কলকাতার অদূরে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প গড়ে উঠলে অচিরেই দেশের প্রকৃত ‘সিলিকন ভ্যালি’ হয়ে উঠতে পারে কল্লোলিনী তিলোত্তমা, অভিমত।
রাজ্যে শিল্পায়নের জন্য একটি বড় প্রকল্প সম্প্রতি ঘোষণা হল। বলা চলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের একটি দীর্ঘ প্রচেষ্টার সুফল মিলেছে। রাজ্যে স্থাপন হতে চলেছে একটি সেমিকন্ডাক্টর চিপ তৈরির কারখানা। এই কারখানা রাজ্যে আনার জন্য বহু দিন ধরে কাজ করে চলেছে মুখ্যমন্ত্রীর টিম। মার্কিন সংস্থার সঙ্গেও তারা দীর্ঘ দিন আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিল।
আধুনিক শিল্পে সেমিকন্ডাক্টর চিপ হল অন্যতম প্রয়োজনীয় কাঁচামাল। যে কোনও ইলেকট্রনিক সামগ্রী তৈরিতে এর দরকার পড়ে। সেমিকন্ডাক্টর চিপ বিদ্যুৎসংবহন করে। বিদ্যুতের গতি কমিয়ে-বাড়িয়ে ইলেকট্রনিক সামগ্রীগুলি পরিচালিত হয়। ফলে সেমিকন্ডাক্টর চিপ উৎপাদন মানে তার হাত ধরে মোবাইল ফোন থেকে গাড়ি, সমস্ত আধুনিক শিল্প বাংলায় আসার সম্ভাবনা তৈরি। এই চিপ তৈরির কারখানা রাজ্যে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার শিল্প তৈরির পথও প্রশস্ত করতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে কালক্রমে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, গাড়ি বা মোবাইল তৈরির কারখানা গড়ে উঠলে গোটা রাজ্যের শিল্প মানচিত্রটাই বদলে যাবে।
পশ্চিমবাংলায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের দক্ষ কর্মীর অভাব নেই। বস্তুত, মার্কিন সংস্থা ‘গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ’ এই দক্ষ কর্মী পাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগাতেই সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য এই রাজ্যকে বেছে নিয়েছে। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভ, নিউটাউন, বানতলা ইত্যাদি বিস্তীর্ণ এলাকা ঘিরে রাজ্যে তথ্য প্রযুক্তি পরিষেবা শিল্প গড়ে উঠেছে। কিন্তু এই শিল্প রাজ্যে শিল্পায়নের জন্য যথেষ্ট নয়। বর্তমানে বড় বা ভারী শিল্প আর বিশেষ গড়ে ওঠে না এখানে। সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিকে নির্ভর করে ভোগ্যপণ্য নির্মাণই আগামী দিনে শিল্পায়নের ভিত্তি।
মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ‘বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন’-এর আয়োজন করে থাকেন; শিল্প-বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে গোটা বিশ্বের সামনে বাংলাকে তুলে ধরতে। সম্মেলনে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শিল্পোদ্যোগীদের আহ্বান জানানো হয়। সেমিকন্ডাক্টর শিল্প গড়ে উঠলে আক্ষরিক অর্থেই বাংলা বিশ্ব বাণিজ্যের অঙ্গনে স্থায়ী জায়গা করে নিতে পারবে। মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের লক্ষ্য পূরণ হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের কেন্দ্র হিসাবে বেঙ্গালুরু ‘ভারতের সিলিকন ভ্যালি’। কলকাতার অদূরে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প গড়ে উঠলে অচিরেই দেশের প্রকৃত ‘সিলিকন ভ্যালি’ হয়ে উঠতে পারে তিলোত্তমা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য জমি তৈরি রয়েছে ঘোষণা করলেও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও স্পষ্টভাবে বলা হয়নি, তা কোথায়। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যে কলকাতার মার্কিন উপ-রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠকও সেরেছেন। জানুয়ারিতে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের আগেই চিত্রটা পরিষ্কার হবে বলেই তাঁর ঘোষণা।