সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে লাশ পাচার কাণ্ডে এবার আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজের এক কর্মীর খোঁজে পুলিশ। বুধবার লাশ পাচারের সময় ঘটনাস্থল থেকে সুযোগ বুঝে পালিয়েছিল সে। প্রদীপ মল্লিক নামে ওই পাণ্ডার খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে বর্ধমান থানার পুলিশ। ধৃতদের একজন আবার দার্জিলিং জেলার বাসিন্দা বলে খবর। ধৃতদের বৃহস্পতিবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে ৩ জনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতরা হল দার্জিলিংয়ের মাটিগাড়া থানার কলমজোতের অবিনাশ মল্লিক, বর্ধমানের ষাঁড়খানা গলির গৌতম ডোম, সাধনপুর রোডের নন্দলাল ডোম, বাবুরবাগের সুমন মিত্র ও শম্ভু মিত্র। প্রথম তিনজন বর্ধমান মেডিক্যালের কর্মী। সুমন শববাহী গাড়ির চালক। তার বাবা শম্ভু ওই গাড়ির মালিক। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ এই চক্রের বাকি চাঁইদের ধরতে চাইছে। ইতিমধ্যে আরও দুইজনকে চিহ্নিত করেও ফেলেছে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: বাংলায় জঙ্গি মডিউল গড়তে হাতিয়ার রোহিঙ্গা ললনা, বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে জেহাদের ছক!]
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, হুগলির আরামবাগের প্রফুল্ল চন্দ্র সেন গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজের (যা আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ নামে পরিচিত) কর্মী প্রদীপ মল্লিকের সঙ্গে অবিনাশের পরিচয় ছিল। সেই সূত্রে লাশ পাচারের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বুধবার বর্ধমান মেডিক্যালের অ্যানাটমি বিভাগ থেকে ৩টি লাশ বের করে শববাহী গাড়িতে করে পাচারের চেষ্টা করছিল তারা। সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা তা রুখে দেন। পুলিশ গিয়ে ৫ জনকে আটক করে। তিনটি লাশ ও ভিসেরা নমুনা ঘটনাস্থল থেকে বাজেয়াপ্ত করে। অবিনাশকে জেরা করে পুলিশ প্রদীপ মল্লিকের কথা জানতে পারে। মেডিক্যাল কলেজের গেটের বাইরে সে অপেক্ষা করছিল। অবিনাশরা লাশগুলো গাড়িতে চাপিয়ে গেটের বাইরে বের করে দিলে সে সেখান থেকে সেগুলো নিয়ে যেতো। কিন্তু তার আগেই ধরা পড়ে যায় অবিনাশরা। তখন পালিয়ে যায় প্রদীপ।
অবিনাশ পুলিশকে জানিয়েছে, প্রদীপ আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজের কর্মী। তার বাড়ি কোথায় জানে না। তবে প্রদীপের শ্বশুরবাড়ি কলকাতার দক্ষিণেশ্বরে। সে চেনে। ওইদিন রাতে ধৃতদের নিয়ে দক্ষিণেশ্বরে অভিযান চালায় পুলিশ। তবে তাকে সেখানে পুলিশ পায়নি। সূত্রের খবর, কোনও একটি মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগ সাজিয়ে দেওয়ার বরাত পেয়েছিল আরামবাগের মেডিক্যাল কলেজের কর্মী প্রদীপ। কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের একটি সূত্র থেকে বর্ধমান মেডিক্যালের অবিনাশের যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হয় প্রদীপের। মোটা টাকার বিনিময়ে ৬টা লাশ দেওয়ার রফা হয়। অবিনাশ গৌতম ও নন্দলালকে শরিক করে লাশ পাচারের কাজে।
[আরও পড়ুন: আপাতত জ্যোতিপ্রিয়র চিকিৎসা কম্যান্ডে, ইডিকে বিকল্প হাসপাতাল খোঁজার নির্দেশ হাই কোর্টের]
পরিকল্পনা মাফিক বুধবার ৩টি লাশ দেওয়ার কথা ছিল প্রদীপকে। সেই অনুযায়ী ওই শববাহী গাড়িটি ভাড়া করে অবিনাশরা। অ্যানাটমি বিভাগ থেকে ৩টি লাশ বের করে গাড়িতে তুলছিল। কাগজপত্র ছাড়া শবদেহ নিয়ে যেতে আপত্তি করেছিল গাড়িচালক সুমন। অবিনাশ তখন জানিয়েছিল, “কোনও সমস্যা হবে না। আগেও এইভাবে দেহ বের করেছে তারা।” অ্যানাটমি বিভাগ থেকে লাশ পাচারের ঘটনায় ওই বিভাগের কয়েকজন কর্মীর যোগসূত্র পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তবে অবিনাশদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায় মেডিক্যাল কলেজের নিরাপত্তাকর্মীদের তৎপরতায়।