ইজরায়েল দখলনীতি ত্যাগ করেনি। হামাস নিরস্ত্রীকরণ বা ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে এখনও নীরব। তাহলে শান্তি প্রক্রিয়া তো সাময়িক!
দু’-বছরের রক্তাক্ত সংঘর্ষের পর অবশেষে থেমেছে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, হামাস তাদের হাতে থাকা ‘জীবিত’ বন্দিদের মুক্তি দেবে এবং মৃতদেহগুলিও ধাপে-ধাপে হস্তান্তর করা হবে। অন্যদিকে, ইজরায়েলি সেনাবাহিনী রাফা থেকে গাজা শহর পর্যন্ত প্রাথমিক সীমান্তরেখায় ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রায়
২ হাজার প্যালেস্তিনীয় বন্দি মুক্তি পাচ্ছে। তবে যুদ্ধবিরতি মানেই স্থায়ী শান্তি নয়, এ-কথা ইতিহাস বহুবার প্রমাণ করেছে। গত দুই বছরে ইজরায়েল যে-নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে, তা শুধুই যুদ্ধের পরিসংখ্যান নয়, তা এক মানবিক বিপর্যয়ের চিত্রও। গাজার অধিকাংশ এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, প্রায় ২৩ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত।
রাষ্ট্র সংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি একে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও ইজরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্য হল– হামাসকে ‘সম্পূর্ণ নির্মূল করা’। যা এখনও পুরণ হয়নি। হামাস রয়ে গিয়েছে, এবং তাদের অস্তিত্বই ভবিষ্যতের স্থায়ী শান্তির পথে অন্যতম অন্তরায়। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে, গাজাকে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে, এবং একটি আন্তর্জাতিক শান্তি বাহিনী সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে। হামাস যদিও বন্দিদের মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে, কিন্তু নিরস্ত্রীকরণ বা ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে তারা এখনও নীরব। অন্যদিকে, ইজরায়েলি সেনাবাহিনী এখনও গাজার প্রায় ৫৩ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখবে, যা কার্যত একধরনের আধা-দখলদারি। এমন পরিস্থিতিতে একে কীভাবে ‘স্থায়ী শান্তির সূচনা’ বলা যায়?
স্থায়ী শান্তির মূল অন্তরায় দু’টি। প্রথমত, ‘রাজনৈতিক অনাস্থা’– হামাসকে কেবল একটি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে দেখে ইজরায়েল, যাদের সঙ্গে আলোচনাই অর্থহীন বলে মনে করে। অন্যদিকে, হামাসের কাছে ইজরায়েল একটি দখলদার রাষ্ট্র, যার সঙ্গে আপস মানে আত্মসমর্পণ। দ্বিতীয়ত, ‘আন্তর্জাতিক দ্বিচারিতা’– আমেরিকা ও তার পশ্চিমি মিত্ররা বারবার ‘মধ্যস্থতাকারী’-র ভূমিকা দাবি করলেও, বাস্তবে তারা একতরফাভাবে ইজরায়েলের নিরাপত্তা স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেয়। ফলে, আলোচনার টেবিল কখনও সমান থাকে না।
স্থায়ী শান্তির জন্য প্রয়োজন সমতার ভিত্তিতে রাজনৈতিক স্বীকৃতি, যেখানে ইজরায়েলের নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনই প্যালেস্তিনীদেরও নিজের ভূমি, সরকার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা থাকবে। গাজায় আন্তর্জাতিক শান্তি বাহিনী বা তত্ত্বাবধান সাময়িক স্থিতি আনতে পারে, কিন্তু তা স্থায়ী সমাধান নয়। যতদিন না ইজরায়েল দখলনীতি ত্যাগ করছে এবং প্যালেস্তিনীয় নেতৃত্ব তাদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন কাটিয়ে একক অবস্থান নিচ্ছে, ততদিন শান্তির কোনও স্থায়ী ভিত্তি তৈরি হবে না। এখনকার এই যুদ্ধবিরতি হয়তো এক ক্ষণিক স্বস্তি, কিন্তু শান্তির আসল যাত্রাপথ এখনও অনেক দূরের।
