৭ অক্টোবর অনির্বাণ ভট্টাচার্যর (Anirban Bhattacharya) জন্মদিন। তার আগে নিজের ‘দশম অবতার’ ছবির নায়িকা জয়া আহসানকে (Jaya Ahsan) নিয়ে আড্ডা দিলেন অভিনেতা। দুই তারকার মুখোমুখি বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
‘দশম অবতার’ এবং আসন্ন ‘দুর্গরহস্য’ ধরলে পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার প্রায় ন’টা কাজ করা হয়ে গেল। সৃজিতের ফেভারিট যেমন আপনি, তেমন আপনার প্রিয় পরিচালকও কি সৃজিত?
অনির্বাণ: হ্যাঁ, সব মিলিয়ে প্রায় ন’টা কাজ। আমার কেরিয়ারের সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক সৃজিত, এতে কোনও সন্দেহ নেই। আমার পুরো এক্সপোজারটা, দর্শকের কাছে যে এত অল্প সময়ে, এই আট-নয় বছরের মধ্যে পৌঁছতে পেরেছি সেটার জন্য সৃজিতের সঙ্গে আমার যে ফিল্মোগ্রাফি তার একটা বিরাট অবদান।
জয়া, আপনিও দুটো ছবি করেছেন সৃজিতের সঙ্গে। সৃজিতের ছবি পুরুষকেন্দ্রিক। প্রবীর-বিজয়ের জুটি যতটা যত্ন পেয়েছে, আপনার চরিত্রও কি তেমন প্রাধান্য পেয়েছে? কেন রাজি হলেন?
জয়া: হ্যাঁ, আমারটাও যত্ন করে লেখা। আমাকে আগে যে চরিত্রগুলো দিয়েছে তার চেয়ে এই ‘দশম অবতার’ ছবিতে আমার চরিত্রের গভীরতা বা উপস্থিতির দিক থেকে ধরলে, আগের চেয়ে এগিয়ে আছে। এই ছবিতে আমি ‘মৈত্রেয়ী’। একজন মনোবিদ। অনির্বাণের চরিত্রের সঙ্গে একটা রোম্যান্টিক অ্যাঙ্গেল আছে। ভালো-মন্দ মিলিয়ে ‘মৈত্রেয়ী’ মানুষেরই মতো।
এখানে আপনি একজন ‘মনোবিদ’। অভিনেতা হিসাবে আপনি কি মানুষের মন পড়তে পারেন?
জয়া: না, মানে আমি খুব একটা চেষ্টাই করি না। আমি যাকে মন থেকে ভালোবাসি, বা যার সঙ্গে কমফর্টেবল তাকে নিয়েই ভাবি। তবে হ্যাঁ, দীর্ঘদিন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলি, আমার চারপাশের মানুষকে চিনতে পারি এটা বলব না, কারণ মানুষকে চেনার কিছু নেই। মানুষকে বিশ্বাস করতেই হয়, ভালোবাসতেই হয়, এটুকু বলতে পারি, আমি ভুল বুঝি না।
‘দশম অবতার’-এর সেটে, সৃজিত, প্রসেনজিৎ না অনির্বাণ কাকে বোঝা সবচেয়ে মুশকিল?
জয়া: অভিনয়ের দিক থেকে যদি বলো, তাহলে সবচেয়ে আনপ্রেডিক্টেবল অনির্বাণ। মানুষ হিসাবে তিনজনেই সহজ।
জয়া, ‘অর্ধাঙ্গিনী’ তো হিট। আরও একটা হিটের অপেক্ষায়?
জয়া: ছবির ব্যবসা হলে তো নিশ্চয়ই ভালো লাগে, কিন্তু ভালো ছবি বললে আরও বেশি ভালো লাগে। আমি হিসেবটা করি না, আমার মন থেকে যে ছবির স্ক্রিপ্ট ভালো লাগে সেই কাজটা করি। ব্যবসায়িক সাফল্যের কথা নিশ্চয়ই মনের ভিতরে কোথাও থাকে, কিন্তু সেটাকে সামনে আসতে দিই না, চরিত্রের খোঁজটা আগে করি।
‘রবিবার’-এ ‘প্রসেনজিৎ-জয়া’-র দারুণ কেমিস্ট্রি আমরা দেখে নিয়েছি। ‘অনির্বাণ-প্রসেনজিৎ’ জুটি কি নেক্সট ট্রেন্ড হতে চলেছে?
