তর্ক-বিতর্ক, সাফল্য-ব্যর্থতা- কত কিছুই না ঘটে গেল এই একটা বছরে। শীত-গ্রীস্ম-বসন্ত সমস্ত ঋতুই ছিল সমান উপভোগ্য। স্মৃতির অতলে ফের একবার ঢুঁ মেরে ফিরে দেখা যাক ২০১৭। কেমন ছিল সেই টলি-বলি-হলির সেই আপ্তবাক্যটি? এন্টারটেনমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট আর এন্টারটেনমেন্ট। হালহকিকত রইল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এ।
টলিউড
‘পোস্ত’টা এবার বেশ ভালই রান্না হয়েছিল এ বছর। ‘সহজ পাঠের’ প্রান্তরে ফুটেছিল ‘রক্তকরবী’। সেই সুবাসে বেজেছিল ‘বিসর্জনে’র সুর। বছর শেষে আবার অভিযানে শামিল দেব। সতেরোর সাত সতেরোয় এভাবেই টলিউড মেতেছিল বৈচিত্রে।
আন্ডারডগ-
সহজ পাঠের গপ্পো: রাস্তা ছিল কঠিন। শুরুটাও তেমন ভাল হয়নি। কিন্তু মুখে মুখে ছড়াল কথা। সিনেমাটা দেখেছিস? আরে সহজ পাঠের গপ্পো! সত্যিই সারল্যের রং মনে ধরিয়ে দিয়েছে পরিচালক মানস মুকুল পালের এ ছবি। গত তিন দশকে বাংলার কোনও শিশু অভিনেতা যে সম্মান পায়নি, সেই জাতীয় পুরস্কার উঠেছে নূর-আলমের হাতে। প্রেক্ষাগৃহে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে এখনও দিব্যি চলছে এই আন্ডারডগ।
রক্তকরবী: বছর শেষের সেরা সারপ্রাইজ ‘রেড ওলিয়েন্ডা’র্স রক্তকরবী’৷ হেডলাইনটা প্রথমবার দেখার পর নিজের চোখকেই বোধহয় বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বেশিরভাগ বাঙালি। সত্যিই তো! হ্যাঁ, সত্যিই, দ্বিতীয়বার পড়েই নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন সিনেপ্রেমী জনগণ। ‘নিউটন’-এর মতো সিনেমা যেখানে অস্কারের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছে, সেখানে নিজের ক্ষমতায় অস্কারের মূল পর্বে স্থান দখল করে নিয়েছে মুমতাজ, রাহুল, শান্তিলালদের এই সিনেমা। সেলিব্রেশন হয়েছে বড়দিনেই। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল এক্সক্লুসিভলি সে খবর দিয়েছিল আপনাদের।
[ফিরে দেখা ২০১৭: বছরভর কূটনীতির চালে কিস্তিমাতের কাহিনি]
বিতর্ক-
বিতর্কের তিন নাম ছিল এবার। পরিচালক অনীক দত্তের ‘মেঘনাদবধ রহস্য’, অরিন্দম শীলের ‘ধনঞ্জয়’ এবং পরিচালক রঞ্জন ঘোষের ‘রংবেরঙের কড়ি’।
অনীকের ছবির অফিশিয়াল টিজার মুক্তির পরই তৈরি হয় বিতর্ক। যাতে ‘কাব্য’ কেটে উপরে লেখা ছিল ‘রহস্য’। যা নিয়ে টুইটারে প্রশ্ন তোলেন প্রযোজক শিবাজী পাঁজা। বলেন, ‘এটা লজ্জাজনক। কী করে মাইকেলের নামের উপর একটা ছবিতে বাজিমাত করা পরিচালকের নাম বসানো হল?’ পরিচালকের জবাব ছিল, ‘মাইকেলের নাম কেটে আমার নাম লেখা হয়নি। অল্প একটা ওভারল্যাপ আছে। পুরো বিষয়টিতে হিউমার আছে। কেউ যদি সে রসে বঞ্চিত হন, তাহলে কিছু করার নেই।’ এরপর আবার ‘সংস্কারি’ সেন্সরের কোপে পড়ে অনীক দত্তের ছবিটি। ছবিতে ‘রামরাজ্য’ শব্দ নিয়ে ছিল আপত্তি। পরে তা মিউট করেই ফাঁড়া কাটে।
