বাংলায় ‘এসআইআর’ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। মুখে গোটা দেশের কথা বলা হলেও বাংলা ছাড়া অন্যত্র তৎপরতা শূন্য।
ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন তথা ‘এসআইআর’ (SIR)-কে ঘিরে ফের দেশের রাজনীতিতে একটা সংঘাতের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। এসঅাইঅার এর অাগেও একাধিকবার হয়েছে। কিন্তু কখনওই এই ধরনের অাবহ দেখা যায়নি। কেন্দ্র যেভাবে এসআইআরকে সামনে রেখে ভোটার তালিকায় হস্তক্ষেপের চক্রান্ত করছে তা এককথায় নজিরবিহীন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দে্যাপাধ্যায় অভিযোগ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্য সফরে এসে ঘরোয়া বৈঠকে সাফ বলে গিয়েছেন যে এসঅাইঅারের মাধ্যমে রাজে্যর ভোটার তালিকা থেকে বিপুল সংখ্যক নাম বাদ দেওয়া হবে। রাজ্য থেকে নির্বাচিত এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী খোলাখুলি বলছেন, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজে্যর ভোটার তালিকা থেকে এক কোটির উপর নাম বাদ পড়বে। এর অাগে একই কথা বলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতিও।
ভোটার তালিকা সংশোধনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এটি একটি সাংবিধানিক সংস্থা। সাংবিধানিক সংস্থার কাজে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করতে পারে না। যদি করে তাহলে তা একপ্রকার দেশের সংবিধানভঙ্গ। কোনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যখন প্রকাশে্য জানান যে এসঅাইঅারের মাধ্যমে রাজে্যর ভোটার তালিকা থেকে এক কোটির বেশি নাম বাদ পড়বে, তখন বোঝাই যায় যে নির্বাচন কমিশনের মতো স্বাধীন ও স্বশাসিত সংস্থা কতটা কেন্দ্রের অঙ্গুলি হেলনে পরিচালিত। বিহারের বিধানসভা ভোটের মুখে অাচমকা নির্বাচন কমিশন সে রাজে্য এসঅাইঅার হবে বলে ঘোষণা করে। বিহারে ভোটার তালিকার রুটিন সংশোধনের কাজ শেষ হয়েছিল। তারপর ভোটের মুখে হঠাৎই এসঅাইঅারের বিষয়টি সামনে অাসায় নির্বাচন কমিশনের অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্ন তোলে দেশের বিরোধী দলগুলি। বিষয়টি দেশের শীর্ষ অাদালতেও গড়ায়। বিহারে এসঅাইঅার শুরুর পর প্রথম ধাক্কাতেই ভোটার তালিকা থেকে ৬৫ লক্ষ নাম বাদ পড়ে। সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের পর চূড়ান্ত তালিকায় নাম বাদ পড়ার এই সংখ্যাটা কিছুটা কমলেও আদতে খুব একটাও কম নয়– ৪২ লক্ষ নাম বাদ পড়েছে। ১৪ নভেম্বর ভোটের ফল প্রকাশ হলে বোঝা যাবে এসঅাইঅারের মাধ্যমে ভোটের মুখে তালিকা থেকে ৪২ লক্ষ নাম বাদ পড়ার রাজনৈতিক তাৎপর্য কী। যাদের নাম বাদ পড়েছে তাদের সম্পর্কে জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
মহারাষ্ট্রে বিধানসভা ভোটের মুখে ভোটার তালিকায় ৩৯ লক্ষ নাম ঢুকেছিল। কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছিল, মহারাষ্ট্রে বিজেপির অপ্রত্যাশিত জয়ের পিছনে কাজ করেছে এই তালিকায় হঠাৎ ঢুকে যাওয়া ৩৯ লক্ষ ভোটারের নাম। বিহারের পর এবার বাংলায় এসঅাইঅার করার প্রস্তুতি শুরু করেছে কমিশন। মুখে যদিও বলা হচ্ছে গোটা দেশেই এবার এসঅাইঅার করা হবে, কিন্তু বাংলা ছাড়া অন্য কোনও রাজে্য নির্বাচন কমিশনের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। ইচ্ছামতো ভোটারের নাম তালিকায় ঢুকিয়ে বা বাদ দিয়ে ভোটের ফলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা গণতন্ত্রের পক্ষে একটি বিপজ্জনক প্রবণতা। নির্বাচন কমিশনের অারও দৃঢ় ও স্বাধীন অবস্থান জরুরি।
