সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গতকাল হড়পা বানে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। মনখারাপের সেই আবহে ভূস্বর্গে মৃত্যু হল এক সারস্বত ঐতিহ্যেরও। গত অর্ধশতক যাবৎ কাশ্মীরের বইপ্রেমীদের অন্যতম ঠিকানা ছিল বইয়ের দোকান ‘বেস্টসেলার’। ৪৫ বছর ধরে রমরমিয়ে চলার পর কাশ্মীরবাসীর সেই গর্বের ফলক রবিবার নিঃশব্দে মুছে গেল উপত্যকা থেকে।
সাহিত্য ও সংস্কৃতি মনস্ক জনতা মাত্রই জানত বেস্টসেলারের ঠিকানা হল শ্রীনগরের লালচক। পথচলা শুরু গত শতাব্দীর আটের দশকে সানাউল্লাহ চিলুর হাতে। প্রজন্ম বদলেছে ২০১৭ সালে। সানাউল্লাহর ছেলে সানি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দোকানের দায়িত্ব কাঁধে নেন। এরপর বদল হয় দোকানের ভিতরের সাজসজ্জার পাশাপাশি বইয়ের সংগ্রহেরও। উপন্যাস, নন-ফিকশনের পাশাপাশি কাশ্মীরি ইতিহাস, ইসলামি সাহিত্য, পরিবেশ ও কবিতার ভাণ্ডারটি আরও বড় হয়।
উপত্যকার বইপ্রেমী মাত্রই জানেন, বেস্টসেলার নিছক কোনও বইয়ের দোকান না। বই কেনার ছুঁতোয় এখানে জড়ো হতেন চিন্তাশীল নাগরিকরা। চলত নানা বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক-আড্ডা। ঠিক যেন কলকাতার এক চিলতে বইপাড়া। সেই ঠিকানাই আচমকা ঝাপ ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। দিল্লির বুকশপ, লখনউয়ের ব্রিটিশ বুক ডিপো, মুম্বইয়ের স্ট্র্যান্ড-এর মতোই ঝাঁপ ফেলে দিল বেস্টসেলার-ও। বইয়ের দিন কি একেবারেই ফুরিয়ে গেল?
হতাশা গলায় চিলু জানালেন, অনলাইন পৃথিবীতে পাঠকের চরিত্র বদলে গিয়েছে। কেউ আর ভিড় ঠেলে দোকান অবধি আসতে চান না। বলেন, "অনলাইনে বই বিক্রি শুরু হওয়ার পরে লোকজন অনলাইনেই বিপুল ছাড়ে বই কেনা শুরু করেছে।" তথাপি বেস্টসেলার তো আর পাঁচটা বইয়ের দোকান না। তাই সমাজমাধ্যমে মন খারাপের গন্ধ ভাসছে। এক নেটিজেন দুঃখ করে জানান, গোটা পৃথিবীর মতোই শ্রীনগরে এখন ক্যাফে বেশি গজাচ্ছে, কমছে বইয়ের দোকান। ভবিতব্য!