বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: বিখ্যাত পরিচালকদ্বয় রুসো ব্রাদার্স (অ্যান্থনি এবং জোসেফ রুসো) পরিচালিত ছবি ‘দ্য গ্রে ম্যান’ (The Gray Man) নিয়ে উৎসাহর প্রধান কারণ ছিল অবশ্যই ভারতীয় অভিনেতা ধনুষের হলিউড আবির্ভাব। রুসো ব্রাদার্স যাঁরা ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’-র অন্তর্গত ‘দ্য উইন্টার সোলজার’, ‘সিভিল ওয়ার’ এবং ‘অ্যাভেঞ্জার্স’-এর ‘ইনফিনিটি ওয়ার’ এবং ‘এন্ডগেম’-এর মতো হাই ভোল্টেজ অ্যাকশন ছবি পরিচালনা করেছেন– তাঁদের কাছে প্রত্যাশাও ছিল। মার্ক গ্রেনারির ‘দ্য গ্রে ম্যান’ উপন্যাস ভিত্তি করেই এই ছবি। অভিনয়ে এ-লিস্টেড অভিনেতারা। রায়ান গসলিং, বিলি বব থর্টন, ক্রিস ইভান্স, রেগে জ্যঁ পেজ (ব্রিজারটন খ্যাত), ওয়্যাগনার মোরিয়া (নারকোস খ্যাত), অ্যানা ডে অ্যাডামস এবং আমাদের দক্ষিণী সুপারস্টার ধনুষ।
[আরও পড়ুন: শাশ্বতর হাত ধরে ‘অচেনা উত্তম’ ছবিতে মহানায়ককে কতটা ফিরে পেলেন দর্শক? পড়ুন রিভিউ]
রুসো ব্রাদার্স-এর এই ছবি মূলত নির্ভরশীল ম্যাসিভ সেট, দুর্দান্ত ফরেন লোকেশন, অবিশ্বাস্য অ্যাকশন কোরিওগ্রাফি সেই সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য পাওয়ার প্যাকড অভিনয়। এই ছবির নায়ক রায়ান গসলিং-কে দেখা যায় সিআইএ এজেন্ট ‘সিয়েরা সিক্স’ হিসাবে। কিন্তু সর্ষের মধ্যেই ভূত। এজেন্সির অভ্যন্তরিন দুর্নীতি স্পষ্ট হয় এবং সিয়েরা সিক্স বুঝতে পারে তাকে ব্যবহার করা হচ্ছে একই সঙ্গে সে হাতে পেয়ে যায় উচ্চপদে থাকা ‘কার্মাইকেল’-এর গোপন তথ্য। ‘সিক্স’-এর লড়াই এবার কার্মাইকেল (অভিনয়ে রেগে জ্যঁ পেজ) এবং তার সঙ্গীর বিরুদ্ধে। সাইকোপ্যাথ লয়েড হ্যানসেনকে (অভিনয়ে ক্রিস ইভান্স) নিযুক্ত করা হয় ‘সিক্স’ নিধনে। গুলির ফোয়ারা, হেলিকপ্টারে তাড়া, আকাশ থেকে ঝাঁপ, চোখ ধাঁধানো স্থাপত্যে অ্যাকশন– কী নেই। বেসিক্যালি ভাল আর খারাপের যুদ্ধ। অপেক্ষায় আছি ধনুষ কখন দেখা দেবে। ভিলেনের বিশাল দলবলও যখন ‘সিয়েরা সিক্স’-কে ধরতে নাকানি চোবানি খাচ্ছে তখন লয়েড-এর খাস আদমি ‘অভীক স্যান’ (অভিনয়ে ধনুষ) পিকচারে গ্রান্ড এন্ট্রি নেয়। লয়েড তাকে ‘মাই তামিল ফ্রেন্ড’, বলে সম্বোধনও করে। সিয়েরা সিক্স এবং তার সঙ্গীকে একা হাতে পরাস্ত করে অভীক নিয়ে নেয় গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন চিপ। বলতেই হচ্ছে এই অ্যাকশন দৃশ্যে দুর্দান্ত লেগেছে ধনুষকে। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়।
ভারতীয় মানেই তার মূল্যবোধ খুব উচ্চস্থানে এমন একটা সাদা-কালো ধারনা আছে পাশ্চাত্যে। সেই ধারনা থাকা ভালই কিন্তু মূল্যবোধের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তাও আছে ভারতীয়দের এটা উপেক্ষা করা কেন! ধনুষ প্রথমে ভিলেনের হয়ে যুদ্ধ করে। সেই ইনফরমেশন চিপ ফেরত দিতে গিয়ে জানতে পারে লয়েড একটি অল্পবয়সি মেয়েকে কিডন্যাপ করে ব্ল্যাকমেল করছে। এবং প্রয়োজনে মেরেও ফেলতে পারে। তাতে ‘ধনুষ’-এর বিস্মিত রিঅ্যাকশন–‘ইউ আর কিলিং এ গার্ল!’ অভীক (ধনুষ যে চরিত্রে) কী এতই নির্বোধ, সে জানে না টাকার বিনিময়ে যাদের জন্য কাজ করছে তারা ছিঁচকে চোর বা স্মাগলার নয়। ব্যস, সে আর ভিলেনকে সাহায্য করবে না। টাকা নিয়ে ধার ধারে না। ইনফরমেশন চিপ নায়কের বন্ধুর হাতে ফেরত দিয়ে দেয়। ধনুষের স্ক্রিনটাইম যাই হোক– এত দুর্বল চরিত্রায়ন দেখে হতাশ লাগে। এই ছবি মূলত রায়ান গসলিং এবং ক্রিস ইভান্সের সংঘাতের ছবি। বাকিটা পুরোটাই চেনা ছকে ফেলা। একবার দেখার জন্য যথেষ্ট।