হেতাল পারেখ ধর্ষণ ও হত্যা মামলা। বহুল চর্চিত ও বিতর্কিত। ধারে ভারে, মামলার গতিপ্রকৃতিতে এবং বিতর্কেও। অভিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষী ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসি কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। যা আজও অমীমাংসিত। বিতর্কিত এই বিষয়কেই পর্দায় তুলে এনেছিলেন পরিচালক অরিন্দম শীল। তা নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। নতুন করে প্রশ্ন উঠেছিল পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। যার জবাবে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যেহেতু ছবির গোড়াতেই পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে এ ছবি কল্পনা আধারিত, তাই কোনওরকম সংঘাতে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
বছরশেষে বিতর্কে পড়তে হয় পরিচালক রঞ্জন ঘোষের ‘রংবেরঙের কড়ি’কে। নিজের ছবিতে দুই উপজাতি স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রের নাম রাম ও সীতা রেখেছেন পরিচালক। যা ফুটিয়ে তুলেছেন সোহম ও অরুণিমা। একে অপরের থেকে ডিভোর্স চায় রাম ও সীতা। এভাবে মহাকাব্যের চরিত্রের নাম সিনেমায় ব্যবহার করায় বিক্ষোভ দেখায় হিন্দু জাগরণ মঞ্চ।
[ফিরে দেখা ২০১৭: বছরভর বিতর্কের ঝড় উঠেছিল যে যে ঘটনায়]
পুজো রিলিজ-
এবার পুজোয় বাংলা সিনেমার দর্শকদের কাছে ছিল পোয়াবারো। এক শুক্রবারে মুক্তি পেল ছ-ছ’টি বাংলা সিনেমা। ‘ককপিট‘-এ আত্মপ্রকাশ করলেন প্রযোজক দেব। ‘ইয়েতি অভিযানে’ শামিল হলেন প্রসেনজিৎ। রাজ চক্রবর্তী বললেন ‘বল দুগ্গা মাইকি’। স্বপন সাহা করলেন ‘শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ হিসেবে প্রত্যাবর্তন। আর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় দিলেন ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর নস্ট্যালজিয়া। অগ্নিবাণ নিয়ে হাজির হয়েছিল ব্যোমকেশও। আখেরে কতটা লাভ হল? সে প্রশ্ন তর্ক সাপেক্ষ।
সাফল্য-
৬৪তম জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে ফের বাংলার মুখ হয়ে উঠলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়৷ কালিকাপ্রসাদের স্মৃতি মেখে ‘বিসর্জন’ পেল এবারের সেরা বাংলা ছবির সম্মান৷ প্রথম জাতীয় পুরস্কারের স্বাদ পেলেন অনুপম-ইমন৷ সেরা নেপথ্যগায়িকা হলেন ইমন চক্রবর্তী৷ সেরা গীতিকারের পুরস্কার উঠল অনুপম রায়ের হাতে৷
