shono
Advertisement
Kumbh Mela

যোগীরাজ্যে পুণ্যস্নানের সুযোগ জেলবন্দিদের, অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও এমন ব্যবস্থা থাকবে তো?

পাপীদের পাপ ধুতে-ধুতে যে গঙ্গা মলিন হয়ে গেল, সেই মালিন্য কীভাবে শোধিত হবে, উঠছে প্রশ্ন।
Published By: Biswadip DeyPosted: 02:54 PM Feb 21, 2025Updated: 02:54 PM Feb 21, 2025

জেলবন্দিদের কুম্ভস্নানের পুণ্যার্জনের সুযোগ যোগী সরকারের। ধর্মীয় আচার পালন সমস্ত নাগরিকের মৌলিক অধিকার। বন্দিদশাতেও সেই নিয়ম প্রযোজ‌্য। কারাগারে সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু অন‌্য ধর্মাবলম্বীদের জন‌্যও সমদর্শী ব‌্যবস্থা থাকবে তো ভবিষ‌্যতে?

Advertisement

বিভিন্ন ছোট-বড় অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেই ঠঁাই হয় জেলে। যা এখন ‘সংশোধনাগার’ বলে চিহ্নিত। কারও সাজা কয়েক মাস তো কারও ১৪ বছর দীর্ঘ যাবজ্জীবন। সমাজ-পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপরাধীদের নতুন জগৎ হয়ে ওঠে এই কারাগারের চার দেওয়াল। ফলে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক-গান, ফুটবল-ক্রিকেট টিম তৈরি করে তাদের আচরণ শুধরে ভবিষ্যতে মূলস্রোতে মিশে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। জেলে সাজা খাটতে হয়, সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডের বিধি অনুসারে। কিন্তু অতীত অপরাধের পাপস্খালনের সেখানে ব্যবস্থা নেই। সম্ভবও নয়। ‘ভালো’ আচরণের জন্য মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে মুক্তি মেলে কখনও কখনও। কিন্তু পাপমুক্তি ঘটল, বলা যায় কি?

এখন প্রবল ঢক্কানিনাদে প্রয়াগে মহাকুম্ভ চলছে। দেশ-বিদেশের কোটি-কোটি মানুষ ছুটছে সঙ্গমে ডুব দিতে। কিন্তু কয়েদিদের সামনে সে সুযোগ নেই। তারা চার দেওয়ালের অন্তরালে বন্দি। তাহলে উপায়? এই যে অকাতরে পুণ্য অর্জনের ব্যবস্থা করেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার, তা কি বিফলে যাবে? তা তো হতে দেওয়া যায় না। তাই উত্তরপ্রদেশের কারামন্ত্রী ব্যবস্থা করেছেন, সঙ্গমের পবিত্র জল পৌঁছে দেওয়া হবে সে-রাজ্যের ৭৫টি জেলে। ইতিমধ্যে উন্নাও জেলে এই পবিত্র কর্ম সম্পাদিত হয়েছে।

ছিদ্রান্বেষী মস্তিষ্কে কিছু প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এক, ধর্মীয় আচার পালন সমস্ত নাগরিকের মৌলিক অধিকার। বন্দিদশাতেও সেই নিয়ম প্রযোজ‌্য। কারাগারে সেই ব্যবস্থাও রয়েছে। সুতরাং যোগী সরকারের তরফে নিয়মনিষ্ঠা মেনে মহাকুম্ভের জলে স্নান করে কারাবন্দিদের পাপমুক্তির সুযোগ করে দেওয়া নিয়ে বিতর্কের কোনও জায়গা নেই। কিন্তু জেলে তো শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বী নেই, অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বন্দিও রয়েছে। তাদের জন্য কি অন্যান্য ধর্মস্থানের পুণ্য-বস্তু সরবরাহ করা হবে? না কি ‘সংখ্যালঘু’ বলে তাদের কথা ধর্তব্যের মধ্যে আসবে না?

যদি তা-ই হয়, তাহলে কারা কর্তৃপক্ষের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সরকার কি এই বৈষম্য করতে পারে? দুই, ১৪৪ বছর পর মহাকুম্ভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, ঠিক-ই। কিন্তু প্রতি তিন বছর অন্তর কুম্ভমেলা, ছ’-বছর অন্তর অর্ধকুম্ভ এবং বারো বছর অন্তর পূর্ণ কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানে কি ডুব দিলে আদৌ পাপক্ষয় হয় না? না কি মহাকুম্ভের দাওয়াই মানে পাপমুক্তি গ‌্যারিন্টিড? মাঝে দেড় বছর বাদ দিলে ২০২৭ সালে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোট। তাই এখন থেকেই কি হিন্দুত্বের পালে বাতাস লাগানোর চেষ্টা? যার অন্যতম হাতিয়ার মহাকুম্ভ নিয়ে এমন মাতামাতি! তিন, সঙ্গমের পবিত্র জলে স্নান করলে পাপক্ষয় হবে, অতীত দুষ্কর্ম থেকে নিষ্কৃতি মিলবে, জানিয়েছেন কারামন্ত্রী। তাহলে তো যারা স্নান করল, তাদের মুক্তি দেওয়াই যায়। মেনে নিতে হবে, তারা এখন নিষ্পাপ, অপাপবিদ্ধ। এতে সরকারের খরচও কমে। আদালতের সময় সাশ্রয় হয়। কিন্তু পাপীদের পাপ ধুতে-ধুতে যে-গঙ্গা মলিন হয়ে গেল, সেই মালিন্য কীভাবে শোধিত হবে, সেদিকেও যোগী সরকারের নেকনজর পড়লে মঙ্গল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • জেলবন্দিদের কুম্ভস্নানের পুণ্যার্জনের সুযোগ যোগী সরকারের।
  • ধর্মীয় আচার পালন সমস্ত নাগরিকের মৌলিক অধিকার। বন্দিদশাতেও সেই নিয়ম প্রযোজ‌্য।
  • কিন্তু অন‌্য ধর্মাবলম্বীদের জন‌্যও সমদর্শী ব‌্যবস্থা থাকবে তো ভবিষ‌্যতে?
Advertisement