যে নারকীয় কাণ্ড ঘটে গেল পহেলগাঁওয়ে, তার উৎস ধর্মীয় বিদ্বেষ। কাশ্মীরে ধর্ম-তাড়িত জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্র? সমগ্র দেশ এই মুহূর্তে তাকিয়ে ভারত সরকারের উত্তরের দিকে!
এঁদের কারও মনে ছিল না ঈর্ষা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, ধর্মীয় নির্দেশ ও নির্মমতা। কলকাতার বৈষ্ণবঘাটার বিতান স্ত্রী সোহিনী আর তিন বছরের পুত্রকে নিয়ে গিয়েছিলেন বেড়াতে। হরিয়ানার সদ্যবিবাহিত ২৬ বছরের যুবক স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন মধুচন্দ্রিমায়। মঞ্জুনাথ আর পল্লবী গিয়েছিলেন দ্বিতীয় বর্ষের পিইউসি পরীক্ষায় পুত্র অভিজয়ের সাফল্য উদ্যাপন করতে। এঁরা এবং আরও অনেকে, সংখ্যায় প্রায় ৪০ জন, মঙ্গলবার দুপুরে ঘোড়ায় চড়া, পিকনিক, নিছক নিখাদ আনন্দের অন্বেষে ভূস্বর্গ কাশ্মীরের পহেলগঁাও থেকে ছ’-কিলোমিটার দূরে বৈসরণ উপত্যকায়। পাইন বনের ধারে। ছায়াঘন শান্ত পরিবেশে।
এক মহিলার বর্ণনায়, স্বামীর সঙ্গে গোলগাপ্পা খাচ্ছিলাম। পাইন গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল এক বন্দুকধারী। আমার স্বামীর নাম জিজ্ঞেস করল। তারপর আমার মাথায় দেখল সিঁদুর। ব্যস, বলল এদের ছাড়া যাবে না। আমার স্বামীর মাথা লক্ষ্য করে চালাল গুলি। এরপর পাইন বনে লুকিয়ে থাকা আরও পঁাচ-ছ’জন জঙ্গি বেরিয়ে এল চোখে-মুখে ভয়ংকর জান্তব হিংস্রতা নিয়ে। এবং প্রায় ৩০-৩২ জনকে মেরে ফেলে চলে গেল। রক্তে ভাসল বৈসরণ। পাইন বনের শান্তিময় ছায়া দেখল মানুষের ধর্মীয় বিদ্বেষ কোন মাত্রার মানবিকতাহীন হিংস্রতায় পৌঁছতে পারে। এর নাম কি কাশ্মীরের অবস্থার উন্নতি?
৩৭০ ধারা তুলে দিয়ে কাশ্মীরের শাসনভার এখন কেন্দ্রই তুলে নিয়েছে তার হাতে। কাশ্মীরকে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে গত ছ’-বছর নরেন্দ্র মোদি আর অমিত শাহরাই তো কাশ্মীর চালাচ্ছেন! মঙ্গলবারের ঘটনা প্রমাণ করল, ছ’-বছরের শাসন জঙ্গি-দমনে কতদূর ব্যর্থ হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি বেরিয়ে গিয়েছিলেন সৌদি আরব সফরে। এবং সেখান থেকেই টেলিফোনে অমিত সাহ-কে যা নির্দেশ ও পরামর্শ দেওয়ার দিয়েছিলেন। যদিও সৌদি আরব সফর কঁাটছঁাট করে বুধবার সকালেই ভারতে পৌঁছে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ইতিমধে্য পাকিস্তানের জঙ্গি দল ‘লস্কর-ই-তৈবা’ এই হত্যালীলার দায় সদম্ভে নিজেদের কঁাধে তুলে নিয়েছে। প্রতে্যকের ধর্মীয় পরিচয় জেনে বেছে বেছে ৫০ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে জঙ্গিরা। যঁারা মারা গিয়েছেন, তঁারা মূলত পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, ওড়িশা এবং কর্নাটকের বাসিন্দা। নেপালের হিন্দুকেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সন্দেহ নেই, জঙ্গিদের এই হত্যালীলা হিন্দু-বিরোধী। এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ যে এই হত্যালীলার উৎস, তাতে সন্দেহের অবকাশ আছে কি? প্রশ্ন হল, কাশ্মীরে ধর্ম-তাড়িত জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে কেন্দ্র এবার কতটা কঠোর ও প্রতিঘাতী হতে চাইবে? যে-ঘটনা বৈসরণ উপত্যকাকে নিরীহ মানুষের রক্তে ভাসাল, তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এই জঘন্য অপরাধ কি কেন্দ্রের সহনশক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানাবে না? সমগ্র দেশ এই মুহূর্তে তাকিয়ে ভারত সরকারের উত্তরের দিকে!