সাফল্যের নয়া নজির বছরশেষে গড়ল ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের ‘আমাজন অভিযান’৷ এবার ‘চাঁদের পাহাড়’-এর চরিত্রদের নিজের মতো করে সাজিয়েছেন পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়৷ তৈরি হয়েছে সবচেয়ে বেশি বাজেটের বাংলা ছবি৷ যার প্রচারে ‘বাহুবলী’-র থেকেও বড় পোস্টার রিলিজ করা হয়েছে৷ মোহনবাগান মাঠে সে ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছিলেন সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের দর্শকরা৷ ফের একবার শংকর হিসেবে দেবকে সাদরে গ্রহণ করেছেন সিনেপ্রেমীরা৷
[ফিরে দেখা ২০১৭: বছরভর শিখর ছোঁয়ার নানা মুূহূর্ত]
বলিউড
আন্ডারডগ-
বলিউডের এ বছরটা অফবিটদেরই ছিল৷ বক্স অফিসে লার্জার দ্যান লাইফ ক্যারেক্টারদের পিছনে ফেলে পর্দায় জীবন্ত হয়ে উঠেছিল ‘নিউটন‘, ‘তুমহারি সুলু‘র মতো সাধারণ চরিত্ররা৷ ‘নিউটন’ তো অস্কারেও ভারতের বাজি ছিল৷ ‘করিব করিব সিঙ্গল’-এ ম্যাচিওর লাভস্টোরি দেখান ইরফান৷ তিনিই আবার তুলে ধরেন ‘হিন্দি মিডিয়াম‘-এর কাহিনি৷ রাষ্ট্রপতি ভবনে পর্যন্ত দেখানো হয়েছে ‘শাদি মে জরুর আনা’৷ ‘বরেলি কি বরফি’, ‘শুভ মঙ্গল সাবধান’ তুলে ধরেছে পাশের বাড়িরই টক-ঝাল-মিষ্টি প্রেমের কাহিনি৷ আর এগুলোই সবচেয়ে বেশি মনে ধরেছে দর্শকদের৷
[ফিরে দেখা ২০১৭: সাত পাকে বাঁধা পড়লেন যাঁরা]
বিতর্ক-
পদ্মবতী: বিতর্কের শুরুতেই এ নামটি করতেই হবে৷ শুটিংয়ের সময় থেকেই কর্ণি সেনার তাণ্ডব চলছিল৷ কিন্তু তখন বোধহয় পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালি সিঁদুরে মেঘটি দেখতে পাননি৷ ছবি পোস্টার বের হতেই তার আঁচ গায়ে লাগল৷ কর্ণি সেনার সঙ্গে তাল মেলাল একাধিক রাজপুতানা সংগঠন, ব্রাহ্মণ মহাসভা৷ শাসক দলের হুমকিও আসতে লাগল৷ নায়িকার নাক কাটার ফতোয়া জারি হয়৷ সঞ্জয়-দীপিকার মাথা কাটার কথাও বলা হল৷ দীপিকার মাথার দাম ১০ কোটি টাকা ধার্য হল৷ নাহারগড় ফোর্টে মৃতদেহের পাশে পদ্মাবতীর বিরুদ্ধে বার্তা লিখে বিতর্ক ছড়ানোরও চেষ্টা হল৷ শেষে সুপ্রিম কোর্ট সিবিএফসি-র উপর দায়িত্ব দিল৷ সংসদীয় কমিটির কাছে জবাব দিলেন পরিচালক৷ তবে বছরশেষেও মেলেনি শংসাপত্র৷ এখনও আটকে ‘পদ্মাবতী’র মুক্তি৷ শেষে ছবির নাম পালটে ‘পদ্মাবত’ করার শর্তে শংসাপত্র দিতে রাজি হয় সিবিএফসি৷
নেপোটিজম: একটি শব্দেই তোলপাড় হয়েছে বি-টাউন৷ একদিকে ছিলেন কেবল কঙ্গনা রানাউত, অন্যদিনে করণ জোহর, সইফ আলি খান, বরুণ ধাওয়ান৷ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল করণ জোহরেরই চ্যাট শো ‘কফি উইথ করণ’-এ। প্রযোজক-পরিচালকের মুখের উপর কঙ্গনা বলে দিয়েছিলেন বলিউডে নেপোটিজম অর্থাৎ স্বজনপোষণের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক করণ জোহর। এই ঘটনা উল্লেখ করে নিউ ইয়র্কে IIFA-র মঞ্চে নায়িকাকে একহাত নেন করণ ও বরুণ। আর তাঁদের সঙ্গত দেন সইফ আলি খান। পরে অবশ্য বরুণ-সইফ ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন। করণও পরোক্ষে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। তবে নায়িকা ছেড়ে কথা বলেননি।
