shono
Advertisement
Firecracker

নির্দেশ উপেক্ষা, মানুষ শব্দ এবং বারুদের গন্ধে আনন্দ পায় কেন?

উৎসব হয়ে উঠল শব্দের সন্ত্রাস।
Published By: Kishore GhoshPosted: 09:38 PM Oct 22, 2025Updated: 09:48 PM Oct 22, 2025

নির্দেশ লঙ্ঘন করে কালীপুজোর রাতে বাংলাজুড়ে ফের তাণ্ডব চালাল নিষিদ্ধ শব্দবাজি। কেন কিছু মানুষ শব্দ এবং বারুদের গন্ধে আনন্দ পায়?

Advertisement

জারি ছিল আদালতের নিষেধ ও নির্দেশ। জাগ্রত থাকার কথা ছিল পুলিশি নজরদারির ও সতর্কতার। প্রতিশ্রুতি ছিল ‘নিষিদ্ধ’ বাজি ফাটালে প্রাপনীয় দণ্ডের। নির্দেশ, নিষেধ, নজরদারি এবং কড়া শাস্তির বৃত্তের মধে‌্য বাজির উৎসবকে যে-পরিসরটুকু দেওয়া হয়েছিল, তা হল সন্ধে ৮টা থেকে রাত ১০টা কালীপুজোর রাত্রে। এবং দু’-ঘণ্টার এই পরিসরে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র ‘সবুজ বাজি’ ফাটানোর। কিন্তু কালীপুজোর রাত্রে কী অভিজ্ঞতা শহর কলকাতার? সমগ্র বাংলার শহরে, গ্রামে?

এককথায়, সমস্ত নির্দেশ লঙ্ঘন করে, সব নজরদারির সামনেই, কিছু মানুষ প্রবল নিষিদ্ধ শব্দমাত্রায় পৌঁছনোকেই যেন করে ফেলল কালীপুজোর রাতজুড়ে তাণ্ডবের অঙ্গ। উৎসব হয়ে উঠল শব্দের সন্ত্রাস। হয়তো বাংলার অধিকাংশ মানুষই চায় শান্তি, চায় উৎসবের মধে‌্যও সহনীয় শব্দ ও কোলাহলের মাধুর্য। কিন্তু কিছু মানুষ তাদের স্বভাব-নিহিত বর্বরতা বা সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক দাপট থেকে মনে করে মাত্রাহীন শব্দের দূষণ ও ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়ার মধে‌্যই শুধু প্রকাশিত হতে পারে শক্তি ও আধিপতে‌্যর হুংকার। কী এসে যায়, কিছু প্রবীণ বা রুগ্‌ণ মানুষ কষ্ট পেলে? শিশুরা অঁাতকে উঠলে? শহরের অন‌্যান‌্য প্রাণী ভয়ে নিদ্রাহীন রাত কাটালে? যারা এভাবে ভাবতে পেরেছে, তাদের কালীপুজো সার্থক হয়েছে। মাত্রাহীন শব্দের রমরমায় সারা বাংলা কেঁপেছে। সে কি কম কথা?

যে-বিষ ছড়িয়েছে একরাতে বাংলার বাতাসে, তাতে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আতঙ্কিত। কিন্তু এই দূষণ যে কিছু মানুষকে আনন্দ দিয়েছে, তাতেও তো সন্দেহ নেই। হয়তো মনোবিদরা বলতে পারবেন কেন কিছু মানুষ মাত্রাহীন শব্দ এবং বারুদের গন্ধে আনন্দ পায়। কেন তারা উৎসবের নামে পাড়ার ছাদ, রাস্তা, গেরস্তর উঠোনকে বানাতে চায় যুদ্ধক্ষেত্র? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো কোনও ভারতীয় ফ্রয়েডের কাছে পাওয়া যাবে কোনও দিন!

আরও একটি সত‌্য সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে উন্মোচিত। বহুতল আবাসনগুলো নাকি ক্রমশ হয়ে উঠেছে নিষিদ্ধ বাজির ‘হটস্পট’! শব্দসন্ত্রাসেই কি এসব অাবাসনের আধিপত‌্য ও অস্মিতার উচ্চারণ? এই প্রশ্নের শিকড়েও হয়তো ভারতীয় মনোবিদদের এষণা একদিন পৌঁছবে!

শব্দসন্ত্রাসের এই নিনাদের প্রেক্ষিতে কারও হয়তো মনে পড়তে পারে নৈঃশব্দ‌্য প্রসঙ্গে কিছু ধ্রুপদী ভাবনা ও গ্রন্থের কথা। যেমন, জন কেজের লেখা ‘সাইলেন্স’। এই বই তার বুকে ধারণ করছে কয়েকটি ভাষণ। প্রতিটি ভাষণের বিষয় নীরবতা। জন কেজ কখনও বুঝিয়ে বলছেন, নীরবতার কাছে মানুষের মন ও জীবন কত গভীরভাবে নিরন্তর ঋণী, কেন তা আমরা সহজে বুঝতে পারি না। আবার কোনও ভাষণে তিনি প্রকাশ করছেন জীবনে নীরবতার তাৎপর্য ও মাধুর্য। আরও একটি অনন‌্য বইয়ের উল্লেখ না করলেই নয়– জেমস্‌ ক্রাউডেনের ‘দ‌্য ফ্রোজেন রিভার’। হিমালয়ের কাছে ভারত যুগে যুগে কীভাবে শিখেছে নৈঃশব্দে‌্যর মূল‌্য, সেটাই এই গ্রন্থের অন্তরবার্তা। একটাই প্রশ্ন জাগে মনে, দীপাবলির উৎসবে এই ভারত কি হারিয়ে যায়?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • যে-বিষ ছড়িয়েছে একরাতে বাংলার বাতাসে, তাতে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা আতঙ্কিত।
  • আরও একটি সত‌্য সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে উন্মোচিত।
Advertisement