দেবব্রত দাস, খাতড়া: টোটোয় বাজছে রং বাহারি নানা গান। সেই গানের তালে নানা রং এর পোশাকে নানা সাজে সজ্জিত হয়ে ওরা আসছেন। কেউ সেজেছেন রাবণ। কেউ রাম লক্ষ্মণ। হনুমান । কেউ সুগ্রীব, বালি। কেউ আবার শূর্পনখা। কেউ আবার পুতনা রাক্ষসী।
বাঁকুড়ার খাতড়া থানার বেনিয়াবাইদ ফুটবল ময়দানে মাঘের একান পরবে অনুষ্ঠিত শুরু হয় রাক্ষস মেলা। এই রাক্ষস মেলাতেই গ্রামের ছেলেরা জীবন্ত রাক্ষস সাজেন। তবে শুধু রাক্ষস নন। রাম, লক্ষ্মণও সাজা হয়। দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলে রাত পর্যন্ত। মেলা প্রাঙ্গণে নানা রকমের মাটির মূর্তি তৈরি হয়। তবে এই মাটির মূর্তির থেকেও বেশি চোখ টানে জীবন্ত নানা রাক্ষসের মূর্তি। আর এই রাক্ষসের মেলাকে ঘিরে খাতড়া ব্লকের সিমচাকা, ধবনী, জামদা, দক্ষিণবাইদ, শালুকা, রাধানাথপুর, দাতারামপুর, গোয়ালাডাঙা, পরকুল, মকরা, কাঁকড়াদাড়া, ভেদুয়া, শিকরাবাইদ, লেবদেপাড়া, বনশোল, চন্দনপুর সহ ১৬-১৭ টি গ্রামের বাসিন্দারা ভিড় জমান। বেনিয়াবাইদের ফুটবল মাঠের একপ্রান্তে শাল গাছের তলায় বামনি সিনি, কালীর পুজো অনুষ্ঠিত হয়। পাঁঠা বলিও হয়। এই পুজোর পাশাপাশি বসে মেলা। এলাকাবাসীর কাছে এই মেলা ‘রাক্ষস মেলা’ নামেই পরিচিত।
[আরও পড়ুন: ইয়েমেনে হাউথি ঘাঁটিতে ফের মিসাইল হামলা আমেরিকার, মধ্যপ্রাচ্যে ছড়াচ্ছে যুদ্ধের আগুন?]
ভেদুয়া মেলা কমিটির নদীয়াচাঁদ দাস, গণেশ দাস বলেন, “বেনিয়াবাইদে একান উপলক্ষে বামনি সিনি, কালীর পুজো হয়। শতাব্দী প্রাচীন এই পুজো এখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে মেলা অনেক পরে শুরু হয়েছে। মেলায় মাটির নানা দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করা হয়। তবে এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ গ্রামের ছেলেরা নিজেরাই রাক্ষস-সহ নানা দেবদেবী সাজেন। নিজেরাই ব্যান্ডপার্টি করে মেলায় আসেন। জীবন্ত এই রাক্ষস, দেব দেবীর মূর্তি দেখে মেলায় আগত দশনার্থীরা আনন্দ পান। এই মেলায় জীবন্ত রাক্ষস সাজা হয় বলে আমাদের কাছে এই মেলার নাম রাক্ষস মেলা।” মেলায় সুগ্রীব সাজা রুনু দাস, হনুমান সাজা দেবাশিস দাস বলেন, “একান এই মেলায় আমরা নানা রকমের রাক্ষস, দেব দেবী সেজে নৃত্য করি। আমরা এই সাজে খুবই আনন্দ পাই। মেলা দেখতে আসা দর্শনার্থীরাও আমাদের এই ভিন্ন ভিন্ন সাজ দেখে আনন্দ পান। তাই আমরা ফি বছর এই রকম সেজে মেলায় আসি।”
মেলা কমিটির অন্যতম সদস্য শালুকা গ্রামের বাসিন্দা ক্ষিতীশ মাহাতো বলেন, “প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ করে এই মেলা বসে। এই রাক্ষস মেলাকে ঘিরে আশেপাশের বহু গ্রামের বাসিন্দারা আনন্দে মাতোয়ারা হন। মেলা দেখতে বহু দূর দূরান্ত থেকে অনেক মানুষজন আসেন। ভীষণ আনন্দ হয় সকলের।” মেলা দেখতে যাওয়া খাতড়ার বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, “রাক্ষস মেলায় দুর্দান্ত সাজে সজ্জিত হয়ে মেলা প্রদক্ষিণ করেন ওরা। মাটির মূর্তির পাশাপাশি জীবন্ত নররূপী রাক্ষস, দেবদেবীর দেখা মেলে এই মেলায়। রকমারি জিনিসের কেনাকাটার মাঝে এদের দেখে মন ভরে যায়। তাই প্রতি বছর মেলা দেখতে যায়।”