শেখর চন্দ্র, আসানসোল: ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ পর্বের পর এবার পদক বিতর্ক! চুরুলিয়ার সংগ্রহশালায় রাখা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের (Kazi Nazrul Islam) দুটি পদক আসল নয়। তা রেপ্লিকা মাত্র। বিস্ফোরক এই তথ্য জানা গেল চুরুলিয়ায় বসবাসকারী কাজী নজরুলের পরিবারের মাধ্যমে। তাহলে আসল পদক কোথায়? উঠছে প্রশ্ন।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান চুরুলিয়া। কবির একটি সংগ্রহশালা রয়েছে সেখানে। সংগ্রহশালায় কবির খাট বিছানা থেকে শুরু করে ব্যবহৃত গ্রামোফোন, পোশাক, পান্ডুলিপি-সহ নানান জিনিসপত্র রাখা আছে। এর পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে কবির দুটি পদক। একটি ভারত সরকারের দেওয়া পদ্মভূষণ এবং আরেকটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া জগৎতারিণী পদক। সম্প্রতি দাবি উঠছে ওই দুটি পদক নাকি আসল নয় সে দুটি রেপ্লিকা মাত্র। প্রশ্ন উঠছে তবে আসল পদক দুটি কোথায় গেল? এই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বুদ্ধিজীবিরা। তাদের আশঙ্কা, সেগুলি হয়তো বা পাচার হয়ে গিয়েছে।
বিষয়টি মেনে নিয়েছেন কবি পরিবারের সদস্যরা। চুরুলিয়ায় থাকা কবির ভাইপো কাজী রেজাউল করিম এবং সম্পর্কে নাতনি সোনালি কাজীর দাবি, হয়তো পরিবারেরই কেউ নিয়ে গিয়েছেন এই পদক দুটি। তার বদলে তাঁরা রেপ্লিকা বসিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। সোনালিদেবীর দাবি, বেশ কিছুদিন আগে তিনি নিউ জার্সিতে একটি প্রদর্শনীতে ওই দুটি পদক দেখেছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থে কেউ ব্যবসা করার জন্য এই পদকগুলি চুরুলিয়া থেকে নিয়ে গেছে বলে তাঁর দাবি। ওই পদক যেই নিয়ে যাক না কেন পদকগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি প্রত্যেকের। সম্প্রতি চুরুলিয়ার নজরুল একাডেমি এবং তার সংগ্রহশালাকে টেকওভার করেছে আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। পদকগুলি ফিরিয়ে আনতে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় তৎপর হোক, এমনটাই চাইছেন অনেকে।
[আরও পড়ুন: কিরণ খেরের বদলে চণ্ডীগড় লোকসভা কেন্দ্রে BJP প্রার্থী কঙ্গনা? জবাব দিলেন নায়িকা]
বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী নজরুল চর্চা কেন্দ্রের সম্পাদক সঞ্জীবন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই ঘটনা আমরা শুনে অবাক হয়েছি। আমরা এতদিন জানতাম ওই পদকগুলি আসল। আমরা তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।” কবির ভাইয়ের ছেলে কাজী রেজাউল করিম বলেন, “আমরা যখন নজরুল একাডেমি তৈরি করি তখন আমি ওই একাডেমির সম্পাদক ছিলাম এবং কবির পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর কাছ থেকে ওই দুটি পদক আমরা নিয়ে এসেছিলাম। মাঝে আমি সম্পাদক পদে ছিলাম না। আবার যখন পরে দায়িত্ব পাই এবং নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় যখন সংগ্রহশালা ও একাডেমির দায়িত্ব নেয় তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাই এই দুটি পদক আসলে রেপ্লিকা।”
তিনি আরও বলেন, “আমি শুনেছি ২০০০ সালে ওই পদক দুটি এখান থেকে নিয়ে গিয়েছেন কবির পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী।” রেজাউল করিমের মেয়ে দোলনচাঁপার সম্পাদক সোনালি কাজী বলেন, “বহু ডলারের বিনিময়ে আমেরিকার নিউ জার্সিতে নজরুল নামাঙ্কিতে এগজিবিশন হয়েছিল এবং সেখানে ওই দুটি আসল পদক দেখানো হয়েছিল। ওই পদক ওদের কাছেই আছে। যেহেতু চুরুলিয়া নজরুল একাডেমি ও সংগ্রহশালাতে পদক দুটি দেওয়া হয়েছিল তাই অন্য কিছু না, ওই পদক গুলি আমরা ফেরত চাইছি মানুষের স্বার্থে। কারণ নজরুল জাতীয় সম্পত্তি, জাতীয় সম্পদ কারও ব্যক্তিগত নয়।”
এ বিষয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হলে কাজী নজরুল ইসলামের নাতি কল্যানী কাজীর ছেলে কাজী অনির্বাণ বলেন, “আমি এসব বিষয়ে কিছু জানি না। আমার মা জানেন। কিন্তু আমার মা মারা যাওয়ার পর এইসব প্রশ্ন কেন উঠছে? এর আগে কেন এসব প্রশ্ন তোলা হয়নি?” যদিও কাজী নজরুল ইসলামের যে চুরুলিয়াতে পরিবার রয়েছে তারা দাবি করেছেন ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটির যেভাবে গোপনে স্বত্বাধিকার বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে তার পরে কবি বিভিন্ন মূল্যবান সম্পত্তি কতটা সুরক্ষা থাকবে সেই নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।