সংস্কারি সেন্সর: বছরভর সংবাদের শিরোনামেই ছিল সেন্ট্রাল বোর্ড ফর ফিল্ম সার্টিফিকেশন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই ছিলেন পহেলাজ নিহালনি। যার সংস্কারের ঠেলায় বলিউডের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল। শুরুটা হয়েছিল ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরখা’ দিয়ে।শালীন হওয়ার বাধ্যবাধকতা ছাপিয়ে পর্দা ফুঁড়ে যেন বেরিয়ে এসেছে নারীমনে লুকিয়ে থাকা লাস্যের কাহিনি। তাতে ২৭টি কাটের নিদান দিয়েছিল পহেলাজের নেতৃত্বাধীন সংস্থা। এরপর ছিল ‘বাবুমশাই বন্দুকবাজ’-এর পালা। ৪৮টি কাটের নিদান দেওয়া হয়েছিল নওয়াজের ছবিকে। শেষে অতিরিক্ত সংস্কারের ঠেলায় নিজের পদটিই খোয়াতে হয় পহেলাজকে। সেন্সর প্রধানের পদ থেকে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। সে পদে আসীন হন প্রসূন জোশী।
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি: এমনিতে ভদ্র, মৃদুভাষী, বিনয়ী অভিনেতা। বিতর্কের সাতেপাঁচে থাকেন না। তবে বছরটা তাঁর বিতর্কের মধ্যেই কাটল। সাধ করে আত্মজীবনী লিখেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ‘An Ordinary Life: A Memoir’। মন খুলেই প্রাক্তন প্রেমিকাদের কথা জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘মিস লাভলি’র সময় যে নীহারিকা নওয়াজকে ক্যামেরার সামনে চুমু খেতে লজ্জা পেয়েছিলেন সেই নীহারিকাকেই কীভাবে কোলে তুলে বেডরুমে নিয়ে গিয়েছিলেন। বাদ যায়নি প্রথম প্রেমিকা সুনীতা রাজওয়ারের কথাও। জানিয়েছিলেন, কীভাবে সুনীতার উচ্চাকাঙ্খার জন্যই ভেঙে গিয়েছিল সম্পর্ক। এতেই ক্ষেপে ওঠেন প্রাক্তনরা। নওয়াজকে মিথ্যেবাদী বলে একহাত নেন তাঁরা। সুনীতা আবার মানহানির জন্য ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণও চেয়ে বসেন। শেষে বিতর্ক থেকে বাঁচতে আত্মজীবনীই তুলে নেন নওয়াজ।
বিতর্ক এবছর কম হয়নি। নিজের টুইটের জন্য বারবার ট্রোল হয়েছেন ঋষি কাপুর। তবে তাতে দমে যাননি অভিনেতা। তাঁর টুইটের পালা আজও অব্যাহত। সোনু নিগমের আজান বিতর্কের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। ফতোয়া জারি হতে নিজে মিডিয়া ডেকে মাথা মুড়িয়ে ছিলেন সংগীত শিল্পী। ২২ বছরের গণধর্ষিতা কেন একা তিনজন পুরুষের সঙ্গে অটোয় উঠেছিলেন? এ প্রশ্ন তুলে সমালোচনার পাত্রী হন কিরণ খের। পরে অবশ্য তিনি জানান তাঁর কথার ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে। কিন্তু এরপরই ফের ভারতীয় সেনার ভুয়ো ছবি প্রচার করে বিতর্কে জড়ান বিজেপি সাংসদ তথা অভিনেত্রী। আবার সে ছবি শেয়ার করে যেচে বিতর্ক ঘাড়ে নেন শ্রদ্ধা কাপুর।
[ফিরে দেখা ২০১৭: বছরভর শিরোনামে থাকল যে ঘটনাগুলি]
সেরা রিলিজ-
প্রশ্ন একটাই ছিল। প্রায় দুই বছর ধরে সেই প্রশ্নেরই উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আপামর ভারতবাসী। উত্তর মিলল ২৮ এপ্রিল। মুক্তি পেল বাহুবলী দ্য কনক্লুশন। বাকিদের থেকে শোনার আগেই স্বচক্ষে সেই বিখ্যাত দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে চেয়েছিলেন সিনেপ্রেমীরা। আর তাই হলের সামনে উপচে পড়েছিল ভিড়। প্রথম ভারতীয় সিনেমা হিসেবে ১৫০০ কোটির ক্লাবে জায়গা করে নিয়েছিল প্রভাস, অনুষ্কা, রানা, তামান্নাদের এই ছবি। সেই হ্যাংওভার আজও কাটেনি।
এ বছর মুক্তি পায়নি। তবে বাহুবলীকে ছাপিয়ে নতুন করে বলিউডের মুখ রক্ষা করেছে আমিরের দঙ্গল। আর এর নেপথ্যে অবদান রয়েছে চিনা দর্শকদের। চিনে ব্যবসার সৌজন্যেই প্রথম কোন ভারতীয় ছবি নাম লেখাল ২০০০ কোটির ক্লাবে নাম লেখাল ভারতীয় ছবি।বক্স অফিসের নিরিখে বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসে সেরা কুড়ির মধ্যে ১৬ নম্বর স্থানে উঠে এসেছে ‘দঙ্গল’।
ঈশ্বর হয়ে কি কোনও মানুষ জন্মায়? হয়তো না। তবু এই মানুষের সাধারণ অরণ্যেই থাকে সেই পোস্টম্যান, যিনি ফিরি করতে পারেন ঘাম-রক্তে গড়া এক অসম্ভবের দুনিয়ার স্বপ্ন। মানুষ নির্বিকল্পভাবেই তাঁকেই বসায় ঈশ্বরের আসনে।‘শচীন: আ বিলিয়ন ড্রিমস’। রূপকথার এই জীবনকেই পর্দায় তুলে আনলেন পরিচালক জেমস এরস্কিন। মুগ্ধ হয়ে দেখলেন সিনেপ্রেমী দর্শকরা।
[ফিরে দেখা ২০১৭: শহরে শোরগোল ফেলল যে ঘটনাগুলি]
সাফল্য-
এত বছর ধরে বলিউডে কাজ করেছেন। প্রায় শ’খানেক সিনেমাও করে ফেলেছেন। কিন্তু যে সম্মান আজও অধরা ছিল সেই সম্মান ২০১৭-তেই ধরা দিল অক্ষয় কুমারের হাতে। জীবনের প্রথম জাতীয় পুরস্কার পেলেন অভিনেতা।
বছরটা দারুণ গিয়েছে বরুণ ধাওয়ানের। দু’টি সিনেমাই ব্লকবাস্টার। প্রায় চার গুণ টাকা কামিয়েছে ‘বদ্রিনাথ কি দুলহনিয়া’। ‘জুড়ুয়া ২’ সেজে আবার সলমন খানের জুতোয় পা গলিয়েছেন অভিনেতা। সে ছবিও সুপারহিট। সাফল্যের জেরে নিজের পারিশ্রমিকও বাড়িয়ে দিয়েছেন বরুণ।
[ফিরে দেখা ২০১৭: স্মৃতির সরণিতে রয়ে গেলেন যাঁরা]
হলিউড
আন্ডারডগ-
ওয়ান্ডার উওম্যান: সেরা অনেক রয়েছে৷ তবে এর মধ্যে থেকেও নজর কেড়েছে ‘ওয়ান্ডার উওম্যান’৷ ছবির সেরা পাওনা ইজরায়েলি অভিনেত্রী গ্যাল গ্যাডট৷ ছবির শুটিংয়ের সময় নাকি গর্ভবতী ছিলেন নায়িকা৷ তাও অ্যাকশন ফিল্মের শুটিং করেছেন৷
