shono
Advertisement
Monday blues

ফিরে আসে 'মন্ডে ব্লুজ', সত্যিই কি অপ্রীতিকর সোমবার?

বিষাদগ্রস্ত সোমবারের আলোকিত পাঠ!
Published By: Monishankar ChoudhuryPosted: 08:00 AM Jun 09, 2025Updated: 08:27 AM Jun 09, 2025

প্রতি মুহূর্তে আমরা 'আগামী' নিয়ে এতটাই বিচলিত থাকি যে, নিমেষেই হাতের নাগালের বাইরে শেষ হয়ে যায় বেঁচে থাকার 'বর্তমান' অনুভূতি। এভাবে জীবনের সৌন্দর্যটুকু বিস্মৃত হই আমরা! ‘মন্ডে ব্লুজ’ আসলে আমাদের প্রত্যেকের ভেতরের এই ভয় আর উদ্বেগেরই রাক্ষসছায়া। লিখছেন বুদ্ধদেব হালদার।

Advertisement

আমেরিকান ফোক রকব্যান্ড 'দ্য মামাস অ্যান্ড দ্য পাপাস'-এর সেই বিখ্যাত গানটি মনে পড়ে? গানটির প্রতিটি শব্দ যেন নতুন বেদনার সুরতরঙ্গ। ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই গান একসময় হয়ে উঠেছিল সেরা ইউএস হিট। কী ছিল এই গানটিতে? গীতিকার জন ফিলিপস এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, মাত্র কুড়ি মিনিটের মধ্যে তিনি এই গান লিখেছিলেন। হৃদয়ভঙ্গ ও সোমবারের সঙ্গে জড়িত হতাশা, অবিশ্বাসের এক অদ্ভুত অনুভূতির আখ্যান এই সঙ্গীত। গানের লিরিক্স অনুযায়ী, গায়ক সোমবারকে ভীষণ ভাবে অপছন্দ করেন। কারণ এই দিনেই তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ভালবাসার মানুষটি তাঁকে ছেড়ে চলে যায়। "Oh Monday mornin', you gave me no warnin' of what was to be." গানের এই পঙক্তি থেকে বোঝা যায়, কোনও পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই সোমবার সকালে এমন কিছু ঘটেছিল, যা গায়কের জীবন পালটে ফেলেছিল মুহূর্তেই।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও এই ঘটনার ছায়া দেখা যায়। সোমবারের সকাল প্রায়শই এক অদৃশ্য মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছে আজকাল। একদিকে সপ্তাহান্তের ছুটি শেষ হওয়ার বিষাদ, অন্যদিকে নতুন কর্মসপ্তাহের শুরুয়াত। এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই জন্ম নেয় তথাকথিত ‘মন্ডে ব্লুজ’। কিন্তু সত্যিই কি 'সোমবার' আমাদের জন্য অপ্রীতিকর? নাকি আমাদের নিয়মানুগ মনই এভাবে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে? আসলে এই 'ব্লুজ' নিছক কোনও আলস্য নয়। বরং আমাদের ভিতরের সূক্ষ্ম অনুভূতির এক জটিল প্রকাশ। কর্মজীবনের একঘেয়েমি, লক্ষ্যহীনতার হতাশা, কিংবা ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা– এসবই যেন সোমবারের সকালে প্রকট হয়ে ওঠে। তাই আমরা প্রত্যেকেই এই দিনটিকে কেবল কর্মভারের নিক্তিতে মাপতেই অভ্যস্ত।

অথচ চাইলেই ব্যাপারটাকে অন্যরকম ভাবে চিন্তা করতে পারি। মেল গিবসন বলেছিলেন, "It's a wise man who understands that every day is a new beginning, because boy, how many mistakes do you make in a day? I don't know about you, but I make plenty. You can't turn the clock back, so you have to look ahead." ইতিবাচকতাই জীবনের সর্বোত্তম পাঠ। আমাদের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনগুলো প্রায়শই জন্ম নেয় ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা থেকে। প্রতি মুহূর্তে আমরা আমাদের 'আগামী' নিয়ে এতটাই বিচলিত থাকি যে, নিমেষেই হাতের নাগালের বাইরে শেষ হয়ে যায় বেঁচে থাকার 'বর্তমান' মহূর্ত। জীবনের সৌন্দর্যটুকু উপভোগ করতেই বিস্মৃত হই আমরা। ‘মন্ডে ব্লুজ’ আসলে আমাদের প্রত্যেকের ভেতরের এই ভয় আর উদ্বেগেরই রাক্ষসছায়া। এই ভয়কে জয় করতে হলে আমাদেরকে নিজের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। দৃষ্টির সীমা অতিক্রান্ত করতে হবে।

আমাদের দৈনন্দিনতার মধ্যেই ছড়িয়ে রয়েছে ইতিবাচকতার ছোট ছোট নুড়িপাথর। এই নুড়িগুলোকে সংগ্রহ করতে হবে আমাদের নিজেকেই। একটা নতুন দিনের শুরুতে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আজকের এই দিনটাতে আপনি কী অর্জন করতে চান? কী শিখতে চান? কীভাবে নিজেকে আরও উন্নত করতে পারবেন? এই প্রশ্নগুলোই আপনার সোমবারের সকালকে এক নতুন অর্থ দিতে পারে। মনে রাখবেন, প্রতিটি সূর্যাস্তের পরেই নতুন সূর্যোদয়। তাই সোমবারকে আর 'ব্লুজ' হিসেবে না দেখে, নতুন সম্ভাবনার দুয়ার হিসেবে দেখুন। প্রতিটি সোমবার হয়ে উঠুক সাফল্যের নতুন মাইলফলক। শুধু কর্মভার নয়, জীবনের আনন্দ আর নতুন স্বপ্ন দেখার সাহস নিয়ে এগিয়ে চলার অফুরন্ত প্রেরণা হয়ে উঠুক এই দিনটি। আমরা যদি ভেতরের ইতিবাচক সত্তাকে জাগ্রত করতে পারি, তাহলে 'মন্ডে ব্লুজ' আপনাআপনি হয়ে উঠবে 'মন্ডে বুম'।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • সোমবারের সকাল প্রায়শই এক অদৃশ্য মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের প্রতিশব্দ হয়ে উঠেছে আজকাল।
  • কর্মজীবনের একঘেয়েমি, লক্ষ্যহীনতার হতাশা, কিংবা ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা– এসবই যেন সোমবারের সকালে প্রকট হয়ে ওঠে।
  • আমরা যদি ভেতরের ইতিবাচক সত্তাকে জাগ্রত করতে পারি, তাহলে 'মন্ডে ব্লুজ' আপনাআপনি হয়ে উঠবে 'মন্ডে বুম'।
Advertisement