shono
Advertisement
Violence

ছোট্ট দর্শিতার প্রতিবাদ! হিংসার বিরুদ্ধে শিশুমনের চিত্রভাষার গর্জন

শিশুমন হিংসার চিত্রভাষার বিরুদ্ধে গড়ে তোলে প্রকৃত মূল্যবোধ।
Published By: Biswadip DeyPosted: 04:52 PM Feb 20, 2025Updated: 04:52 PM Feb 20, 2025

সিনেমায় নির্বোধ অথচ মনোরঞ্জক অ্যাকশনের যে-ধুম আমরা দেখি, তা মানুষের অন্তরের মর্ষকামিতার এক ধরনের প্রকাশ। আবার, শিশুমন হিংসার সেই চিত্রভাষার বিরুদ্ধে গড়ে তোলে প্রকৃত মূল্যবোধ। শিশুকন্যা দর্শিতা অপটু হাতে যে ছবি এঁকেছিল, একজন মহিলার গালে একটি হাত এসে পড়েছিল। হাতের মালিক হিসাবে পাশে অঁাকা ছিল একটি পুরুষের মুণ্ড। যা পুলিশের সামনে পৌঁছে দিয়েছে সত্যকে।

Advertisement

‘এক সময় আমাদের ভিতরে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল’– একটি পডকাস্টে বলছেন মার্কিন রাজনীতিক ও হলিউডের বিশ্ববিশ্রুত নায়ক আর্নল্ড শোয়ারজেনেগার– ‘কে বেশি অ্যাকশন করে, কে ভাল অ্যাকশন করে, কার অস্ত্র কত বেশি ভয়াল, কে কত মানুষ মারে, কে মানুষ মারতে পারে কত ক্রিয়েটিভলি– হাস্যকর!’ তিনি বলছেন যঁার সম্বন্ধে, তিনিও বিরাট মাপের সুপারস্টার– সিলভেস্টার স্ট্যালোন। এঁরা দু’জন সমসাময়িক, অভিনয় করেছেন দাপটে ও দাপিয়ে, হলিউডের অ্যাকশন সিনেমার বক্স অফিস এঁদের চওড়া কঁাধে নির্ভর করে সমৃদ্ধ হয়েছে।

যেটা বলে আর্নল্ড শোয়ারজেনেগার মজা পাচ্ছেন, এবং যেটা বলে আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতেও চাইছেন ভালো-মন্দর তফাত, তা হল, দু’জন সুপারস্টার নায়কের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে সিনেমার পর্দায় অকাতরে মানুষ মারার, ক্রিয়েটিভলি মানুষ মারার; আর নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডর ধারাবাহিকতায় দর্শকরা গলে-মজে যাচ্ছে, নায়কের বন্দনা করছে, টাকার ঝনাৎকারে ভরিয়ে দিচ্ছে প্রোডিউসারকে।

জেনে বা না-জেনে এই আর্বতে যে শোয়ারজেনেগার ও স্ট্যালোন উভয়েই জড়িয়ে পড়েছিলেন, তার ইঙ্গিত এই স্বীকারোক্তিতে বিদ্যমান। এখন, পরিণত বয়সে এসে, এই প্রবণতার সমালোচনা হয়তো করতে পারছেন আর্নল্ড। তবে ভুললে চলবে না, এত দিনে তিনি সক্রিয় অভিনয় থেকে সরে যেমন এসেছেন, তেমনই তঁার অভিনীত সেরা সিনেমায় কিন্তু ধরা রয়েছে মানুষ মারার সেই ভয়াবহতা।

সিনেমায় নির্বোধ অথচ মনোরঞ্জক অ্যাকশনের যে-ধুম আমরা দেখি, এ-তালিকায় অবশ্যই ‘অ্যানিমাল’-এর সিনেমাকেও রাখতে হবে, তা মানুষের অন্তরের মর্ষকামিতার এক ধরনের প্রকাশ। হানাহানি ও হিংসার সূত্রে যে-জিঘাংসা বেরিয়ে আসে, তার বসত তো আমাদেরই মনোজগতে। সিনেমার কাল্পনিক ক্যানভাসে যখন তার সিদ্ধি ঘটতে দেখি আমরা, কোথাও হয়তো তুষ্ট হয় আমাদেরই অহং ও আত্মশ্লাঘা। সেজন্য যে-নায়ক যত বেশি ভিলেন ঠ্যাঙাতে পারে, যত বেশি মৌলিক পন্থায় চালিয়ে যেতে পারে খুনোখুনির ন্যারেটিভ, তঁাদের প্রতি আমাদের মুগ্ধতার শেষ থাকে না। যদিও এর কুপ্রভাব সম্বন্ধে আমরা অবহিত। শিশু ও কিশোর মনে এই প্রবণতার কী মারাত্মক ছাপ পড়তে পারে, তা-ও আমাদের অজানা নয়। কিন্তু ‘অ্যাকশন’ ছবির ‘মার্কেট ভ্যালু’ এতে শিথিল হবে, ভাবার কারণ নেই।

এর বিপরীতে রয়েছে শিশুমনের সহজাত বোধশক্তি, যা হিংসা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রতিবাদী-কণ্ঠ রূপে ধ্বনিত হয়। সম্প্রতি, মায়ের খুনি যে বাবা, তা ধরিয়ে দিয়েছে শিশুকন্যা দর্শিতা। সে অপটু হাতে এঁকেছিল, একজন মহিলার গালে একটি হাত এসে পড়েছিল। সে-হাতের মালিক হিসাবে পাশে অঁাকা ছিল একটি পুরুষের মুণ্ড। এই ছবিটি হাতিয়ার করে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়, আর উদ্‌ঘাটিত হয় এই সত্য যে, ওই হাতের মালিক দর্শিতার বাবা, নিষ্ঠুরভাবে যে কিনা খুন করেছে স্ত্রীকে। বন্দুক-গুলি মনুষ্য কল্পনায় চিত্রভাষিক রূপে আবির্ভূত হয়ে হিংসার অনুষঙ্গ তৈরি করে। আবার, শিশুমন হিংসার সেই চিত্রভাষার বিরুদ্ধে গড়ে তোলে প্রকৃত মূল্যবোধ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • শিশুকন্যা দর্শিতা অপটু হাতে যে ছবি এঁকেছিল, একজন মহিলার গালে একটি হাত এসে পড়েছিল।
  • হাতের মালিক হিসাবে পাশে অঁাকা ছিল একটি পুরুষের মুণ্ড।
  • যা পুলিশের সামনে পৌঁছে দিয়েছে সত্যকে।
Advertisement