[ফিরে দেখা ২০১৭: সন্ত্রাসী কাণ্ডকারখানা যা উঠে এসেছিল শিরোনামে]
বিতর্ক-
অস্কার বিভ্রাট: বর্ণবিদ্বেষ, ট্রাম্পের সমালোচনা, নাম বিভ্রাট নিয়ে সরগরম ছিল ৮৯তম অস্কারের মঞ্চ। অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এবার সে বিতর্কতে পিছনে ফেলার চেষ্টা করল অস্কার কমিটি। এবার সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রত্যেক তালিকায় একজন করে কৃষ্ণাঙ্গ ঠাঁই পেয়েছেন।
তবে বিভ্রাট একটা ঘটে গিয়েছে এবারের অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের মঞ্চে। নাম বিভ্রাট। সেরা ছবির নাম ঘোষণা করতে গিয়ে লা লা ল্যান্ড-এর নাম বলে বসলেন ঘোষক। পরে আবার তা শুধরে মুনলাইট-এর হাতে ওঠে সেরার শিরোপা। এছাড়াও অস্কারের মঞ্চকে এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনার স্থান হিসেবে বেছেছিলেন মেরিল স্ট্রিপের মতো ব্যক্তিত্বরা।
হার্ভে ওয়েনস্টাইন: এক নামেই তোলপাড় হয়েছে হলিউড। কেঁচো খুঁজতে গিয়েই বেরিয়ে পড়েছে কেউটে। হলিউড প্রযোজকের বিরুদ্ধে প্রথম যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছিলেন দুই সাংবাদিক। ফাঁস করে দিয়েছিলেন প্রায় তিন দশক ধরে চলতে থাকা তাঁর কাস্টিং কাউচের কুকীর্তি। প্রায় শ’খানেক অভিযোগ উঠেছে প্রযোজকের বিরুদ্ধে। একে একে মুখ খুলেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, অ্যাশলে জুডরা।হলিউডের আগুনের সেই আঁচ বলিউডেও এসে পৌঁছায়। যৌন হেনস্তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে থাকেন বিদ্যা বালান, রাধিকা আপ্টে, কল্কি কোয়েচলিন, স্বরা ভাস্কর, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ারা। শুধু নায়িকারাই নন রণবীর সিং, আয়ুষ্মান খুরানারা মতো নায়করাও নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ্যে আনেন।
কেটি পেরি: মুড ভাল নেই৷ তাই বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন পোস্ট করে বসবেন! যার জেরে গোটা ভারচুয়াল জগত তোলপাড়৷ আর হলিউডের বাসিন্দা হয়েও তাঁকে পড়তে হবে ভারতীয়দের সমালোচনার মুখে৷ একথা বোধহয় ঠিক বুঝতে পারেননি মার্কিন গায়িকা কেটি পেরি৷ সেই কারণেই নিজের ‘মুড’ জাহির করতে দেবী কালীর এই ছবিটি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে বসেন তিনি৷ আর ক্যাপশনে লেখেন, ‘কারেন্ট মুড’৷ এক পোস্টেই শোরগোল পড়ে যায় নেটদুনিয়ায়৷
