shono
Advertisement

কবিতার মতো ছবি শ্রীজাতর ‘মানবজমিন’, দারুণ অভিনয়ে মন জয় পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের

ভাল লাগবে পরম-প্রিয়াঙ্কা জুটিও।
Posted: 05:12 PM Jan 06, 2023Updated: 02:24 PM Jan 07, 2023

চারুবাক: শ্রীজাত কয়েকদিন আগেই সম্ভবত বলেছিলেন,”আমি বিদ্বজন নই, কলমজীবী।” এবার তিনি বুঝিয়ে দিলেন কলমজীবী শ্রীজাত ইচ্ছে করলে সিনেমাজীবী হতেই পারেন। তাঁর প্রথম নিবেদন “মানবজমিন” বক্তব্যের গভীরতায়, জীবনধর্মী ভাবনায় তো বটেই, সিনেমার ভাষাকেও কবিতা এবং সাহিত্যের অলঙ্কারে সাজিয়ে তুলতে বেশ যত্নবানই নয়, বেশ পরিপাটি, স্নিগ্ধ, মনোরম, মনোগ্রাহী এবং সবার ওপরে ‘বই’ নয়, শ্রীজাত ‘মানবজমিন’ সিনেমাই হয়ে উঠেছে।

Advertisement

‘মানবজমিন’ আসলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নাম। ব্যাংক কর্মী সংকেত (পরমব্রত) আর তার প্রেমিকা কুহু (প্রিয়াঙ্কা) অনাথ গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য একটা স্কুল তৈরি করতে চায়। সরকারি অনুদানে জমি পেয়েছে। দরকার স্কুল বিল্ডিং তৈরির জন্য অর্থ। সেটা প্রায় হঠাৎই পেতে পেতেও হাতছাড়া হয়ে গেলে হতাশ হয় দু’জনেই। একটা আলোর দেখা মেলে সংকেতের পয়সাওয়ালা জ্যাঠা বরেনবাবুর(পরাণ) মধ্যে। তিনি ব্যবসা বাণিজ্য করে রীতিমত অর্থবান! ইহকলে দাঁড়িয়ে তিনি পরকালের কথা ভাবেন, পরিকল্পনা করেন সারাক্ষণ। আবার তিনি বাংলা সিনেমার দুঁদে অভিনেতা ছবি বিশ্বাসের অন্ধভক্ত। ঘরের দেওয়াল জুড়ে তাঁর ছবি, ঠাকুরের বদলে ছবি বিশ্বাসের ছবিকেই তিনি ধূপ-দীপ জ্বালিয়ে পুজো করেন। স্বর্গে ঠাঁই পাবার জন্য রাস্তার কুকুর বেড়ালদের খাবার বিলি করেন। কিন্তু ‘মানবজমিন’ এর স্কুলের জন্য আর্থিক সাহায্যে রাজি নন।

[আরও পড়ুন: ‘রাহুলের থেকে অনেক কিছু শিখেছি, অস্বীকার করব না’, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অকপট প্রিয়াঙ্কা ]

এবার কীভাবে নির্মীয়মাণ বাড়ির জন্য স্বর্গলোভী জ্যাঠার কাছ থেকে পঁচাত্তর লাখ টাকা আদায় করে সংকেত ও কুহু – সেটাই দর্শককে হাসি, মজা, রহস্য ও নাটকের ব্যবহারে শ্রীজাত উপস্থিত করেছেন দর্শকের ভালো লাগানোর কথা ভেবেই! গল্পে ঢুকে পড়েছেন স্বর্গে রিয়েল এস্টেট ‘আকাশ প্রদীপ’-এর দুই দালাল জীবন ও বিজন। এবং সেই এস্টেটের প্রচার করতে এসে যান স্বয়ং পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় স্বনামেই! এগুলো চমক ঠিকই, কিন্তু মিষ্টি চমক!

শ্রীজাতর চিত্রনাট্য শুধু হাসি মজায় মাখানো নয়, গানে কবিতায় নান্দনিক সৃজনে সিনেমার ভাষায় সম্পৃক্ত। তাঁর নিজের কবিতা তো আছেই, শঙ্খ ঘোষের কবিতাও ছবির শেষ পর্বে সুন্দর ব্যবহার করেছেন। “তুমি সুখী হলে দুঃখ হারিয়ে যায়….” গানটি তো বটেই, এমনকী, প্রচলিত রামপ্রসাদী গান “মন রে কৃষি কাজ জানো না…”কেও সুচারু কৌশলে ব্যবহার করেছেন। রয়েছে সংলাপের মধ্যেও হাস্যরস, ব্যঙ্গ, কিছুটা বিদ্রুপের আভাসও। ছবির শুরু সংকেত – কুহুর চুম্বনের দৃশ্য দিয়ে, শেষও হয় দু’জনার চুমু খাওয়ায়। কিন্তু, এই ছবি তো নিছক কমেডি নয়,তাই ফিরে আসে রবীন্দ্রনাথের কবিতা “অমল ধবল পালে….” । এক স্নিগ্ধ অনুভূতি ও নান্দনিক প্রাপ্তি দর্শককে ভরিয়ে দেয়। বাণিজ্যকে অস্বীকার করে নয়, ‘মানবজীবন’ ছবি শিল্প ও বাণিজ্যের এক সুষম সহবস্থান। বরেনবাবুর হৃদরোগের পর হৃদয় পরিবর্তনের পর্বটি সেই অবস্থানের ব্যাপারটি স্পষ্ট করে। রূপঙ্করের গাওয়া গানটি কাজ করে একটি সুন্দর আলপনার! এগুলোই এই ছবির সৌন্দর্য!

হ্যাঁ, অভিনয়ের কথা অবশ্যই বলতে হবে! বিশেষ করে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত ও প্রিয়াঙ্কা – সক্কলেই দর্শকের মন জয় করতে কোনও ত্রুটি রাখেননি। বাড়তি নম্বর বরাদ্দ পরাণদার। একটাই কিঞ্চিৎ আফসোস – বিভিন্ন দৃশ্যে আবহে অপ্রয়োজনীয় বাজনার ব্যবহার, এদিকে একটু নজর দেওয়া উচিত ছিল।

[আরও পড়ুন: একঘেয়ে চিত্রনাট্য আর অতিরঞ্জিত অভিনয়ই ডোবাল রণবীর-রোহিতের ‘সার্কাস’কে]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement