ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল ভাঙচুরের নেপথ্যে লুকিয়ে বিশ্বভারতীর (Visva-Bharati University) কোটি কোটি টাকার টেন্ডার ঘিরে রাজনীতি বা দুর্নীতির জটিল অঙ্ক। তদন্তে নেমে এমনটাই ধারণা ইডি আধিকারিকদের। তাই বিশ্বভারতীর গত কয়েক বছরের টেন্ডারের বিভিন্ন নথি তাঁরা খতিয়ে দেখছেন বলে জানা গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইডি’র (Enforcement Directorate) দুই আধিকারিক বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী-সহ আধিকারিকদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন। মেলারমাঠের পাঁচিলের কাজের টেন্ডারের সঙ্গে সিন্ডিকেটের কোনও যোগাযোগ ছিল কি না, তা বিশদে বোঝার চেষ্টা করেন তাঁরা। ঘটনার আগের ও পরের দিন ঠিক কী কী ঘটেছিল তা জানার পাশাপাশি সেইসব ঘটনার নেতৃত্বে কারা ছিলেন, তাও বিশদে শোনেন ওই তদন্তকারীরা। বিশ্বভারতীর তরফে দায়ের করা এফআইআর এবং সেগুলির প্রেক্ষিতে পুলিশের ভূমিকারও খোঁজ নেন। মেলামাঠের ভাঙচুরের সঙ্গে টেন্ডার প্রক্রিয়ার যোগসাজোশ নিয়ে অনুসন্ধানের পাশাপাশি কৌশলে গোটা ঘটনায় প্রভাবশালী কারও যোগাযোগ রয়েছে কি না, ইডি-কর্তারা তারও হদিশ পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহল সূত্রের খবর।
[আরও পড়ুন: প্রবল জলোচ্ছ্বাসে দিঘায় তলিয়ে গেল ৫টি ডাম্পার, বরাতজোরে বাঁচলেন চালকরা!]
প্রসঙ্গত, মেলামাঠে ভাঙচুরের ঘটনায় এক বিধায়ক, দুই পুরপ্রতিনিধি-সহ রাজনৈতিক কর্মীদের নাম জড়িয়ে ইতিমধ্যেই থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। একইসঙ্গে টেন্ডার নিয়ে দুর্নীতি হয়ে থাকলে বিশ্বভারতীর আধিকারিকের জড়িত থাকার বিষয়টিও তদন্তে এসে পড়বে মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা নাগাদ কলকাতা থেকে ইডির দুই আধিকারিক বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তাঁরা প্রথমে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন এবং পরে আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ছাড়াও ভারপ্তাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহতো, অ্যাকাউন্টন্স অফিসার তথা পৌষমেলা মাঠের পাঁচিলের দায়িত্বে থাকা সঞ্জয় ঘোষ-সহ বিভিন্ন দপ্তরের ১০ জন আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে ইডি’র দুই আধিকারিক বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঁচিল ভাঙচুরের দিন এবং তার আগের ও পরের দিনের ঘটনাক্রম জানতে চান। বিশ্বভারতী গত তিন বছরে কতগুলি টেন্ডার করেছে এবং ওই টেন্ডারগুলির দায়িত্বে কারা কারা ছিলেন তাও খুঁটিয়ে জানেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, বিশ্বভারতীতে একাধিক দুর্নীতি রুখতে সরব হয়েছেন উপাচার্য নিজে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বভারতীতে টেন্ডার ঘিরে আগেও একাধিক প্রশ্ন উঠেছিল। তাই টেন্ডারের পদ্ধতি খতিতে দেখার পাশাপাশি গত কয়েক বছরে কারা কারা টেন্ডার পেয়েছে, তা খতিয়ে দেখবে ইডি। একইভাবে টেন্ডারের সঙ্গে মালপত্র সরবরাহের কোনও সিন্ডিকেট যুক্ত আছে কি না, সেটাও দেখা হবে। এর জন্য বিশ্বভারতীর একাধিক আধিকারিক, ঠিকারদারকে জেরা করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, বিশ্বভারতীর বিভিন্ন পাঁচিল তৈরিতে নিম্নমানের ইট দেওয়া এবং দশ শতাংশ পর্যন্ত কমিশনের অভিযোগও রয়েছে ইডির কাছে। তাই টেন্ডারের সঙ্গে যারা যুক্ত সেই সব আধিকারিক, ঠিকাদারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হবে।
[আরও পড়ুন: করোনা বিধি উপেক্ষা করে সভায় ৪০০০ জনের জমায়েত! বিতর্কে বনগাঁর তৃণমূল নেতৃত্ব]
The post বিশ্বভারতীর পাঁচিলকাণ্ডের নেপথ্যে টেন্ডার জট, তদন্তের পর দাবি ED আধিকারিকদের appeared first on Sangbad Pratidin.