shono
Advertisement

ছবি বিশ্বাসকে কি টেক্কা দিতে পারলেন ‘কাবুলিওয়ালা’ মিঠুন? পড়ুন রিভিউ

পরিচালক সুমন ঘোষ গল্পে এনেছেন নতুন চরিত্রও।
Posted: 12:26 PM Dec 22, 2023Updated: 12:41 PM Dec 22, 2023

চারুবাক: রবীন্দ্রনাথ “কাবুলিওয়ালা” গল্পটি লিখেছিলেন ১৮৯৯ সালে। শতাধিক বছর পর সেই গল্পের তিন নম্বর চিত্রায়ন ঘটল। গল্পের সময় বদলে গেল উনিশশো সাটের মাঝামাঝি! অন্যতম কারণ,রবীন্দ্রনাথের কলমের ওপর আর কারও কলম চালাতে আইনত কোনও বাধা নিষেধ নেই। সেই সুযোগ নিয়েই পরিচালক সুমন ঘোষ আফগানি কাবুলিওয়ালা রহমতকে পৌঁছে দিলেন উত্তম কুমার অভিনীত “রাজকন্যা” ছবির মুক্তির সময়, ইস্টবেঙ্গল – মোহনবাগান দল নিয়ে ময়দান মুখরিত হওয়ার সময়। এবং আরও বড় কথা,দেশ জুড়ে তখন ভারত -পাকিস্তান যুদ্ধের এক উত্তপ্ত পরিবেশ। যেখানে বিশাল চেহারায় অদ্ভুত পোশাকে বিদেশি কাবুলিওয়ালাকে খুব সহজেই “ছেলেধরা” তকমা দেওয়া হতো! এমনকী, আনা হল প্রতারক এক খল চরিত্র(কাঞ্চন মল্লিক), যাঁকে দিয়ে রহমতের উদ্দেশ্যে চারিত্রিক দোষের অনুযোগ তোলানো হল!

Advertisement

আগের দুটি বাংলা ও হিন্দি সংস্করণে এমন ঘটনার কোনও সংযোজন হয়েছে বলে তো মনে পড়ছে না! হয়তো এমনটাই ঘটে বা ঘটাতে হয় কালহীন কোনও রচনাকে “সমসাময়িক” করে তোলার তাগিদে! ১৯৫৭ বা ১৯৬১ সালে তপন সিংহ এবং হেমেন গুপ্তকে তো এমনটি করতে হয়নি! অথচ তাঁদের বাংলা ও হিন্দি ভাষার “কাবুলিওয়ালা” আমজনতার প্রিয় হয়েছিল। বিদেশ বিভুয়ে এসে আত্মজা বিচ্ছিন্ন এক পিতার কন্যা স্নেহ পীড়িত হয়ে সমবয়সী এক কিশোরী মিনির সঙ্গে “বন্ধুত্ব” নিয়ে যে এক পবিত্র সম্পর্ক তৈরি হয় – সেটাকেই অশিক্ষার কারণে ‘ অপরাধ’ হিসেবে দাগিয়ে দেওয়া হয়! এটাই গল্পের মূল বিন্দু! বিনা অপরাধে দীর্ঘ সময় জেল খাটার পর বেরিয়ে রহমত সেই কিশোরী মিনিকেই দেখতে চেয়েছিল। পায়নি, মিনি তখন বিবাহযোগ্যা তরুণী, মিনিও ঠিকঠাক মনে করতে পারেনি অতীত! ভাঙা মন নিয়ে সে পাড়ি দিয়েছে এবার নিজের মেয়েকে দেখতে। গল্পতো এটুকুই!

[আরও পড়ুন: কাকভোরে বাদশা-বন্দনা, ‘ডাঙ্কি’র শোয়ে হলে পুড়ল দেদার আতসবাজি, ‘লুট পুট গয়া’ শাহরুখ ভক্তরা]

আবার এটাও বলতেই হচ্ছে – চিত্রনাট্যকার সুমন ঘোষ এমন দু তিনটি ছোট চরিত্র এনেছেন, যাঁদের ক্ষণিক উপস্থিতি সিনেম্যাটিক্যালি বেশ কয়েকটি সুন্দর মুহূর্ত তৈরি করেছে! যেমন রাস্তার ধরে পড়ে থাকা ফুটপাথ বাসী নিমাই ঘোষ। এই চরিত্রটি কোনও কথা বলেনি, শুধু চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দিয়েছে অনেক কিছু! আর একটি চরিত্র পাশের বাড়ির ঝুল বারান্দায় নিশব্দে বসে থাকা বৃদ্ধ জ্যেঠুমণি! অভিনয় নিয়েও তুলনা করা বৃথা! মিঠুন সেটা বুঝেছিলেন বলেই – একেবারে নিজস্ব স্টাইলে সাজিয়েছেন রহমতকে। তাঁর অভিনয়ে যথেষ্ট পরিমাণে আন্তরিকতা রয়েছে। পরিচিত মিঠুনের হাবভাব থেকে সরে এসে তিনি এক স্নেহপ্রবণ পিতাকে মিনির সামনে তো বটেই, ক্যামেরার সামনেও মেলে ধরেছেন। তাঁর অভিনয়ের আন্তরিকতাই ছবির শেষ দৃশ্যটি দর্শককে উত্তরণ ঘটিয়ে দেয় এক মানবিক ও মর্মস্পর্শী অনুভূতিতে। এটাই পুরো ছবির সেরা মুহূর্ত।

ছবিতে আরও একজনের সোচ্চার উপস্থিতি ব্যাক গ্রাউন্ড স্কোর এবং গানের জন্য – তিনি হলেন সুরকার ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত! তিনি মিনি ও রহমতের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার কিছু মুহূর্ত বেশ হাল্কা সুরের সংযোজনে জীবন্ত করে তুলেছেন! মিনির লেখক বাবা (আবির চট্টোপাধ্যায়) ও ঘরোয়া মায়ের (সোহিনী সরকার) সংসারিক মুহূর্তের সঙ্গে জাত ধর্ম দেশ নিয়ে জ্ঞানগর্ভ ভাষণ একটু ভারী লেগেছে। অন্তত ষাটের দশকের কথা মনে রেখে। সুমন ঘোষের পরিচালন কৌশলে স্বাভাবিক ঘরোয়া চলনটাই ভালো লাগে। আরোপিত কোনো দৃশ্য নেই! তবুও, বলতেই হচ্ছে – সুমন ঘোষের “কাবুলিওয়ালা” র আধুনিক হয়ে ওঠার কোনো প্রয়োজন ছিল না!

[আরও পড়ুন: ভক্তি বড় বালাই! এক্স হ্যান্ডেলে ৫০ মিনিট শাহরুখের ‘ডাঙ্কি’র লাইভ স্ট্রিম, রিভিউ দিলেন দর্শকরা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement