দেবব্রত দাস, পাত্রসায়ের: হাতির মৃত্যু অব্যাহত বাঁকুড়ায় (Bankura)। এবার সোনামুখী থানার রাধানগর রেঞ্জের জঙ্গলে এক হস্তিশাবকের মৃত্যু হল। বনদপ্তরের কর্মীদের অনুমান, স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে তার। স্ট্রোকে হাতির মৃত্যু বেশ বিরল ঘটনা বলেই মনে করছেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। প্রশ্ন উঠছে, হাতির কি স্ট্রোক হতে পারে? উল্লেখ্য, গত ৬ মাসের মধ্যে বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের বিভিন্ন জঙ্গলে চারটি বুনো হাতির মৃত্যু হয়েছে। যা বেশ উদ্বেগজনক।
মঙ্গলবার সকালে রাধানগর রেঞ্জের নোনাশোল ভাটপুকুর মৌজায় বড়স্রোত জঙ্গলে হস্তিশাবকের দেহটি পড়েছিল। খবর পেয়ে বনদপ্তরের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে যান। মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে সোনামুখী ব্লকের প্রাণী স্বাস্থ্যদপ্তরের এক চিকিৎসক ওই হস্তিশাবকের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেছেন। মৃত হস্তিশাবকের বয়স ৬-৭ মাস হবে বলে বনদপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘বাংলা মিডিয়াম’ নিয়ে RJ অয়ন্তিকার মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক, খোলা চিঠিতে পালটা রাহুলের]
হস্তিশাবকের কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয় বনকর্তাদের কাছে। বনবিভাগের বাঁকুড়ার ডিএফও (উত্তর) কল্যাণ রাই এদিন বলেছেন, “হাতির দলটিকে মেদিনীপুরে পাঠানোর জন্য অভিযান চালানো হচ্ছিল। বড় দলটি চলে গিয়েছে। শাবক-সহ কয়েকটি হাতি রয়ে গিয়েছে। ওই দলের মধ্যে থাকা একটি শাবকের রাধানগর রেঞ্জের জঙ্গলে মৃত্যু হয়েছে। কীভাবে ওই হস্তিশাবকের মৃত্যু হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না।” তিনি আরও জানান, এদিন হস্তিশাবকের দেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই হস্তিশাবকের মৃত্যুর আসল কারণ স্পষ্ট বোঝা যাবে। হস্তিশাবকের মৃত্যুর পরে অন্য হাতিরা একটু ক্ষিপ্ত রয়েছে। গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তবে ওয়াকিবহাল মহল বলছে, স্ট্রোকে হাতির মৃত্যুর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না এখনই। এ প্রসঙ্গে হস্তিশাবকের মৃত্যু প্রসঙ্গে অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পূর্ব) কল্যাণ দাসের অভিমত, “হাতি এমনিতে বলশালী। অনেক দৌড়ঝাঁপ করে। কিন্তু বয়স হয়ে গেলে অতিরিক্ত দৌড়ঝাঁপ করলে, উপরন্তু যেখানে আছে সেখানকার তাপমাত্রা অনেক বেশি হলে তাহলে সানস্ট্রোক হতেই পারে। হস্তিশাবকের বয়স মোটে ৬-৭ মাস। তাই হস্তিশাবকের ক্ষেত্রে এরকম কিছু হতে পারে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” স্বাভাবিকভাবে এই মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন বনাধিকারিক।
[আরও পড়ুন: ‘বাংলা মিডিয়াম’ নিয়ে RJ অয়ন্তিকার মন্তব্যে তীব্র বিতর্ক, খোলা চিঠিতে পালটা রাহুলের]
বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের ৫ নভেম্বর পাত্রসায়ের রেঞ্জের ময়রাপুকুর এলাকায় ধানজমিতে একটি হাতির অপমৃত্যু হয়েছিল। ওই হাতিটির মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছিল। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছিল বলে স্থানীয়দের দাবি ছিল। গত ৬ মার্চ বাঁকুড়া উত্তর রেঞ্জের বেলবনি বিট এলাকায় একটি পূর্ণবয়স্ক দাঁতালের অপমৃত্যু হয়েছিল। পরের দিন সকালে হাতির অপমৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই এলাকায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। ওই হাতিটির কীভাবে অপমৃত্যু হল তা এখনও অজানা রয়েছে। গত ১২ মার্চ বাঁকুড়া সদর থানার চুয়াগাড়া হাইস্কুলের পিছনে জমিতে একটি হাতিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই হাতিটির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল।
স্বাভাবিকভাবেই গত ৬ মাসের মধ্যে বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগের একাধিক জঙ্গলে পরপর তিনটি বড় হাতি ও একটি শাবকের এমন আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যদিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এই হস্তিশাবকের মৃত্যু হয়নি বলেই দাবি করেছে বনদপ্তর। রাধানগর রেঞ্জের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গরম পড়েছে। হাতির দল বছরভর বাঁকুড়ার জঙ্গলে ঘোরাফেরা করছে। এরই মধ্যে হাতিদের বাঁকুড়া থেকে মেদিনীপুরে পাঠানোর জন্য অভিযান শুরু করা হয়েছে। ওই হস্তিশাবকটি ঘোরাফেরার মধ্যে স্ট্রোক জাতীয় কিছুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাতে পারে। এমন সম্ভাবনায় বেশি।