আইপিএস পূরণ কুমার আত্মহত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়। মৃত অফিসারকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ দাগিয়ে আত্মঘাতী হরিয়ানার আর-এক পুলিশকর্মী।
হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের দলিত পড়ুয়া রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার ঘটনা কি খুব বেশি পুরনো? নিশ্চয়ই না। তাহলে সারা দেশ কেন হরিয়ানা পুলিশের এডিজি, আইপিএস অফিসার ওয়াই পূরণ কুমারের আত্মহত্যার ঘটনায় নীরব? ভেমুলার আত্মহত্যার পর যাঁরা সরব হয়েছিলেন এবং শপথ নিয়েছিলেন যে, ফের কোনও দলিতকে এইভাবে জাতি বৈষম্যের শিকার হতে দেবেন না, তাঁদের তো পূরণ কুমারের আত্মহত্যার বিরুদ্ধেও সরব হওয়া উচিত ছিল! কিন্তু কী অদ্ভুতভাবে পূরণ কুমারের আত্মহত্যাকে এক গভীর রহস্যে মুড়ে ফেলা হল।
এটি যে একটি প্রাতিষ্ঠানিক খুন, সেই কথাটি তাঁর আইএএস পত্নী ছাড়া কেউ বলার সাহস দেখাচ্ছে না। পূরণ কুমার তাঁর আট পাতার সুইসাইড নোটে খুব স্পষ্ট করে লিখে গিয়েছেন, দলিত বলে হরিয়ানা পুলিশের চাকরিতে তাঁকে কীভাবে পদে পদে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। তিনি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন হরিয়ানা পুলিশের ডিজি শত্রুজিৎ কাপুরের বিরুদ্ধে। রোহতকের এসপি-সহ আরও আট আইপিএসের বিরুদ্ধেও দলিত এই পুলিশ অফিসারের অভিযোগ। পূরণ কুমার আচমকা এই অভিযোগ আনেননি। নিজেকে জাতি বৈষম্যের শিকার দাবি করে আগেও তিনি এসসি-এসটি কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছিলেন।
গত ৭ অক্টোবর পূরণ কুমার নিজেকে গুলি করে আত্মঘাতী হন। সেসময় তাঁর স্ত্রী, আইএএস অফিসার অমনীত কুমার হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিং সাইনির প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে বিদেশ সফরে ছিলেন। বিদেশ থেকে ফিরে তিনি পরিবারের অন্য সদস্যর সঙ্গে এই দাবিতে অনড় অবস্থান নেন যে, যত দিন না ডিজি শত্রুজিৎকে গ্রেপ্তার করা হবে, ততদিন তাঁরা পূরণ কুমারের দেহের ময়না তদন্তে অনুমতি দেবেন না। হরিয়ানা সরকার ডিজিকে ছুটিতে পাঠানোর পর ঘটনার ৮ দিন বাদে পরিবার পূরণ কুমারের দেহ সৎকারে সম্মত হলেও, পুরো ঘটনা হঠাৎই নতুন মোড় নেয়। ১৪ অক্টোবর হরিয়ানার রোহতকে সাইবার সেলে কর্মরত সন্দীপ সিং লাথের নামে এক এএসআই আত্মঘাতী হন, যিনি নাকি তাঁর সুইসাইড নোটে এবং ভিডিও বার্তায় পূরণ কুমারকে দুর্নীতিগ্রস্ত আখ্যা দিয়ে একের পর এক অভিযোগ করেছেন। এই পুলিশকর্মী নাকি তাঁর সুইসাইড নোটে ডিজি শত্রুজিতের প্রবল সুখ্যাতিও করেছেন।
সন্দীপের দেহ রোহতকের একটি ধানখেত থেকে উদ্ধার হয়েছে। পূরণ কুমারের মৃত্যুর পর কেন এই পুলিশ কর্মী তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আত্মঘাতী হলেন, তা নিয়ে ঘোর রহস্য দানা বেঁধেছে। হরিয়ানার বিজেপি সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ সন্দীপকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে দ্রুত এফআইআর করা হয়েছে পূরণ কুমারের স্ত্রী অমনীত ও তাঁর ভাই পাঞ্জাবের আপ বিধায়কের বিরুদ্ধে।
প্রশ্ন উঠেছে, এক আইপিএস অফিসারের প্রাতিষ্ঠানিক খুনকে আড়াল করতেই কি নানারকম যড়যন্ত্র রচনার খেলা শুরু হয়েছে? যদি সেটা হয়, তাহলে তার পরিণতি ভয়াবহ। দু’টি আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তও হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সত্যের উদ্ঘাটন খুব গুরুত্বপূর্ণ।
