রাহুল রায়: হাই কোর্টে বিস্ফোরক শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন (Manish Jain)। দাবি করলেন, অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে নিয়োগের বিষয়টা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর পরিকল্পনা। সওয়াল-জবাব শেষে রাজ্য ও তৃণমূলকে তীব্র কটাক্ষ করলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gangopadhyay)। বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করা না হলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিলেন তিনি।
একনজরে দেখে নিন এজলাসের প্রশ্নোত্তর পর্ব
বিচারপতি: আপনি কি জানেন, কমিশনের আইন অনুযায়ী কোনও বেআইনি নিয়োগ করা যায় না?
শিক্ষাসচিব: হ্যাঁ
বিচারপতি: তাহলে অতিরিক্ত শূন্যপদ কেন?
শিক্ষাসচিব: উপযুক্ত জায়গা থেকে নির্দেশ এসেছিল। ব্রাত্য বসুর নির্দেশ ছিল। তিনি আইনি পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছিলেন। আইনজীবী এবং অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। আইন দপ্তরের সঙ্গেও কথা হয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়। মুখ্যসচিবকে জানানো হয়। ক্যাবিনেটে নোট পাঠানো হয়।
বিচারপতি: অবৈধদের নিয়োগ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন আইনজীবীরা?
[আরও পড়ুন: পুর-সংশোধনী আইনে বাড়ল সুবিধা, বাড়ি, ফ্ল্যাট কিনলে রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গেই মিউটেশন]
শিক্ষাসচিব: না।
বিচারপতি: আপনার কি মনে হয় না যে অবৈধদের বাঁচানোর জন্য এই অতিরিক্ত শূন্যপদ? অবৈধদের সরানোর কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছিল?
শিক্ষাসচিব: আমরা আইনদপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছি।
বিচারপতি: আমি বিস্মিত কীভাবে ক্যাবিনেটে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। যেখানে আইনে এর কোনও স্থান নেই। আপনি কি মনে করেন যে অবৈধদের চাকরি বাঁচানো দরকার?
শিক্ষাসচিব: না।
বিচারপতি: কোন ক্যাবিনেটে এই সিদ্ধান্ত হয়?
শিক্ষাসচিব: আমরা আইন দপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছি।
বিচারপতি: এটা কোনও রাজ্যের নীতি হতে পারে? আবার বলা হচ্ছে, কারও চাকরি যাবে না। স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবীর কাছে আবেদন দাখিল করার কোনও লিখিত নির্দেশিকা নেই। অতিরিক্ত প্রায় ২৬২ কোটি টাকা কেন প্রতি বছর ব্যয় করা হবে এই অযোগ্যদের জন্য?
শিক্ষাসচিব: আমরা অ্যাডভোকেট জেনারেলের সঙ্গেও এবিষয়ে কথা বলেছি।
বিচারপতি: আপনার কি মনে হয় না যে ক্যাবিনেট তার এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সংবিধানবিরোধী কাজ করেছে? ক্যাবিনেটের সদস্যরা সই করলেন? কেউ তাঁদের সতর্ক করলেন না?
শিক্ষাসচিব: আমি সেখানে ছিলাম না।
[আরও পড়ুন: B.Ed ও D.El.Ed কলেজ পিছু ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন মানিক! আদালতে দাবি ইডির]
সওয়াল-জবাব শেষে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ক্যাবিনেটকে বলতে হবে যে অযোগ্যদের পাশে আমরা নেই এবং ১৯ মে-র বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করতে হবে। নাহলে এমন পদক্ষেপ করব যেটা গোটা দেশে কখনও হয়নি। আমি ক্যাবিনেটকে পার্টি করে দেব। সবাইকে এসে উত্তর দিতে হবে।” প্রয়োজনে শোকজ করার হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। এর পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “বিধানসভার দলনেতা মুখ্যমন্ত্রী আর লোকসভার দলনেতা প্রধানমন্ত্রী। আমি ইলেকশন কমিশনকে বলব তৃণমূলের লোগো প্রত্যাহার করার জন্য।” দল হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসের মান্যতা প্রত্যাহার করার হুঁশিয়ারিও দেন।
এর পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “আমি মুখ্যমন্ত্রীর যন্ত্রণা বুঝতে পারি। কিছু দালাল যাঁরা মুখপাত্র বলে পরিচিত, তাঁরা আদালতের নামে যা ইচ্ছা বলছে। নিয়োগ হলেই নাকি আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসা হচ্ছে।” এ বিষয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “আমরা বিচার ব্যবস্থাকে সম্মান করি। বিচারপতিদের শ্রদ্ধা করি। বিচার ব্যবস্থার ঊর্ধ্বে কেউ নয়। কিন্তু দেখতে হবে কারও উইশ লিস্ট অনুযায়ী আদালত নির্দেশ দিচ্ছে না তো ! পর্যবেক্ষণ দিচ্ছে না তো!”