প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি পেলেও, জলবায়ু প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ তুলনায় কম কেন? ‘ন্যাটো’ গুরুত্ব না দিলে বিপদ আসন্ন। জলবায়ু সংকটের মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এই সময়ে দঁাড়িয়ে অত্যন্ত জরুরি বিষয়। তা দেশ ও দশের জন্য মঙ্গলজনক।
সদ্য পেরিয়ে আসা ২০২৪ সালটিতে দু’টি ক্ষেত্রে আর্থিক ব্যয়বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি মানবতার দ্বৈত সংকটকে চিহ্নিত করে। একদিকে, ‘ন্যাটো’র ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার প্রতিরক্ষা বাজেট যেমন ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার ফল, তেমনই জলবায়ুর ক্ষেত্রে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত বিপর্যয় মোকাবিলায় একটি জরুরি ও স্বাভাবিক চাহিদা।
প্রাথমিকভাবে, এসব প্রতিশ্রুতিকে আপাত সমাধান বলে মনে হলেও এটি গভীর দ্বিধাদ্বন্দ্বমূলক বিষয়। কারণ তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা, না দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব– কোনটিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে? ন্যাটো অবশ্য প্রতিরক্ষা ব্যয়ের সমর্থনে বলছে, সামরিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি কোনও ‘পছন্দ’ নয়, বরং প্রয়োজনীয়তা। এটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের পুনরুত্থান, আঞ্চলিক বিরোধ, এবং বর্তমান সংঘাত– বিশেষ করে রুশ-ইউক্রেনের যুদ্ধ– বিশ্ব শান্তির ভঙ্গুর প্রকৃতির উপর জোর দিয়েছে। ন্যাটো বর্ধিত সামরিক ব্যয়কে সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে। নিরাপত্তায় ব্যয় হল সেই ভিত্তি, যার উপর স্থিতিশীলতা, শাসন এবং উন্নয়ন নির্মিত হয়। এজন্য বলা হয়, যুদ্ধের বিশৃঙ্খলা জলবায়ু সংকট মোকাবিলার প্রচেষ্টা-সহ অন্য সামাজিক অগ্রগতিকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। তাই নিরাপত্তা প্রথম, অন্যান্য দ্বিতীয়।
প্রতিরক্ষা বাজেট দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও, জলবায়ু প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দর প্রতিশ্রুতি প্রায়ই ক্ষীণ হয়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তন এখন বাস্তবিক সমস্যা। ধ্বংসাত্মক বন্যা, খরা এবং সুপার সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় যার ফল। এতে মানুযের জীবন যেমন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনই অর্থনৈতিক অগ্রগতিও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। পর্যাপ্ত অর্থের অভাব লক্ষ-লক্ষ মানুষকে দারিদ্রর দিকে ঠেলে দেয়। তাই অধিক পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ এই কারণেই জরুরি। প্রশ্ন জাগে, যুদ্ধের প্রয়োজনে সম্পদ যদি দ্রুত ব্যবহার করা যায়, তাহলে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় একই অগ্রাধিকার কেন অনুপস্থিত?
কারণ যুদ্ধের সম্ভাব্য বিপদ যেমন সভ্যতাকে বিপন্ন করে, তেমনই জলবায়ু পরিবর্তন নিছক পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটি একটি উপাদান, যা আবার ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বৃদ্ধি করে। উল্টোদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণগুলিকে মোকাবিলা না-করে অনিয়ন্ত্রিত সামরিকীকরণ আসলে একটি অদূরদর্শী কৌশল, যা অনিবার্য সংকটকে অবহেলা করা হচ্ছে বলে মনে হয়। প্রয়োজন একটি সামগ্রিক পদ্ধতির, যা অগ্রাধিকারগুলিকে একত্র করবে।
পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, সবুজ প্রযুক্তি এবং জলবায়ু অভিযোজনে বিনিয়োগ শান্তি বিনির্মাণের উপকরণ হিসাবে কাজ করতে পারে। সেই সঙ্গে পারে সম্পদের বৈষম্য হ্রাস করতে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে। জলবায়ু রক্ষা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার স্তম্ভ হিসাবে স্বীকৃত হওয়া আবশ্যক। জলবায়ু সংকটের মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এই সময়ে দঁাড়িয়ে অত্যন্ত জরুরি বিষয়। তা দেশ ও দশের জন্য মঙ্গলজনক। যে-পথই নির্বাচন করা হোক, তা নির্ধারণ করবে– মানবতার সর্বশ্রেষ্ঠ চ্যালেঞ্জগুলি গ্রহণ করা হবে, না কি অনতিক্রম্য বিভাজনই আমাদের ভবিতব্য।