তাঁর বল যেমন আস্তে আসে তেমনই আস্তে আস্তে কথা বলেন। কিন্তু তাঁর ক্রিকেটার গড়ন যেমন সুচিন্তিত, কথাবার্তার ধরনও তাই। মইন আলি দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ জিতে উঠে গৌতম ভট্টাচার্য-এর টানা আট প্রশ্নের উত্তর দিলেন ওভালের মিক্সড জোনে।
প্রশ্ন: এ বারের বিশ্বকাপ দুটো বল-এ খেলা হচ্ছে বলে কার্যত বল রিভার্স সুইং করছে না। ২৫ ওভার পরে নতুন বল মানে ব্যাটসম্যানদের শক্ত বল মারতে আরও সুবিধে হচ্ছে। একে পাঁচজন করে ফিল্ডার সার্কেলের ভেতর। তার ওপর ছোট মাঠ। আপনার মতো স্পিনারদের কাজ খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে না?
মইন: এটা বলা উচিত হবে কিনা জানি না। টুর্নামেন্টের এটাই যখন প্লেয়িং কন্ডিশন। এটাই যখন অধুনা ওয়ান ডে ক্রিকেটের নিয়ম তো এভাবেই মানিয়ে চলতে হবে। তবে স্পিনারের প্রাণ যে ওষ্ঠাগত কোনও সন্দেহ নেই। সে বেচারি আত্মরক্ষা করবে কী করে? দিন দিন তো তার কাজ তীব্র যন্ত্রণার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
প্রশ্ন: এই যে আপনাদের ইংল্যান্ড টিম সম্পর্কে বলা হচ্ছে যখন তখন সাড়ে তিনশো তুলে দিতে পারে। এর সঙ্গে তো একটা বোলারদের মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার ব্যাপারটাও জড়িত থাকে। তাই না?
মইন: নিশ্চয়ই থাকে। আমার তো এখন নিয়মিত ভাবে মনে হয় আমার মতো ফিঙ্গার স্পিনারদের দিন ফুরিয়ে এসেছে। এখন বাঁচার রাস্তা একমাত্র রিস্ট স্পিন। আমি বলব ইন্ডিয়ান টিম যে এই চট করে ফিঙ্গার স্পিনার থেকে রিস্ট স্পিনারে ঝুঁকে গ্যাছে সেটা খুব বুদ্ধিমত্তার কাজ। ফিঙ্গার স্পিনার হয়ে আপনি কতটা কী করতে পারেন?
[আরও পড়ুন: ধোনি না সৌরভ, নেতা হিসেবে এগিয়ে কে? একান্ত সাক্ষাৎকারে অকপট ভাজ্জি]
প্রশ্ন: আপনি মইন আলি এত অসহায়ের মতো বলছেন আশ্চর্য লাগছে। কেন? সলিউশন বেরোচ্ছে না?
মইন: হতভাগ্য ফিঙ্গার স্পিনাররা আর কী নতুন বল বার করবে? আর্ম বল হতে পারে। ক্যারম বল হতে পারে। এর বেশি তো আর হবে না। তাতে ব্যাটসম্যানকে শর্টার ফরম্যাটে কী করে আটকে রাখবেন? তার হাতে এখন কত রকম শট। সে সুইচ হিট খেলে। স্কুপ খেলে। ইনসাইড আউট খেলে। তিন চার রকম সুইপ মারে। আটকাবেন কোথায়?
প্রশ্ন: মনে করুন আপনি ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপে খেলছেন না। স্রেফ ক্রিকেট বিশ্লেষক। টপ ফোর টিম বাছতে বলা হলে মইন আলির সিলেকশন কী হবে?
মইন: সবার আগে ইংল্যান্ড। ওভালে সবাই দেখেছে যে দিন আমাদের মনমতো যাচ্ছে না সে দিনও আমরা মানিয়ে নিয়ে কী ক্রিকেট খেলতে পারি। মনের মতো দিন হলে তো আর কথাই নেই। আমাদের খুব কাছাকাছি রাখব ইন্ডিয়াকে। এরপর অস্ট্রেলিয়া। এ বার ওয়ার্নার-স্মিথরা ঢুকে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ান টিমটা যথেষ্ট স্ট্রং। ওরা সবাইকে ভোগাবে। ক’টা টিম বললাম?
প্রশ্ন: তিনটে। ফোর্থ টিম বাছা এখনও বাকি আছে।
মইন: নিউজিল্যান্ড আছে। ওরা যথেষ্ট কম্পিটেটিভ। ওহ, বলাই হয়নি-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিন্তু কী করবে কেউ জানে না। হতেই পারে ওরা আমাদের জন্য অনেক চমক তৈরি রেখে দিয়েছে, তারপর পাকিস্তান! এ দেশে সবসময় চমকপ্রদ। কী করে বাদ দেবেন এদের হিসেব থেকে। ওহ, বলাই হল না-আফগানিস্তান।
[আরও পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের প্রস্তুতির ফাঁকে অন্য খেলায় মজে বিরাটরা]
প্রশ্ন: একটা টিমের নাম করেননি- সাউথ আফ্রিকা। ওভালে কি সমাধি হয়ে গেল প্রোটিয়াদের?
মইন: ভুলেই গেছি। করা উচিত ছিল। সাউথ আফ্রিকা যে কোনও সময় চমক দিতে পারে। ওভালে প্রথম ওভারে ইমরান তাহিরকে নিয়ে এসেছিল দেখলেন? আমি নিছক পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকার জন্য বলছি না। সত্যি সাউথ আফ্রিকা যে কোনও সময় ভয়ঙ্কর হতে পারে।
প্রশ্ন: কী বলছেন! আফগানিস্তান ফেভারিটদের মধ্যে?
মইন: ফেভারিট নয় হয়তো। কিন্তু আমার স্থির বিশ্বাস ওরা দু’-একটা ম্যাচে অঘটন ঘটাবে আর তার রেশটা গিয়ে পড়বে সেমিফাইনালিস্ট লিস্টে।
প্রশ্ন: আরসিবিতে একসঙ্গে খেলার সুবাদে বিরাট কোহলিকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন আপনি। মাঠের বাইরের বিরাটের সঙ্গে একটু আলাপ করিয়ে দিন যাকে কেউ চেনে না, জানে না।
মইন: বিরাটের মানসিকতা অবিশ্বাস্য। একটা কীর্তি তৈরি করেই অবলীলায় পরেরটার দিকে ঝাঁপাতে পারে। ও এমনভাবে তৈরি হয় যেন ম্যাচটায় শূন্য করে শেষ করল নাকি সেঞ্চুরি করেছে, বোঝার উপায় থাকে না। মাইন্ডসেটটাই একেবারে আলাদা! আমি দেখেছি একটা ইনিংস শেষ করতে না করতেই বিরাট পরের লক্ষ্য নিয়ে বসে যায়। আমি বিশ্বের এত ক্রিকেটার ঘেঁটেছি, বিরাট কোহলির মতো টেম্পারামেন্ট আর কারও মধ্যে দেখিনি!
The post ‘বিরাটের মতো মানসিকতা কারও মধ্যে দেখিনি’, কোহলির প্রশংসা ইংরেজ তারকার appeared first on Sangbad Pratidin.