জয়া: ওদের জুটি দেখে পাগলা হয়ে যাবে।
অনির্বাণ: নিজের মুখে আর কী করে বলি (হাসি)। ছবি দেখে দর্শক বলুক। তবে হ্যাঁ, আমাদের কেমিস্ট্রি এই ছবির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সৃজিত চেয়েছিল আমি আর বুম্বাদা একসঙ্গে স্ক্রিপ্টটা শুনি। একসঙ্গে শোনার পর বুঝেছি কেন এটার দরকার ছিল। আলাদা করে ‘প্রবীর’ এবং ‘বিজয়’-এর চরিত্রের গ্রাফের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ এই জুটির রসায়ন। থ্রিলার অংশ বাদ দিলেও, দুজনের মধ্যে যে মানবিক দেওয়া-নেওয়া সেটাও খুব জরুরি।
কিন্তু আপনার ওপর অনেক জুটির দায়িত্ব। এদিকে প্রসেনজিৎ, জয়া আহসান। অন্যদিকে ‘দুর্গরহস্য’-তে সোহিনী সরকার। কোন জুটি হিট হবে?
অনির্বাণ: আমাকে এভাবে সৈনিক বানিয়ে দিও না (হাসি)। পুজো এমন একটা সময় যেখানে সব সময়ই বড় পর্দার কাজ একটু হলেও এগিয়ে থাকে। কিন্তু পুজোর ঢেউ কেটে গেলে আমার মনে হয় দর্শক বাড়িতে বসে ‘দুর্গ রহস্য’-ও দেখবে। কারণ, এটাও একটা বড় স্কেলের গল্প। আমি খুব হ্যাপি, যে দুটো বড় কাজ একই সময় আসছে। আর দুটোতেই জোড়া জুটি। এদিকে বুম্বাদা-জয়া, ওদিকে সত্যবতী-অজিত। দারুণ জোটাজুটি হয়েছে (হাসি)।
[আরও পড়ুন: ‘কালা পাত্থর’ হয়ে উঠতে পারল না অক্ষয়ের ‘মিশন রানিগঞ্জ’, অধিক মশলাতেই বাস্তব নষ্ট!]
আপনার আর জয়ার অনস্ক্রিন চুমু তো ভাইরাল!
অনির্বাণ: হ্যাঁ, এটা নিয়ে কী সব হচ্ছে না? আমি অবাক হয়েছি!
কতবার টেক দিতে হয়েছে চুমুর দৃশ্যে?
জয়া ও অনির্বাণ: চুমু এক টেকেই ওকে!
এর আগে ‘ঈগলের চোখ’ এবং ‘গোপনে প্রেম ছাড়ান’-এ আপনাদের একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। তা গোপনে কি প্রেম ছাড়ানো যায়? না কি প্রেমের রেশ এবারেও পাব?
অনির্বাণ: আমার কথা হচ্ছে গোপনে একটা প্রেম ছাড়ানো হয়তো যায়, কিন্তু যেহেতু পুরোটাই গোপনে হচ্ছে, তাই আরেকটা প্রেম হয়ে যাওয়ার চান্স থাকে। (হাসি)
সুমন মুখোপাধ্যায় না সৃজিত কে আপনাদের কেমিস্ট্রি বেটার পর্দায় তুলে ধরেছে বলে মনে হয়?
অনির্বাণ: সুমনদার ছবির গল্পটা খুব ইন্টারেস্টিং ছিল।
জয়া: গল্পটা পুরোটাই খুব রোম্যান্স বেসড।
অনির্বাণ: আন্তন চেকভের গল্প থেকে অ্যাডাপ্ট করা। লালদার খুব ইউনিক একটা স্টাইল আছে। সামনা-সামনি সব কিছু বলে দেয় না। কানে কানে এসে হয়তো বলল, ‘এই একটু হাতটা ধরে হঠাৎ করে চুমু খেয়ে নে..’। সবটাই একটা আড়াল রেখে, টুকরো, টুকরো করে ইনপুট দেয়। সেটা খুব ইনোসেন্সে ভরা, দু্ষ্টুমিতে ভরা। আর সৃজিত প্রথম দুটো টেক-এ তো অ্যাক্টরকে কিছু বলেই না।
জয়া: হ্যাঁ, সৃজিত চায় অভিনেতা একেবারে রেডি হয়ে আসবে। কখনওই অন্তত আমি দেখিনি সৃজিতকে সেট-এ ইনপুট দিতে।
অনির্বাণ: আর যা ইনপুট দেয় সেটা শটের মাঝখানেই। দুটো ছবির ক্ষেত্রে, প্রেমটা আলাদা হয়ে যাবে আমাদের চরিত্রর জন্যই। তবে দুটোতেই যেটা কমন, সেটা প্যাশন।
আগামিকাল ৭ অক্টোবর আপনার জন্মদিন। জন্মদিনে কী করতে ইচ্ছে করে, আর কী করতে হয়?
