ভারত ও চিন সীমান্তে ‘এলএসি’ বরাবর সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত কীসের ইঙ্গিত? সম্পর্কে বরফ গলছে, না কি কৌশলগত পদক্ষেপ?
২০২০-র এপ্রিলের অবস্থানে ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা’ (এলএসি) পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারে ভারত ও চিনের মধ্যে সাম্প্রতিক চুক্তি অনুযায়ী পূর্ব লাদাখের সংঘাতপূর্ণ ডেমচোক এবং ডেপসাং পয়েন্ট থেকে দুই দেশ সেনা সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে। এই সেনা অপসারণ দুই দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এর আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এই চুক্তি কি সত্যিই দুই দেশের সম্পর্কে বরফ গলার ইঙ্গিত, না কি দুই দেশেরই নিজ-নিজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চাপের মুখে একটি অস্থায়ী ‘কৌশল’? কয়েক দশক ধরেই হিমালয় অঞ্চলে ৩,৪৪০ কিমি দীর্ঘ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখাটি ভারত ও চিনের বিবাদের কেন্দ্রে রয়েছে।
যদিও ১৯৯৬ সালের শান্তি চুক্তিতে বলা হয়েছিল যে, এলএসি-তে দুই দেশের বাহিনীর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র থাকবে না, তবে মাঝেমধ্যেই হিংসাত্মক সম্পর্ক এড়ানো যায়নি। তেমনই ঘটনা ঘটে ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায়। উভয়পক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল। পরবর্তী কালেও তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। ফলে পারস্পরিক অবিশ্বাস আরও বেড়েছে। উভয়পক্ষই এলএসি-র দুই প্রান্তে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করেছে। ফলে, কয়েক বছর ধরে সেখানে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক চুক্তিটি দুই পক্ষের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি করার জন্য একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, এই সমাধান আংশিক এবং অস্থায়ী। এলএসি বরাবর বৃহত্তর উদ্বেগের সমাধান এটি নয়। বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেছেন, যে কোনও বৃহত্তর কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতির জন্য এলএসি-তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তবে, দুই দেশই এখনও পর্যন্ত এটি স্পষ্ট করেনি যে, কীভাবে চুক্তিটি কার্যকর হবে।
ব্রিক্স সম্মেলনে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরিকল্পিত বৈঠকের ঠিক আগে এই চুক্তির কথা ঘোষণা করা হয়। ২০১৭ এবং ২০২০ সালেও দুই নেতার মধ্যে হাই-প্রোফাইল বৈঠকের আগে এমনই কিছু অস্থায়ী সমাধান উপস্থিত করা হয়েছিল। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, চিন পূর্বের চুক্তিগুলি প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং এলএসি-র কাছে ১ লাখ থেকে ১.২০ লাখ সৈন্য মোতায়েন করেছিল।
তবে, এই চুক্তির পিছনে দুই দেশেরই স্বার্থ জড়িত। ঠিক এই সময় কানাডা ইস্যুতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে মোদি সরকারের বিদেশনীতি। বিরোধীরা সরকারের সমালোচনা করে সুস্পষ্ট জবাব চেয়েছে। ফলে বিদেশনীতি নিয়ে বিরোধী ও দেশবাসীর আস্থা ফেরাতে চিনের সঙ্গে ‘চুক্তি’কে সম্বল করা হতে পারে।
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চিনকেও ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিতে বেজিংকে কিছু একটা পদক্ষেপ করতেই হত। এলএসি থেকে সেনা অপসারণ ও যৌথ টহলদারির পারস্পরিক সম্মতি তারই ফলশ্রুতি। আসলে এটি চিনের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যা সম্ভবত সীমান্ত সমস্যার ‘প্রকৃত’ সমাধানের চেয়ে শক্তি প্রমাণে বেশি সচেষ্ট।