পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে ‘নো- হ্যান্ডশেক’ পন্থায় গেল ভারতীয় দল। প্রমাণিত, কোনও খেলাই জীবনের জ্বলন ও আবেগ থেকে দূরে নয়।
হালের হ্যামলেটের মনে দেশজুড়ে এই মুহূর্তে একটি সংশয়: ‘টু শেক হ্যান্ডস্ অর নট টু শেক হ্যান্ডস্।’ ক্রিকেট খেলার আচরণবিধি অনুসারে খেলার প্রারম্ভে ও শেষে দু’টি দলের মধ্যে করমর্দন এমন এক অলিখিত প্রথা, যার চলন এই খেলার আদিকাল থেকে। কিন্তু গত রবিবার দুবাইয়ে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচে খেলার শুরু এবং শেষে করমর্দন সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। খেলার টস্ হওয়ার আগেই রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট দু’-দলের ক্যাপ্টেনকেই বলে দেন, হ্যান্ডশেক থেকে বিরত থাকতে। ম্যাচ-শেষে ছক্কা মেরে ভারতকে জিতিয়ে সূর্যকুমার সঙ্গী শিবমকে নিয়ে সোজা ড্রেসিংরুমে চলে যান এবং দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এহেন আকস্মিক ও দ্রুত প্রস্থানের মধ্যে হ্যান্ডশেকের কোনও পরিসরই ছিল না।
ভারতীয় ক্রিকেটারদের এই আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তান। মহসিন নকভি, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট, আইসিসি-কে চিঠি লিখে অবিলম্বে রেফারি পাইক্রফ্টের অপসারণ দাবি করেছেন। চিঠিতে নকভি জানিয়েছেন, টস হওয়ার আগে রেফারি, পাকিস্তানের ক্যাপ্টেন সলমন আগাকে জানান, টসের সময় নো হ্যান্ডশেক। হ্যান্ডশেক না-হওয়ার কারণও জানানো হয়, ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর ভারতীয় বোর্ড এই নীতি নিয়েছে। নো-হ্যান্ডশেকের প্রতিবাদে পুরস্কার-বিতরণী অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের ক্যাপ্টেন সলমন আগা।
ভারতের নো-হ্যান্ডশেক, পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও রকম করমর্দন নয়– এই আচরণের নেপথ্যে জাতীয় বেদনা, দহন ও অবমাননা প্রোজ্জ্বল। এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে গৌতম গম্ভীরের। ম্যাচের আগে তিনি ক্রিকেটারদের বলে দেন, পহেলগঁাওয়ে কী হয়েছে ভুলো না। হ্যান্ডশেক করবে না। কথা বলারও দরকার নেই। স্রেফ খেলো। এবং ভারতকে জেতাও।
ম্যাচ শেষ হল। ভারত জিতল। গম্ভীর সরকারিভাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীকে কৃতজ্ঞতা জানালেন। সূর্যকুমার হ্যান্ডশেক না-করার কারণ ব্যাখ্যা করলেন অকপটে, জীবনে কিছু ব্যাপার আছে যা স্পোর্টসম্যানশিপের উপরে। আমরা পহেলগঁাওয়ের ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সঙ্গে আছি। এই জয় অপারেশন সিঁদুরে অংশ নেওয়া সেনাবাহিনীকে উৎসর্গীকৃত।
সন্দেহ নেই ক্রিকেট খেলার মাঠে নেমে এসেছে রাজনীতি। অনিবার্য এই অনুপ্রবেশ ও আবেগ। স্বাভাবিকভাবেই সমগ্র ভারত আছে এই ‘নো হ্যান্ডশেক’ সিদ্ধান্তের নেপথ্যে। ইউক্রেনের উপরে রাশিয়ার আক্রমণের প্রতিবাদে ২০২২ সালে টেনিস তারকা এলিনা স্বিৎতোলিনা স্থিত হয়েছিলেন এই সিদ্ধান্তে, তিনি রুশ বা বেলারুশের প্রতিদ্বন্ধীদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করবেন না। প্রমাণিত, কোনও খেলাই জীবনের জ্বলন ও আবেগ থেকে দূরে নয়। আর, অরাজনৈতিকভাবে বলতে কিছুই হয় না। ক্রিকেটই-বা কেন ব্যতিক্রম হবে!
