অর্ক দে, বর্ধমান: এক সময় নিজেই আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাই অভাবী সংসারের সন্তানের মাধ্যমিকে (Madhyamik) ভাল ফল করার খবর পেয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন ৭৯ বছরের বৃদ্ধ। পড়ুয়া ঠিকানা-ফোন নম্বর অজানা। সম্বল স্রেফ খবরের কাগজের পাতায় পড়া পড়ুয়া নাম ও স্কুলের পরিচয়। সেই স্কুলের নামকে হাতিয়ার করেই মাধ্যমিকে দশম স্থান অধিকারী সৌনক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছে গেলেন কলকাতা টেলিফোন দপ্তরের প্রাক্তন কর্মী দিলীপকুমার মণ্ডল।
মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পর সংবাদপত্রের পাতাতেই জেনেছিলেন কৃতীদের খবর। জানতে পেরেছিলেন দশম স্থান অধিকারী সৌনকের (প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৪) হাল হকিকত। বর্ধমানেরই অভাবী পরিবারের সন্তান সে। লকডাউনে চাকরি হারিয়ে টোটা চালাতে শুরু করেছিলেন সৌনকের বাবা। সেই টোটো চালিয়েই ছেলের পড়ার খরচ জুগিয়েছেন তিনি। কিন্তু ভবিষ্যতে কতটা খরচ জোগাতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দিহান ছিল সৌনকের পরিবার। সেই খবর জানতে পেরেই এগিয়ে এলেন কাটোয়ার দিলীপবাবু।
[আরও পড়ুন: অণ্ডকোষ ঝুলত হাঁটুতে, প্যান্ট পরতে পারতেন না, প্রৌঢ়কে নতুন জীবন দিল NRS]
মঙ্গলবার স্কুল শুরুর আগেই বর্ধমানের সিএমএস স্কুলে পৌঁছে গিয়েছিলেন দিলীপবাবু। অপেক্ষা করছিলেন প্রধান শিক্ষক মিন্টু রায়ের জন্য। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁকে ভিতরে নিয়ে যান। জানান, এই স্কুলের ছাত্র দশম স্থানাধিকারী সৌনককে তিনি ১ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য করতে চান। পাশাপাশি, স্কুলের অন্যান্য অভাবী ছাত্রদের জন্য দু’লক্ষ টাকা দান করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার বাসিন্দা দিলীপকুমার মণ্ডল কলকাতা টেলিফোন দপ্তরের প্রাক্তন কর্মী। ২০০৩ সালে চাকরি জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে বাবার হাত ধরে পড়াশোনার জন্য কাটোয়ার গ্রামের বাড়ি থেকে রিষরায় পাড়ি দিয়েছিলেন। তখন তিনি সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। তার আগে গ্রামের রাস্তায় তিন কিলোমিটার পথ পেরিয়ে স্কুলে যেতেন। কিন্তু, কম বয়সে বাড়ি থেকে দূরে থেকে, নানান অসুবিধার মধ্যে কাটিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি।
বাবার সামান্য মাইনের চাকরির ফলে আর্থিক অনটন ছিল নিত্য সঙ্গী। তারপর কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে টেলিকম বিভাগে চাকরিতে যোগ দেন। বর্তমানে বর্ধমান শহরের মিঠাপুকুর এলাকায় নিজের বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। নিজের জীবনের ছাত্র অবস্থায় কষ্টের দিন গুলির স্মৃতি এখনও তাজা তার কাছে। এই স্মৃতি থেকেই দুঃস্থ মেধাবী পড়ুয়ার পাশে দাঁড়ানোর জন্য আজও এগিয়ে আসেন আশি ছুঁইছুই দিলীপবাবু।