সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথে হেঁটেই মহারাষ্ট্র জয় বিজেপির! শুধু আরব সাগরের তীরের রাজ্য কেন, হরিয়ানা-মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যেও বিজেপির ডুবন্ত নৌকাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে তৃণমূল নেত্রীর 'গেম প্ল্যান'ই! ঝাড়খণ্ডকেও কৃতজ্ঞ থাকতে হবে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই। শুনতে অবাক লাগলেও, বিষয়টা সেরকমই।
একুশের বিধানসভা ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটে জিতেই কার্যকর করেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। যা নিঃসন্দেহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'মাস্টারস্ট্রোক'। মাসে মাসে সরাসরি মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকছে টাকা। প্রথমে মাসিক ৫০০ এবং ১০০০ টাকা দিত রাজ্য সরকার। তার পর তা বাড়িয়ে করা হয় ১ হাজার এবং ১২০০ টাকা। আর এই সরকারি সুবিধা ভবিষ্যতেও পাওয়ার জন্য মহিলারা ঢালাও ভোট দেন তৃণমূলকে। একচেটিয়া বিরোধীরা তৃণমূল কংগ্রেসের 'খয়রাতি' রাজনীতির নিন্দা করলেও সময় বুঝিয়ে দিয়েছে, তৃণমূল নেত্রীর এই পদক্ষেপ কতটা সময়পযোগী ছিল। বর্তমানে তাঁর দেখানো পথেই হাঁটছে বিজেপি, কংগ্রেসের মতো রাজনৈতিক দলগুলি।
শুরুটা হয়েছিল কর্নাটক থেকে। ভোটে জিতলে রাজ্যের মহিলাদের মাসিক ২ হাজার টাকা দেবে কংগ্রেস। সেই প্রতিশ্রুতিতে মিলেছিল সাড়াও। দক্ষিণের রাজ্যটি এসেছিল হাত শিবিরের দখলে। এর পর থেকেই একের পর এক রাজ্যে বিজেপি-কংগ্রেস দুদলই 'রেউড়ি'র ঘোষণা করেছে। মধ্যপ্রদেশে পদ্ম ফোটাতে সেই চেনা ছকেই হেঁটেছিলেন শিবরাজ সিং চৌহান। মধ্যপ্রদেশে নির্বাচনের মাসছয়েক আগে 'লাডলি বেহনা' প্রকল্প শুরু করে বিজেপি। বার্ষিক আড়াই লক্ষ টাকার কম আয় থাকা পরিবারের মহিলাদের হাতে প্রতি মাসে ১ হাজার ২৫০ টাকা দেওয়া শুরু হয়। জম্মু-কাশ্মীরেও মহিলাদের নগদ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল গেরুয়া শিবির।
এর পর ঠিক ভোটের আগে মহারাষ্ট্রে একই রকম একটি প্রকল্প নিয়ে আসে বিজেপি, এনসিপির অজিত পওয়ার শিবির ও শিব সেনার একনাথ শিণ্ডে শিবিরের প্রশাসন। ‘মুখ্যমন্ত্রী মাঝি লড়কি বহিন যোজনা’র ঘোষণা করে জানান, ২১ থেকে ৬০ বছরের মহিলাদের মাসে মাসে দেড় হাজার টাকা করে দেবে সরকার। এছাড়াও পাঁচজন সদস্যের পরিবারগুলিকে ‘মুখ্যমন্ত্রী অন্নপূর্ণা যোজনা’ প্রকল্পের অধীনে বছরে তিনটি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার দেওয়া হবে বিনামূল্যে। হেক্টর প্রতি ৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে মহারাষ্ট্রের প্রত্যেক তুলো ও সোয়াবিন চাষিদের। ১ জুলাই থেকে দুগ্ধ খামারের সঙ্গে যুক্ত কৃষকদের লিটার প্রতি ৫ টাকা বোনাস দেওয়া হবে। পশুর আক্রমণে কারও মৃত্যু হলে নিহতের সবচেয়ে নিকট আত্মীয়কে ২৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। আগে এই অঙ্ক ছিল ২০ লক্ষ টাকা। আর এই প্রতিশ্রুতির পরই মহারাষ্ট্রের ২২৯টি আসনে জয় পেল বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট। শুধু মহারাষ্ট্র নয়, ঝাড়খণ্ডেও হেমন্ত সোরেনের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা মহিলাদের মাসিক অনুদান দেয়। উপরন্তু ভোটের আগে সেই অনুদানের পরিমাণ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আর তাতেই কেল্লাফতে। তরতরিয়ে জাদুসংখ্যা পার করল জেএমএম ও তার সঙ্গীরা।
মহারাষ্ট্রের এহেন মডেল নিয়ে তৃণমূলের অন্য়তম রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের খোঁচা, "বিজেপি তো বলেছে এটা খয়রাতি। মা বোনেদের অপমান করেছে। এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নকল করছে। কিন্তু ওভাবে হয় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ যা ভাবেন, পরশু বিজেপি তাই ভাবে।" ঝাড়খণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা মডেল তৈরি করে দিয়েছেন। মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর। সেই মডেল রাজ্যে রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।"
উল্লেখ্য, রাজনৈতিক দলগুলির 'রেউড়ি'র বিরুদ্ধে একসময় সরব হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনকী সুপ্রিম কোর্টেও এধরনের একাধিক প্রকল্প ভর্ৎসনার মুখে পড়েছে। তার পরেও খয়রাতি থেকে সরে আসেনি রাজনৈতিক দলগুলি। তাই পরিশেষে বলাই যায়, সহজে জয় পেতে বিজেপি-কংগ্রেস থেকে আঞ্চলিক দলগুলি সকলেরই ভরসা 'রেউড়ি'-ই। অর্থাৎ মমতার দেখানো পথেই হাঁটছে জাতীয়স্তরের রাজনীতিকরা।