দেশবাসী যেখানে পাক-সন্ত্রাসবাদের সমূল উৎপাটন চায়, সেখানে নরেন্দ্র মোদির বারংবার নিষ্ক্রিয় হুংকার আদতে খেলো হয়ে যাচ্ছে না?
পহেলগাঁওয়ের হামলায় জড়িত প্রত্যেককে ‘কল্পনাতীত প্রত্যাঘাত’ করার হুমকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিলেও ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। সংসদে যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি রয়েছে তাঁদের নিয়ে কেন্দ্রের ডাকা বৈঠকটি এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। একই দিনে ভোটমুখী বিহারের মধুবনী থেকে পহেলগাঁও নিয়ে হুঙ্কার ছেড়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীদের খোঁচা, তাঁদের প্রশ্নের উত্তরগুলো নেই বলে কি মোদি বৈঠকমুখী হলেন না?
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পরেই কাঠগড়ায় কেন্দ্র। কারণ নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা-ব্যর্থতা যে এতগুলি প্রাণ চলে যাওয়ার মূলে, তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কাশ্মীরের সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণরেখা সাত লক্ষ সেনা ও নিরাপত্তারক্ষী পাহারা দেয়। কাশ্মীরের প্রতিটি রাস্তার
বাঁকে ইনসাস রাইফেলধারী নিরাপত্তা-কর্মীদের দেখা যায়। তাঁদের নজর এড়িয়ে জঙ্গিরা এত দূর ঢুকে পড়ল কীভাবে? এখন গরম পড়েছে, তাই সীমান্ত তুষারঢাকা– এই যুক্তিও ধোপে টিকছে না। সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে এসে জঙ্গিরা এত বড় অপারেশন করল, এর আগে তারা ঘটনাস্থলে বারবার রেকি করল, তবুও গোয়েন্দাদের কাছে কেন কোনও খবর থাকল না, তার জবাব মিলছে না।
‘মিনি সুইৎজারল্যান্ড’ হিসাবে পরিচিত পহেলগাঁওয়ের যে বৈসরন উপত্যকায় হামলা হল, সেখানে প্রতিদিন অন্তত হাজার দুয়েক মানুষের ভিড় হয়। অথচ সেই উপত্যকা কেন পুরোপুরি অরক্ষিত ছিল? এই প্রশ্নগুলি থেকে নজর ঘোরাতেই কি মোদির হুঙ্কার, প্রশ্ন তা নিয়েই। কারণ অতীতেও মোদি বড়াই করে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করতে পারেননি। পুলওয়ামা ও উরির হামলার পর পাকিস্তানে মোদি সরকার সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও এয়ার স্ট্রাইক করেছে। আরও একটি জঙ্গি-হামলার পর এই প্রশ্ন তোলা কি সংগত নয় যে, ওই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা এয়ার স্ট্রাইকের পরিণাম কী?
তখনও তো মোদি হুমকি দিয়েছিলেন, এমন শিক্ষা জঙ্গিদের দেওয়া হবে যে তারা আর কখনও মাথা তুলতে পারবে না। উরি হামলার পরে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিকাল স্ট্রাইকে বা পুলওয়ামার পর পাকিস্তানের বালাকোটের জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে এয়ার স্ট্রাইকে– জঙ্গিদের কতটা ক্ষতি করা গিয়েছে, তা নিয়ে সবসময় ধোঁয়াশা থেকেছে। সরকার এই প্রত্যাঘাত নিয়ে যতটা রাজনৈতিক প্রচার চালিয়েছে, ততটা লক্ষ্যপূরণে আদৌ সফল ছিল কি না, থেকে গিয়েছে সেই প্রশ্নও। ফলে আর-একটি প্রত্যাঘাতে মোদি পাকিস্তানকে কতখানি ধাক্কা দিতে সক্ষম হবেন তা নিয়ে সংশয় থাকছে। দেশবাসী চায়, চিরতরে জঙ্গি হামলা বন্ধ হোক। গরম গরম আস্ফালনে দেশবাসীর কোনও উদ্দেশ্যসাধিত হবে না। বারবার এই ধরনের নিষ্ফলা, নিষ্ক্রিয় আওয়াজ রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবেও ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে।