shono
Advertisement
Fireworks

যে বাজির বিরুদ্ধে সে ‘অ্যান্টি-হিন্দু’?

দিল্লির বিজেপি প্রশাসন এই বিশ্বাসকে উসকে দিয়েছে সুচারুভাবে!
Published By: Biswadip DeyPosted: 12:10 PM Oct 25, 2025Updated: 12:10 PM Oct 25, 2025

বহু মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস রয়েছে যে, বাজি পোড়ানোর অধিকারটি অপ্রতিরোধ্য, এর সঙ্গে ধর্মাচরণও সম্পর্কিত। কাজেই রাষ্ট্রশক্তি চাইলেই তা নাগরিকের থেকে কেড়ে নিতে পারে না। দিল্লির বিজেপি প্রশাসন এই বিশ্বাসকে উসকে দিয়েছে সুচারুভাবে। ফলে দিল্লির বাতাস এখন শ্বাস নেওয়ার অযোগ্য। প্রতিবাদ করলেই বলা হচ্ছে, হিন্দু পরম্পরার বিরোধী– ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’। লিখছেন রাজদীপ সরদেশাই

Advertisement

দীপাবলি। ঘড়ির কঁাটা জানান দিচ্ছে মাঝরাত অতিক্রান্ত। কিন্তু শান্তিতে ঘুমনোর কি জো আছে? অনবরত বাজিপটকা ফেটে চলেছে। ফেটেই চলেছে। নিদ্রামনস্ক মানুষের দু’-চোখ যদি মরুভূমির মতো খটখটে হয়ে থাকে, ঘুমের আঠার দেখা না মেলে যদি, মেজাজ তিরিক্ষে হতে বাধ্য। রাগ ও ক্ষোভ মিলেমিশে আমার ভিতরে যে-অবস্থা তৈরি করছিল, তাই যেন আমাকে বাধ্য করল– ফোন ঘোরাতে। সোজা এলাকার পুলিশ চৌকিতে রিং করে বসলাম– ‘হচ্ছেটা কী মশাই! এতখানি রাত হল, এদিকে বাজি ফাটানোর বিরাম নেই। সুপ্রিম কোর্ট যেমনটা বলেছে, তা তো মানা হচ্ছে না। এরপরেও কি আপনারা কোনও স্টেপ নেবেন না?’ ওপারে যিনি ছিলেন, তঁার কণ্ঠে গাঢ় ক্লান্তির ছাপ। বললেন, ‘কোশিশ কর রহে হ্যায় স্যর, পর লোক সুনতে নহি।’ মানে, চেষ্টা তো করছি আমরা, লোকজন শুনলে তো! তৎক্ষণাৎ নিজেকে বেশ অসহায় মনে হল। রাত-ডিউটিতে থাকা ওই পুলিশকর্মীর উপর মায়াও হল। সত্যিই তো ওঁরা কী করবেন, যদি মানুষ কোনও নিয়ম মানতে না চায়? সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে– রাত ১০টার পর শব্দবাজি ফাটানো যাবে না। অথচ দেশের ‘কর্তব্যপরায়ণ’ নাগরিকেরা সেই নিয়মকে কলা প্রদর্শনে ব্যস্ত, উদগ্র!

পরের দিন সকালে হঁাটতে বেরলাম, যেমন বেরই রোজ। দু’-চার কদম চলতেই টের পেলাম, বাতাস ‘টক্সিক’। বিষবাষ্পে টইটম্বুর। প্রাক্‌-হেমন্তের রোদ যে-স্বচ্ছতা থাকা উচিত, তার ছিটেফেঁাটাও নেই। তার বদলে রয়েছে কালচে, পুরু ধেঁায়াশার আবরণ, যাকে বলে ‘স্মগ’। যা বলে দিচ্ছিল– আগের রাতটি যদি কারও
কারও কাছে উৎসবের উল্লাসবার্তা বয়ে আনে, তবে অনেকেরই কাছেই সেটি ছিল দুর্ভাগ্যের প্রতিলিপি। কাকে আমরা ধরব, দায়ী করব– দেশের তো বটেই– এমনকী দুনিয়ারও অন্যতম ঘন জনবসতিপূর্ণ শহরের বাতাসকে দীপাবলির মরশুমে এভাবে বিষিয়ে দেওয়ার জন্য? এ বাতাসে শ্বাস নিলে ফুসফুসের দফারফা হতে বাধ্য।

শীর্ষ আদালতকে দিয়েই শুরু করা যাক। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, রাতের বেলায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাজি ফাটানো যেতে পারে। যে-বেঞ্চ এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাই। প্রশ্ন যেটা, এই বেঞ্চ কি প্রকৃতই চেয়েছিল বাজির পক্ষে যারা ও বিপক্ষে যারা– তাদের মধ্যে সমন্বয় বা ‘ব্যালেন্স’ করতে? না কি বিচারপতিদের মধ্যে আসলে কাজ করছিল হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সামনে মাথানত করার মনোভাব– যারা মনে করে, বাজি ফাটানোর অধিকারে অবরোধ তৈরি করা মানে ‘হিন্দুত্ব’-র সংজ্ঞাকে অগ্রাহ্য করা? প্রধান বিচারপতিকে সম্প্রতি অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থার মুখে পড়তে হয়েছে। বিষ্ণুকে তিনি মানেন না– এই ধারণা থেকে একজন গেঁাড়া হিন্দুত্ববাদী অ্যাডভোকেট তঁাকে জুতো ছুড়ে মেরেছিল। এই পরিস্থিতিতে বাজি ফাটানোর অধিকারকে সাময়িক মান্যতা প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রধান বিচারপতি কি এক ধরনের সাম্যাবস্থা বা রফা তৈরি করে শান্তায়নের দিকে ঝুঁকেছিলেন? বাজি পোড়ানো মানে পরিবেশের স্থিতি বিগড়ে যেতে পারে। এটা জেনেও কি চেষ্টা করা হয়েছিল একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে যাওয়ার– যেখানে বাজি পোড়ানোর উল্লাসও থাকবে, আবার পরিবেশের প্রতিও অসদ্ভাব তৈরি হবে না? সেদিক থেকে এই প্রয়াসকে আমরা তাৎক্ষণিক ‘লিটমাস টেস্ট’ বলতেই পারি– যদিও তা সবসময়ই ঝুঁকিতে ভরা।

‘সবুজ বাজি’-র পক্ষে রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ভেবে দেখলে, এই শব্দবন্ধটি কি বেশ গোলমেলে ও বিরোধাভাসে পরিপূর্ণ নয়? উল্লাস ও উপদ্রবের মাঝামাঝি কোনও সুরাহা তো তৈরি হলই না, বরং মানুষজন যেন একটি চমৎকার অজুহাত পেয়ে গেল– বাজি পোড়ানোর পক্ষে। কোনওরকম দায়ভার না নিয়ে তারা বাজি ফাটিয়ে প্রমাণ করে দিল– অধিকার থাকলে সে অধিকারকে চুটিয়ে উপভোগ করা উচিত। সত্যিই কি সুপ্রিম কোর্ট চেয়েছিল– দিল্লি প্রশাসন এমন কোনও পদক্ষেপ নিক, যাতে যারা বাজি পোড়ানোর দিকে তীব্রভাবে ঝঁুকে রয়েছে তাদের উদ্দেশে বার্তা যায় যে, এটি অনুচিত কাজ?

আমার মতে, এতদ্দ্বারা, একটি পক্ষপাতদু্ষ্ট প্রশাসনের রাজনৈতিক অভিসন্ধি প্রকাশিত হয়। দিল্লির ক্ষমতায় বিজেপি ফিরেছে এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে, ২৭ বছরের পর। যে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছিল ভোটের প্রাক্কালে, তার অন্যতম ছিল– বাজি ফাটানোর উল্লাসকে নিরুদ্বিগ্ন ও নিসংশয়ী করে তোলা। পয়ঃপ্রণালীর স্বচ্ছতার কথা ভুলে যান, ভ্যাটের ময়লা নিয়মিত পরিচ্ছন্ন হচ্ছে কি না ভুলে যান, প্রদেয় সব প্রতিশ্রুতির মধ্যে থেকে যেটিকে রক্ষা করতে প্রশাসন বদ্ধপরিকর, তা হল: বাজি। মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা স্পষ্ট করেই বলেছেন– বাজি ফাটানো, বাজি পোড়ানো আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এই পরম্পরাকে টিকে থাকবে, স্বাস্থ্যসমস্যার চোখরাঙানি পেরিয়ে। পূর্বতন ‘আপ’ প্রশাসন ছিল হিন্দুবিরোধী। তাই বাজির প্রতি তাদের অ্যালার্জি ছিল। দীপাবলিতে বাজি ফাটানোয় তাদের সমর্থন ছিল না।

কী ভয়ংকর বিতর্কিত মন্তব্য! যা উল্লাসে মাতার অধিকারকে জনস্বাস্থ্যের বিপরীতে স্থান দেয়। যা তুলে ধরে ‘পপুলিস্ট ন্যারেটিভ’ বা সংখ্যাগুরুর ইচ্ছাধীন আখ্যানকে। ফলে বিরোধীরা গিয়ে দঁাড়াতে বাধ্য হয় কার্নিশে। বিরোধীদের হাতে থাকে বেছে নেওয়ার সুযোগ– তারা স্বয়ং কার্নিশ থেকে ঝঁাপ দেবে, না কি তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হবে। আর, যদি বিষয়টিকে ভোটাভুটির নিরিখে দেখা হয়– যার একদিকে রয়েছে পরিশ্রুত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার অধিকার, তো অন্যদিকে ধর্মাচরণের স্বাধীনতা– তাহলে চোখ বুঝে বলা যায়– এই দেশে প্রথমটির জয় অনিশ্চিত, অসম্ভব। শুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নেওয়ার অধিকার প্রতিবার হারবে ধর্মীয় তোষণের কাছে।
দীপাবলির সঙ্গে বাজির সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করতে চাইলে, শব্দবাজির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে আতশবাজি। দীপাবলিকে দেখাই হয় আলোকোৎসব রূপে, এখানে শব্দ যেন নগণ্য। কিন্তু শব্দের উপর অধিকতর মনোনিবেশ ঢেলে দেওয়ার কারণ– দিনে দিনে শব্দবাজির বাজারটি প্রভূত মাত্রায় ফুলেফেঁপে উঠেছে। লগ্নি বেড়েছে। এমনই যে, কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ ঘটে এখন শব্দবাদির বাজারে। এর সঙ্গে যোগ করুন পুঁজির সঙ্গে জড়িত উপভোক্তাসুলভ মনোভাব। এর সঙ্গে যোগ করুন ধর্মের চকিত আনাগোনা। ফলে, প্রতিটি ধর্মীয় পাব্বন হয়ে উঠছে দেখানেপনার চূড়ান্ত বর্হিপ্রকাশ। এই ধর্মপ্রাণতা প্রতিটি উৎসবকে করে তুলতে চাইছে ‘স্পেকট্যাকল’– বিনোদনের একপেশে অথচ মোহময় উৎস।

ভোট বড় বালাই। এ আমরা জানি। ভোট রাজনীতির নিহিত রসায়নকে এক্ষেত্রে উপেক্ষা করলে চলবে না তাই। প্রতিটি ধর্মের দৃষ্টিকোণ রাষ্ট্রকে সম-মর্যাদায় দেখতে হবে– এহেন সুপরামর্শ ভাঙিয়ে ইদানীং যে-বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে বিভেদকে টিকিয়ে রাখার জন্য তা হল– মুসলিমরা যদি কুরবানির ইদে রাস্তা ভাসিয়ে দিতে পারে জবাই করা পশুর লাল রক্তে, তবে দীপাবলির সময় বাজি পুড়িয়ে আনন্দ করতে হিন্দুদের কেন বাধা দেওয়া হবে? নিঃসন্দেহে ছেঁদো যুক্তি। এতে সুচিন্তার ঝলক নেই। তবে চেনা লোকের আবেগ যখন ধর্মের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে– কী হয় জানি বইকি।

যদি দিল্লি সরকার সত্যিই উৎসাহী হত, তাহলে তো পুলিশকে কড়া হওয়ার নির্দেশ দেওয়া যেত। বলা হত, নেহাত ‘ফাইন’ করে বা বাগাড়ম্বর ফলিয়ে কাউকে যেন ছাড়া না হয়। তা কি হয়েছে? তার বদলে আমরা কি প্রত্যাশা করেছি? নানাবিধ দায়িত্বের ভারে কুপোকাত ও নু্যব্জ পুলিশকর্মীরা এক মহল্লা থেকে অন্য মহল্লায় টহল দিয়ে যাবে– অথচ রাজনৈতিকভাবে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না– ফলে প্রতিটি টহল বিফল হবে! রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে কি বন্ধ করা যায় না বাজির উপদ্রব? আমাদের বিচারপতিরা এবং রাজনৈতিক নেতারা কি প্রকৃতই যথেষ্ট আগে থেকে সবাইকে জানানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, ‘সবুজ বাজি’ বলতে কী বোঝায়, কেন তা অন্যান্য বাজির থেকে আলাদা, কম ক্ষতিকারক? না কি তঁারা প্রত্যাশা করেন– একজন সাধারণ পুলিশকর্মী রাতারাতি জেনে যাবে ‘সবুজ বাজি’ ও ‘শব্দবাজি’-র সাধারণ পার্থক্য? কেন কিছু দুর্বৃত্তপরায়ণ মানুষ এই বাজির ব্যবসায় নিজেদের পুঁজি নিয়োগ সম্পূর্ণ করে আখের গুছিয়ে নিচ্ছে? কেনই-বা গ্রেফতার করা হচ্ছে না তাদের, যারা আইন ভাঙতে তৎপর?

পাশাপাশি অবশ্য এও বলতে হবে যে, বাজির প্রশ্নে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করা যাবেই না কখনও– যদি না সাধারণ মানুষ একযোগে সম্মত হয় যে, বাজির দৌরাত্ম্য তারা আর মানবে না। যে কোনও আইনের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব না-দেখানো আমাদের এই উপমহাদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যার একটি। উদাহরণ দিই। ২০২৪ সালে, ‘মোটর ভেহিকেল অ্যাক্ট’ মোতাবেক, ৮ কোটির মতো ট্রাফিক চালান কাটা হয়েছিল– নানা কারণে। দেখা গিয়েছে, ‘ফাইন’ যারা দিয়েছে তাদের কেউ কেউ আগেও ফাইন দিয়েছে। অর্থাৎ মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা মানেই সমঝ তৈরি হবে, তা নয়। গত সপ্তাহেই দেখা গেল, প্রচণ্ড ট্রাফিক থেকে বঁাচতে মহারাষ্ট্রের একজন মন্ত্রীর কনভয় বিপরীত লেন দিয়ে যাচ্ছে। কোনও ট্রাফিক পুলিশকর্মী কিন্তু যায়নি এই ভুলটি ধরিয়ে দিতে, বা দণ্ড দিতে।

খানিকটা ভয়, খানিকটা স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি। দুয়ে মিলেই তৈরি হয় নিয়ম ও অনুশাসন মেনে চলার মানসিকতা। আদালতের ‘নিষেধ’ অমান্য করে শব্দবাজি ফাটিয়েছে এমন ডজন-ডজন লোককে যদি প্রকাশ্যে চিহ্নিত করা হয়, তাদের সামাজিক লোকলজ্জার মুখে ফেলা হয়, তাদের জেলে পাঠানো হয় শাস্তি দিয়ে– তবে হয়তো বাজির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া যাবে। যদি বাজির বিরুদ্ধে গণজাগৃতিমূলক জনসভা করা যায় স্কুল-কলেজে, অফিস-কাছারিতে তবে হয়তো সুদূরপ্রসারী কোনও কাজ হলেও হতে পারে। আসলে, বহু মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস ঘঁাটি গেঁড়ে রয়েছে যে বাজি পোড়ানোর অধিকারটি অপ্রতিরোধ্য, এর সঙ্গে ধর্মাচরণের সম্পর্কও আছে, কাজেই রাষ্ট্রশক্তি চাইলেই তা নাগরিকের থেকে কেড়ে নিতে পারে না। যে সমস্ত নাগরিক, বাজির বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলছে এর ক্ষতিকর দিকগুলির কথা ভেবে, তাদের দেগে দেওয়া হচ্ছে ‘এলিট’, ‘অ্যান্টি-হিন্দু’, ‘অ্যান্টি-ন্যাশনাল’ বলে। কারণ, এরা নাকি জনমানসকে উৎসবের উল্লাস থেকে বঞ্চিত করতে চায়!
হিন্দু ধর্মে প্রকৃতিকে সুউচ্চ আসন দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতির সংরক্ষণ, বৃক্ষ ও নদীকে সশ্রদ্ধায় পুজো করা, প্রকৃতির অন্তর্লীন শক্তিকে বন্দনা করা হিন্দু ধর্মে স্বীকৃত। প্রকৃতিতে সুন্দর, স্বচ্ছ ও প্রাণবন্ত রাখা– উচ্চমন্যতার পরিচয় নয়, বরং এটি তো ধার্মিকের কর্তব্য।

মনে রাখতে হবে, দূষিত বায়ু সকলের ফুসফুসের জন্যই প্রাণঘাতী, মাসিক উপার্জন যার যেমনই হোক। রাতারাতি দূষণ ঠেকানো যাবে না। এর জন্য দরকার সংবেদনশীল প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ, ভবিষ্যনির্ভর সুচারু পরিকল্পনা। আমি সব ধরনের দূষণ প্রতিরোধের কথাই বলছি কিন্তু। যারা নাড়া পোড়ায়, যারা প্রকৃতি-অবান্ধব শিল্প গড়ে তুলতে চায়, যারা দেদার গাছ কাটে বা নদীকে নোংরা করে, বা যারা উন্মাদের মতো বাজি ফাটিয়ে ও পুড়িয়ে আমোদ পায়– সতর্কতা প্রত্যেকর জন্যই। কোটি-কোটি মানুষ দূষিত বাতাসে শ্বাস নিতে গিয়ে খাবি যাচ্ছে– এই দৃশ্যে ‘ভর’ দিয়ে ‘বিকশিত ভারত’ তৈরি হতে পারবে না।

পুনশ্চ: দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসার যখন সাক্ষাৎকার নিলাম, তিনি খোলাখুলিভাবে দোষ দিচ্ছিলেন পাঞ্জাবের আপ সরকারকে। চাষিদের নাকি পাঞ্জাব প্রশাসন বাধ্য করছে ফসলের অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে ফেলতে। এর জন্য বায়ুদূষণ ঘটছে প্রবলভাবে। দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া, নিজকর্তব্য অন্যের ঘাড়ে চালান করে দেওয়া ভারতীয় নেতৃবৃন্দের চিরন্তনী অভ্যাস। বাতাসে পরিবর্তনের আভাস নেই। দমবন্ধ হয়ে আসাই নিয়তি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বহু মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস রয়েছে যে, বাজি পোড়ানোর অধিকারটি অপ্রতিরোধ্য, এর সঙ্গে ধর্মাচরণও সম্পর্কিত।
  • কাজেই রাষ্ট্রশক্তি চাইলেই তা নাগরিকের থেকে কেড়ে নিতে পারে না।
  • দিল্লির বিজেপি প্রশাসন এই বিশ্বাসকে উসকে দিয়েছে সুচারুভাবে।
Advertisement