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া: এবারও হলিউডে ভারতীয়দের গর্ব প্রিয়াঙ্কা চোপড়া৷ কোয়ান্টিকোর তৃতীয় মরশুমের কাজ চলছে৷ একাধিক হলিউড ছবিতেও অভিনয় করছেন৷ আবার দর্শকের পছন্দের নিরিখে হলিউডে ফের সেরা ‘ড্রামাটিক টিভি অ্যাকট্রেস’ শিরোপা পেলেন৷ পেয়েছেন মাদার টেরিজা স্মৃতি পুরস্কার৷ বছরভর তিনিই হলিউডের রেড কার্পেটে ছিলেন ভারতের মুখ৷
[ফিরে দেখা ২০১৭: ভাইরাল হয়েছিল যে সব ঘটনা]
সেরা রিলিজ-
ডানকার্ক: পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান মানেই দর্শকদের প্রত্যাশা তুঙ্গে৷ তার পুরো মান নিজের ডানকার্ক ছবিতে বজায় রাখলেন পরিচালক৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এ কাহিনি দর্শকদের মন ছুঁয়ে গিয়েছে৷
অ্যানাবেল ক্রিয়েশন: বছর তিনেক আগে দর্শকদের শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিয়েছিল ‘আ্যানাবেল’৷ এ বছর তার উৎস সন্ধান করেছেন পরিচালক ডেভিড স্যান্ডবার্গ৷ এ অভিজ্ঞতাও এক দেখা সম্ভব নয়৷ তবুও দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে ভিড় করেছেন চেনা ভয়টি আরও একবার পেতে৷
[ফিরে দেখা ২০১৭: বছর জুড়ে যে সব ঘটনার ঘনঘটা]
সাফল্য-
হলিউডে ‘কাবিল’: ভারতীয় সিনেমা থেকে গল্প ধার নেবে বিদেশ। আর এর সূত্রপাত হতে চলেছে হৃতিকের ‘কাবিল’ সিনেমার হাত ধরে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন স্বয়ং ছবির পরিচালক সঞ্জয় গুপ্তা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ফক্স স্টার স্টুডিও আগ্রহ প্রকাশ করেছে ‘কাবিল’-এর হলিউড ভার্সান তৈরি করার জন্য। এর জন্য নাকি ফক্স ইন্টারন্যাশনাল প্রডাকশনের সভাপতি টমাস জেগুস নিজে ফোন করেছিলেন হৃতিককে। দু’জনের মধ্যে নাকি প্রাথমিক কথাবার্তাও হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, হৃতিকই নাকি হলিউড ছবির নায়ক হতে চলেছেন। আর যদি তা হয় তাহলে তা জুনিয়র রোশনের কাছে নিশ্চিতভাবেই একটা বড় ব্রেক হতে চলেছে।
দেসপাসিতো: এ বছরে সবচেয়ে হিট আন্তর্জাতিক গান কোনটি? উত্তর আসবে ‘দেসপাসিতো’৷ ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ সিরিজের ‘সি ইউ এগেইন’কে টপকে ইউটিউবে সবথেকে বেশি ‘ভিউ’ পাওয়া গানের জায়গা দখল করল দুনিয়া কাঁপানো এই পুয়ের্তোরিকান সংগীত৷
সেলেনা গোমেজ: সেপ্টেম্বর মাসে চমকে দিয়েছিল খবরটা৷ যখন জানা গেল লুপাস রোগে আক্রান্ত হয়ে কিডনি বিকল হয়ে গিয়েছিল পপ তারকা সেলেনা গোমেজের৷ বান্ধবী ফ্রান্সিয়া রাইসা তাঁকে নতুন জীবন দেন নিজের কিডনি দিয়ে৷ সেরে উঠেই নতুন সম্মান পান পপ তারকা৷ ইনস্টাগ্রামে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা ছাড়ায় ১৩ কোটি৷
রাশিচক্র ২০১৮: কী কী থাকছে নতুন বছরের ঝুলিতে?
The post ফিরে দেখা ২০১৭: কেমন ছিল টলি-বলি-হলির বিনোদনের সাত সতেরো? appeared first on Sangbad Pratidin.