আদানি গোষ্ঠীর থেকে যে-আমলারা ২,২০০ কোটি টাকা নিলেন, সেই ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত কই?
সৌর বিদু্যতের বরাত পাওয়ার জন্য অাদানি গোষ্ঠী ২,২০০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছে বলে অভিযোগ। কয়েকটি রাজে্যর অামলারা নাকি এই ঘুষের টাকা পেয়েছেন। ভারতের ইতিহাসে কখনও এত বড় উৎকোচ-অঙ্ক শোনা যায়নি। অামেরিকার শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ সে-দেশের প্রতারণা প্রতিরোধ সংক্রান্ত অাইন ভাঙার জন্য অাদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। নিউ ইয়র্ক অাদালতের বিচার বিভাগীয় দপ্তর ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছে। সে-দেশের আদালত অাদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম অাদানির বিরুদ্ধে জারি করেছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। ভারতের কাছে তারা গৌতম অাদানির প্রত্যার্পণও চেয়েছে।
অাদানি গোষ্ঠী এই বদনাম মিথে্য প্রতিপন্ন করে বিষয়টি এড়ানোর চেষ্টায়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অভিযোগ ঘিরে সরব দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল। এমনকী কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির মুখপাত্রও অভিযোগটি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেওয়ার রাস্তায় হঁাটতে পারেননি। যে-রাজ্যগুলিকে অাদানি গোষ্ঠী বরাত পাওয়ার জন্য ঘুষ দিয়েছে বলে অভিযোগ, সেগুলি অ-বিজেপি দল শাসিত জানিয়ে পাল্টা অাক্রমণের রাস্তার হঁাটার চেষ্টা করেছেন বিজেপির মুখপাত্র। অর্থাৎ, অাদানি গোষ্ঠী যে বরাত পাওয়ার জন্য ঘুষ দিয়েছিল তা প্রকারান্তরে মেনে নিচ্ছে বিজেপিও। অাদানিরা যে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অতি ঘনিষ্ঠ তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। ফলে বিজেপি মুখপাত্রর ঘুষ দিয়ে বরাত পাওয়ার অভিযোগটি মেনে নেওয়া সার্বিকভাবে মার্কিন অাদালতে ওঠা অভিযোগকেই মান্যতা দিচ্ছে।
‘বোফর্স দুর্নীতি’-র ক্ষেত্রেও ঘুষ দিয়ে বরাত পাওয়ার অভিযোগ ছিল। তাতে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল দেশ। রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন ঘটেছিল কার্যত এই বোফর্স ঘুষ-সংক্রান্ত অভিযোগের জেরেই। কিন্তু সেখানেও ঘুষের অঙ্কটা ছিল মাত্র ৬৪ কোটি টাকা– আর যা-ই হোক, ২,২০০ কোটি টাকার তুলনায় তা কিছুই নয় বলা চলে।
নির্বাচনে এক-একটি রাজনৈতিক দলের বিপুল খরচ হয়। তারা শিল্পপতিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের খরচ চালায়। সেখানে তা-ও ঘুষ নেওয়ার একটা সাফাই থাকে। কিন্তু অামলাদের হাজার-হাজার কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া কোন ভবিষ্যত ও অশনীর ইঙ্গিত দিচ্ছে? এই বিপুল পরিমাণ ঘুষের টাকা দুর্নীতিগ্রস্ত অামলারা কোথায় রাখেন এবং কীভাবেই-বা তা খরচ করেন তা একাধিক প্রশ্নের উদ্রেক করে।
অাদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যদি মার্কিন অাদালতে প্রমাণিত হয়– তাহলে অাদানিদের বিপদ বাড়তে পারে। অভিযোগ ওঠার সঙ্গে-সঙ্গেই তাদের যথেষ্ট বিপাকে পড়তে হয়েছে। তবে আশ্চর্যজনক বিষয়, যে-অামলারা এই বিপুল অঙ্কের টাকা ঘুষ নিলেন, তঁাদের বিরুদ্ধে কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা এখনও শোনা যাচ্ছে না। এমনকী, কোনও দাবিও উঠছে না। অাদানি গোষ্ঠীকে ‘শিক্ষা’ দিতে গিয়ে কি এই ঘুষখোর অামলাদের ছেড়ে দেওয়া হবে? মূল অপরাধী তো তঁারা-ই!