সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় বিপর্যয় কোভিড। দুই ক্ষেত্রে ৭ কোটির বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে পৃথিবীজুড়ে। খারাপ স্বপ্নের চেয়েও ভয়ংকর সেই করোনোকাল যেন না ফেরে, এমনটাই চায় সকলে। যদিও ফের আতঙ্ক বাড়াচ্ছে চিন। সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়েছে কিছু ভিডিও। সেখানে দেখা গিয়েছে, চিনের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের মাত্রাছাড়া ভিড়। মুখে মাস্ক পরে চিন্তিত মুখে সঙ্গী রোগীর পরিবারের সদস্যেরা। জানা গিয়েছে, এই রোগীদের অধিকাংশই HMPV বা হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাসে আক্রান্ত। তাহলে কী ফিরতে চলেছে সেই আতঙ্কের দিন? কী লোকাচ্ছে চিন?
কোভিড-১৯ ছড়ানোর পাঁচ বছর পরে চিনে ফের নতুন ভাইরাসের সংক্রমণের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা বিশ্বে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ভারতেও উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বাড়ছে। ভাইরাল সংক্রমণের কথা স্বীকার করেছে বেজিং। যদিও চিনা সরকারের দাবি, চিন্তার কিছু নেই। পুরো বিষয়টিকে ‘শীতকালীন সংক্রমণ’ বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং-এর বক্তব্য, "শীতের মরসুমে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের প্রবণতা খুব বেশি।" এইসঙ্গে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, "সরকার চিনে আগত বিদেশিদের স্বাস্থ্য নিয়ে যত্নশীল।" আতঙ্ক অবশ্য এই বিবৃতিতে কমেনি। কারণ, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চিনে কোভিড শনাক্ত হলেও তা নিয়ে বড়সড় উদ্বেগের কথা বিশ্ববাসীকে জানায়নি বেজিং। বরং লোকানোর চেষ্টা হয়েছিল এর ভয়াবহতা। প্রশ্ন উঠছে, এবারের বিপদ কতখানি?
উদ্বেগের অন্যতম কারণ, কোভিডের শুরুর দিকের মতোই চিন প্রকাশ্যে আনছে না আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের মৌখিক আশ্বাস, ভাইরাস মারাত্মক কিছু নয়। সংক্রমণের হারও গত বছরের তুলনায় কম। যদিও হাসপাতালগুলিতে কেন উপচে পড়া ভিড়? তার সদুত্তর দিতে পারেননি মাও নিং। ঠিক এখানেই বাকি বিশ্বের উদ্বেগ। বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের দাবি, সেবার চিনের গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়েছিল করোনা ভাইরাস। উহান প্রদেশের ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিই ছিল শয়তানের বাসা। বিপজ্জনক ভাইরাসকে 'জৈব অস্ত্র' হিসেবে ব্যবহারই ছিল উদ্দেশ্য! এবারও কী তেমন কিছু ঘটাতেই বিপত্তি হল? আর সেই কারণেই লোকানো হচ্ছে তথ্য পরিসংখ্যান? তার চেয়ে বড় প্রশ্ন, এইচএমপিভি ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক?
এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ নতুন নয়। এই ভাইরাস প্রথমবার শনাক্ত হয়েছিল প্রায় দুই দশক আগে, ২০০১ সালে। নেদারল্যান্ডসের বিশেষজ্ঞেরা ২০০১ সালে শিশুদের শ্বাসযন্ত্রে প্রথম এই ভাইরাসের হদিশ পান বলে জানা গিয়েছে। এরপর ২৪ বছর কেটে গেলেও এই ভাইরাসের কোনও টিকা তৈরি হয়নি। আচমকা ভাইরাসটি বদলে যাওয়া রূপ নিলে, শক্তিশালী হয়ে উঠলে কোভিড আমলের মতোই রে রে রব উঠতে পারে। তখন কঠিন হবে সংক্রমণ মোকাবিলা করা। তবে সেরোলজিক্যাল গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, মেটানিউমোভাইরাস কমপক্ষে ৬০ বছর ধরে পৃথিবীর বুকে বিদ্যমান রয়েছে। সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের প্যাথোজেন হিসাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে। মূলত শীতকালে এর সংক্রমণ লক্ষ করা যায়।
ভারতীয় চিকিৎসকেরাও বিষয়টি নিয়ে এখনই মাথাব্যথার কিছু দেখছেন না। তারা বলছেন, মেটানিউমোভাইরাস নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। এটির সংক্রমণ কোভিডের মতো ছড়াবে, এমন ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। অন্যদিকে আশ্বস্ত করছে কেন্দ্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রকও। শনিবার এইচএমপিভি নিয়ে জয়েন্ট মনিটরিং গ্রুপের বৈঠক ডাকা হয় মন্ত্রকের তরফে। তারপরেই স্বাস্থ্যমন্ত্রক বিবৃতি জারি করে বলেছে, ”হু’ থেকে যা খবর মিলছে সেদিকে কড়া নজর রাখছেন আধিকারিকরা। আগামী দিনে কোনও বিপদ আসতে পারে কিনা, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে। চিনের পরিস্থিতি নিয়ে যথাসময়ে খবর দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে ‘হু’কে।’
মেটানিউমোভাইরাসের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, সর্দি এবং কাশি। খুব কম সংখ্যক রোগী নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হতে পারেন। এখনও পর্যন্ত মৃত্যুর হারও নগণ্য। তবে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। যদি কোনও সমস্যা দেখা দেয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেও বলা হয়েছে। অতএব, উদ্বেগ কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। কারণ, আমেরিকার বেসরকারি সংস্থা ‘ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’ জানিয়েছে, মেটানিউমোভাইরাসের চিকিৎসা হয় এমন কোনও ‘অ্যান্টিভাইরাল’ ওষুধ বাজারে নেই। তাহলে?