সন্দীপ্তা ভঞ্জ: 'হোয়াটস ইন দ্য নেম...', নামে সত্যিই কি কিছু এসে-যায়? অথচ এই নামই রাজ্যে ধুঁকতে থাকা লাইভ এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিকে চাঙ্গা করেছে। নেপথ্যের কারিগর রাজদীপ চক্রবর্তী। যিনি 'হোয়াটস ইন দ্য নেম লাইভ' সংস্থার কর্ণধার। সম্প্রতি 'শোজ অফ ইন্ডিয়া'র সাফল্যনামায় নাম তুলে ফেলেছেন রাজদীপও। চব্বিশে শীতকালের মরশুমে একাধিক জমজমাট জলসা উপহার দিয়েছেন তিনি রাজ্যবাসীকে। সেই তালিকায় ব্রায়ান অ্যাডামসের কনসার্টও রয়েছে। 'হোয়াটস ইন দ্য নেম লাইভ' আয়োজিত প্রতিটা শোয়ের টিকিট বিকিয়েছে রমরমিয়ে। আর সেই গগনচুম্বী সাফল্যের জেরেই 'শোজ অফ ইন্ডিয়া'র সাফল্যের তালিকায় রয়েছে রাজদীপ চক্রবর্তীর নাম।

বাঙালির প্রায় আতুঁড়ঘর থেকেই সঙ্গীত অনুরাগ্য। সেই প্রেক্ষিতে কলকাতাকে মিউজিক্যাল সিটি বলেও অত্যুক্তি হয় না। কারণ এইশহর জানে সংস্কৃতির প্রতি প্রেম জাহির করতে। সেকথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন রাজদীপও। বাংলা, হিন্দি, ইংরেজির পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষার গানের শ্রোতার বাস এই শহরে। আর সেই প্রেমেরই ফলশ্রুতি সফল সব কনসার্ট। চলতি শীতকালে একাধিক কনসার্টের সাক্ষী থেকেছে কলকাতা। আর তার সিংহভাগের উদ্যোক্তাই রাজদীপের 'হোয়াটস ইন দ্য নেম লাইভ'। 'শোজ অফ ইন্ডিয়া'র সাফল্যনামায় নাম তুলে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত রাজদীপ।
লাইভ এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির এহেন রমরমা বাজারে বাংলা কতটা লাভবান? সেই প্রশ্ন নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছিল তাঁর সঙ্গে। রাজদীপ জানালেন, "কোভিড পরবর্তী সময়ে লাইভ এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসার কলেবর আরও বেড়েছে। এটাকে যদি একটু বিশ্লেষণ করে দেখি, তাহলে কোভিডের সময়টায় ফিরে যেতে হয়। সেইসময়ে মরণ-বাঁচন পরিস্থিতি। মানুষ জানেন না, আজ আছেন, কাল থাকবেন কিনা। এর পর পরিস্থিতি খানিক স্বাভাবিক হতেই দেখা গেল, মানুষের কাছে অর্থ উপার্জন করার থেকেও জীবনে ভালো করে বেঁচে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
উল্লেখ্য, ঠিক এই মনস্তত্ত্বের ভিত্তিতেই কোভিড পরবর্তীকালে ট্যুরিজম কিংবা খানাপিনার ব্যবসাও বেড়েছে। সেই কথার সূত্র ধরেই ২০১৭ সাল থেকে লাইভ এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত রাজদীপ চক্রবর্তী জানালেন, "বিগত আট বছরে দেখলাম অতিমারী উত্তর পর্বে বিশেষ করে ২০২১ সাল থেকে দর্শক-শ্রোতারা আরও অনেক বেশি করে লাইভ কনসার্টেও ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছেন। ব্রায়ান অ্যাডামসের কলকাতার কনসার্টে ১৫ শতাংশ মানুষ পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থেকে এসেছিলেন। অতঃপর এতগুলো মানুষের থাকা, খাওয়া, যাতায়াত সূত্রে শহরের আর পাঁচজন হোটেল ব্যবসায়ীর পাশাপাশি অনেকেরই লাভ হচ্ছে। ফলে সেই অর্থে বাংলার জিডিপিও বাড়ছে। তাই আমি এটাকে সেই অর্থে শুধু বিনোদুনিয়ার লাভ বলে ধরি না। এর জন্যে অন্য অনেক পেশার মানুষের পেট চলছে। সর্বতভাবেই রাজ্যের অর্থনৈতিক কাঠামোরও উন্নতি হচ্ছে। ফলত প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতেও কম-বেশি ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে এর।"
অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানটা কীরকম? রাজদীপ জানালেন, "বর্তমানে গোটা দেশে ৫.২ বিলিয়ন ডলারের লাইভ এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি। পরিসংখ্যান বলছে আগামী তিন বছরের মধ্যে যা ৭.৮ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়ে ফেলবে। এটা কিন্তু আমার কথা নয়। ইভেন্ট এসএসইউ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই বলছি। ভারত এখন গোটা বিশ্বের লাইভ এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির হটস্পট।" এহেন সাফল্যের নেপথ্যের কারিগর রাজদীপ জানালেন তিনি এবং তাঁর টিম যে কোনও কনসার্ট আয়োজনের ক্ষেত্রেই অন্তত ৫-৬ মাস সময় নেন। সলমন খানের 'দাবাং' কনসার্টের আগে তাঁদের প্রস্তুতি পর্বেই ১৪ মাস লেগেছিল।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় পূর্ব ভারত সেক্ষেত্রে কতটা এগিয়ে? আমরা দক্ষিণী অঞ্চলের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের থেকে খানিক পিছিয়ে। আর এর নেপথ্যেও কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানের পাশাপাশি অর্থনীতি অনেকটা দায়ী। কারণ পশ্চিমাঞ্চলে কনসার্টের টিকিটের দাম তুলনামূলক অনেকটা বেশি আমাদের থেকে। নর্থ এবং ওয়েস্ট জোনে ইভেন্ট আয়োজনের ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধে রয়েছে। আর আমাদের সেক্ষেত্রে বিশেষ কৌশলী প্রয়োগ করতে হয়। কীরকম? তাঁর কথায়, "প্রতিবেশী যে রাজ্যগুলো রয়েছে যেমন ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ছত্তিশগড়, কিছুটা গুয়াহাটিতেও সেভাবে বড় কনসার্ট হয় না। শিলং যদিও সদ্য শুরু করেছে। আমরা মূলত প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতেও মার্কেটিং করি, যাতে সেখানকার শ্রোতা-দর্শকরাও আসেন কলকাতায় শো দেখতে। ব্রায়ানস অ্যাডামস-এর শো ভারতের সাতটি শহরে হয়েছিল। টিকিট বিক্রি এবং সাফল্যের নীরিখে কলকাতা সেখানে তৃতীয় স্থানে। উল্লেখ্য, শিলংয়ে শো থাকা সত্ত্বেও।" রাজদীপ ইতিমধ্যেই সলমন খান, অরিজিৎ সিং, এপি ধিলোঁ, হানি সিংয়ের মতো তাবড় ৩০ জন সেলিব্রিটিদের নিয়ে ইভেন্ট করেছেন। বাদশা এবং এআর রহমানের সঙ্গে এখনও কাজ করা বাকি তাঁর।