সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারত-নেপাল সীমান্ত নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন অভিনেত্রী মনীষা কৈরালা। সম্প্রতি ভারতের কালাপানি, লিপুলেখ ও লিমপিয়াধুরা অঞ্চলকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে কাঠমাণ্ডু। এরপরই নেপালের হয়ে সওয়াল করতে গিয়ে নেটিজেনদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় মনীষাকে। এবার অভিনেত্রীর মন্তব্যের নিন্দা করলেন সুষমা স্বরাজের স্বামী তথা ক্রিমিনাল আইনজীবী ও মিজোরামের প্রাক্তন রাজ্যপাল স্বরাজ কৌশল। মনীষাকে ভারত ও নেপালের মধ্যকার বন্ধনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন অভিনেত্রী তাঁর বক্তব্যে চিনকে টেনে এনে ঠিক কাজ করেননি। এ প্রসঙ্গে একাধিক টুইট করেন স্বরাজ কৌশল।
বুধবার নেপাল তার ভূখণ্ডের অংশ হিসাবে লিপুলেখ, কালাপানি এবং লিমপিয়াধুরাকে অন্তর্ভূক্ত করে। উপরোক্ত অঞ্চলগুলি নিয়ে ভারতের সঙ্গে নেপালের চাপানউতোরের মধ্যে নেপালের সমর্থনে টুইট করেন মনীষা। বিতর্কিত অঞ্চলগুলিকে নেপালের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে টুইট করার পরে নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ জ্ঞাওয়ালির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন কৈরালা। লিখেছিলেন, “আমাদের ক্ষুদ্র দেশের মর্যাদা রক্ষার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা সকলেই এখন তিনটি দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক সংলাপের প্রত্যাশায় রয়েছি।” তিনটি দেশ বলতে মনীষা ভারত, নেপাল এবং চিনের কথা বলেন। আর এরপরই স্বরাজ কৌশল মনীষার বিরুদ্ধে কথা বলতে সোশ্যাল মিডিয়ার আশ্রয় নেন।
কাঠমান্ডুতে জন্মগ্রহণকারী মনীষা নেপালি রাজনীতিবিদ প্রকাশ কৈরালার কন্যা। তাঁর দাদা বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালা ১৯৫৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত নেপালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। স্বভাবতই রাজনীতি মনীষার রক্তে। কিন্তু এবার তিনি চিনকে তাঁর বক্তব্যে ঠিক কাজ করেননি বলে জানান স্বরাজ কৌশাল। তিনি মনীষাকে ১৯৯৪ সালের ‘১৯৪২: আ লাভ স্টোরি’র প্রিমিয়ারের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, তিনি ছবিটি দেখতে পাননি। কিন্তু সুষমা স্বরাজ ও তাঁদের মেয়ে বাঁশুরী পুরোটা দেখেছিলেন। আরও বলেন, মনীষাকে তিনি নিজের মেয়ের মতোই স্নেহ করেন। তাই মনীষার সঙ্গে তিনি তর্ক করতে পারেন না। মনীষার বাবা প্রকাশ কৈরালা তাঁর ভাইয়ের মতো। অভিনেত্রীর মা সুসমা কৈরালাকে তিনি নিজের বউদি ও বন্ধু হিসেবে দেখেন। স্বরাজ এও বলেন, তাঁরা সবাই একসঙ্গে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছেন।
মনীষার পরিবারের গৌরবময় ঐতিহ্যের কথা এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন স্বরাজ। বলেছেন, অভিনেত্রীর পারিবারিক সংগ্রাম সম্পর্কেও অবহিত তিনি। এইমসে যখন অভিনেত্রীর ঠাকুরদার ক্যানাসার ধরা পড়ে, তখন তিনি সেখানেই ছিলেন। “আমার মনে আছে বি পি আমাকে বলেছিল, ‘ক্যানসারের অ্যাডভান্সড স্টেজে রয়েছি। আমার কাছে মাত্র ছ’মাস সময় আছে।’ খারাপ লেগেছিল আমার। কিন্তু তাঁর মুখে হতাশার লক্ষণ দেখা যায়নি। আমি তোমার পরিবারের গৌরবময় ঐতিহ্য জানি। তোমার দাদুর নাম বি পি কৈরালা। তাঁর ভাইয়ের নামও বি পি কৈরালা। তারপরে সবচেয়ে ছোট ভাই জি পি কৈরালা। তিন ভাইই নেপালের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তোমার পিসি এবং আমার বন্ধু শৈলজা আচার্য নেপালের উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আমি জানি তোমার পরিবার কতটা সংগ্রাম করেছিল। তোমার দাদু বি পি ১৮ বছর জেলে ছিলেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে তোমার পিসি শৈলজা ৮ বছর জেলে ছিলেন।” বলেন স্বরাজ।
এরপর স্বরাজ বলেন, প্রকাশ কৈরানা নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেনI অনেক লড়াই করেছেন তিনি। গণতন্ত্রের সমর্থনে তাঁরাও নেপালের পাশে ছিলেন বলে জানান স্বরাজ। ভারত বা ভারতীয়দের জন্য তখন কিছুই ছিল না। মনীষা যখন নেপালের রাজার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালেন, তখনও কারওর কিছু বলার ছিল না। কিন্তু একজন সাংসদ হিসেবে মনীষার মতামত জানতে পেরে আজ তাঁর খারাপ লাগছে। এরপরই তিনি চিনের প্রসঙ্গে টেনে আনেন। বলেন, হয় কমিউনিস্টরা চিনকে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে বা চিন কমিউনিস্টদের ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। নেপালের সঙ্গে ভারতের কোনও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থাকতেই পারে। এটা দুই দেশের নিজস্ব ব্যাপার। এর মধ্যে চিনকে চেনে আনা যুক্তিযুক্ত নয়। এর মধ্যে চিনকে ঢুকিয়ে মনীষা হাজার বছরের পুরনো ভারত-চিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধ্বংস করে দিচ্ছেন। এমনকী নিজের দেশের সার্বভৌমত্বের উপরও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন মনীষা।
The post নেপালের মানচিত্র নিয়ে চিনের হস্তক্ষেপের দাবি, মনীষাকে একহাত নিলেন সুষমা স্বরাজের স্বামী appeared first on Sangbad Pratidin.