচন আমাদের ভাবিত করে বইকি!