অনির্বাণ: আমার কাজ করতে ইচ্ছে করে। আমার ছোটবেলা থেকে স্মৃতিতে রয়েছে মায়ের পায়েস বানানো। এটা ছাড়া উদযাপন হয়নি। এটা এত দীর্ঘদিন ধরে হয়েছে যে আমার জন্মদিনে কোনও সেলিব্রেশন হলে অস্বস্তি হয়। কিন্তু যে পেশায় আছি, আমার কোনও অপশন নেই। আমি কৈশোরের অনেকগুলো জিনিসেই ফিরে যেতে চাই, তার মধ্যে একটা, আমার জন্মদিনের দিনগুলোতে। যেটা একেবারে আর পাঁচটা দিনের মতোই সাধারণ, মায়ের হাতের পায়েস আর সকালে বাবা-মায়ের মুখে ‘শুভ জন্মদিন’ শোনা ছাড়া।
অনির্বাণ যদি আপনাকে বলা হয় মেক এ উইশ…
অনির্বাণ: কোনওভাবে যদি টাইম সাইকেলটা ঘুরিয়ে দেওয়া যেত! এই অসহ্য সময়টা ‘রিসাইকেল’-এ নিয়ে গিয়ে যদি শুরু করা যেত… বাজে বকছি, আসলে যদি ওই ইনোসেন্সে ফিরে যাওয়া যেত, এই হিংস্র সময় থেকে বেরিয়ে, তাহলে হয়তো অভিনেতা হতাম না। কিন্তু চারপাশের মানুষগুলো বেটার থাকত…
জয়া আপনাকে যদি অনির্বাণকে জন্মদিনে উপহার দিতে বলা হয়!
জয়া: অনির্বাণকে জন্মদিনের উপহার? জড়িয়ে ধরে আরেকটা চুমু খেয়ে নেব…আর কী দিয়ে মানুষকে খুশি করা যায়…মানে, মন থেকে চুমু খাব…দেখানোর জন্য নয় কিন্তু (হাসি)।
আপনারা দুজনেই অভিনেতা হিসাবে একটা জায়গা করেছেন দুই দেশে। পরস্পরের সঙ্গে কাজও করেছেন। দুজনে দুজনকে কিছু বলতে চান? যা বলা হয়নি, বা যদি কোনও প্রশ্ন থাকে…
জয়া: প্রশ্ন? আমার কোনও প্রশ্ন নেই। তবে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ও খুব প্রেশার নেয়, কাজের ক্ষেত্রে। আমার যদি উপায় থাকত, তাহলে ওর হাতটা ধরে বের করে নিয়ে আসতাম, বলতাম ঠিক আছে, অত ভেব না। এই যে অস্থির সময়ের কথা বলছে, সেটারও তো একটা প্রেশার তৈরি হয়। সেই সময়টার থেকে যদি বের করে আনতে পারতাম, ভালো হত। একজন মানুষ হিসাবে মনে হয় ওর মতো একজন যার জীবন সম্পর্কে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে, যে জীবনকে অন্যভাবে দেখে, তেমন মানুষ একটু কম পাওয়া যায়… তাই আমার হাতে থাকলে ওকে একটু স্বস্তি দিতাম…।
অনির্বাণ: জয়া সম্পর্কে আমার একটা অবজারভেশন আছে বলতে পারো। দীর্ঘদিন জয়ার সঙ্গে কাজ করেছি। তাই সুযোগ হয়েছে কাজের বাইরে আড্ডা দেওয়ার। তার মধ্যেই কথা বলে মনে হয়েছে যে, এত ভিতরের কথা বোধহয় আমার সঙ্গে কেউ বলেনি। ভিতরে কথা মানে ভিতরের মতো করে কথা, যেন আপনজনকে বলছে, আর সেই কথা ফল্গুধারার মতো বেরিয়ে আসছে। আবার এটাও মনে হচ্ছে যে সব কটা কথার উত্তরে বা প্রশ্নে রহস্য আছে। মাথা অন্য জায়গায় আছে, এখানে কেবল সে বসে আছে। তখন মনে হয়েছে এই রহস্যটা করার কী দরকার? সেটা আর বলিনি জয়াকে। কারণ রহস্য না থাকলে আর মানুষ কী!